কন্যাজন্ম এবঙ আজকের কন্যারা

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 7 March 2014, 06:59 PM
Updated : 7 March 2014, 06:59 PM

কন্যাজন্ম। জগত জুড়ে প্রাচীন কাল হতেই অদ্ভুত নিয়ম এক মায়ের গর্ভজাত একটি কন্যা পুত্রের সমান হয়না কিছুতে। কন্যা জাতির ক্ষেত্রে অধিকারের জায়গাটি পুরুষতান্ত্রিক সমাজে সীমাবদ্ধতার কত যে অনুশাসনের আশ্চর্য বেড়াজালে বৈষম্যময় সেটি বলাবাহুল্য। এমনও সময় ছিলো কন্যার জন্মের খবরে মুখ বেজার পুরো পরিবারের। আজও অনেক ঘরে  কন্যাজন্মের সংবাদে আনন্দ তত হয়না যত পুত্রজন্মের সংবাদে ছড়ায়। তবু অবস্থা আজ পাল্টেছে ঢের। কেননা আজকের কন্যারা অবদান রাখছে সমাজে তাদের মেধা-শ্রম দিয়েই। যদিও চারপাশটা কন্যাদের সমানাধিকার রক্ষা করেনা। প্রতিকুল হাজারতর বিধি তাদের নিরাপত্তা বিধান দিতে অক্ষম। তার ভিতর দিয়েই কন্যারা নারী জাতির তথা মায়ের জাতির ধারক। সেই আদিকালেও নারী পুরুষদের চেয়ে ঘরের দায়িত্ব পালনে কিছুমাত্র কম না এই স্বীকৃত ইতিহাসচিত্র। আয়-রোজগারের  দায়িত্ব পিতার বটে, সংসারের উদয়াস্ত সেবার ক্ষেত্রে মায়ের মতো সর্বংসহা জগতে কেউ না। মাকে মাতৃভূমির সঙ্গে তুলনা এই জন্যই। এই যে মা তারও জন্ম মাতৃগর্ভেই। একজন পিতার জন্ম তারই মাতৃগর্ভে। মাতাপিতার ঔরসজাত উত্তরসুরী পুত্র-কন্যা। এইভাবেই চক্রাকারে বংশবৃদ্ধি, শ্রীবৃদ্ধি সংসারে। অর্থাৎ কবির বাণী-ই শিরোধার্য –

"জগতে যা কিছু কল্যাণকর

অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক নর"

কবির কথা যতই সত্য হউক কার্যক্ষেত্র কঠিন তত। তারপরেও কঠিনের পথেই অগ্রসরমান আমরা বধূ-জায়া-ভগ্নী-কন্যা-মায়ের জাতি। কন্যারা আয়-রোজগারে নেমেছে বহুকাল আগেই। পথে পাথর-কাঁটা-খানাখন্দ-থাবা অনিরাপদ মুখ ব্যাদান করা। তথাপি পিছু হটেনি। জগত জুড়েই নারী জাতির জয়জয়কার বাধার বিন্ধ্যাচল পেরিয়ে একটু-একটু করে এগিয়ে চলেছে। পুরুষদের সঙ্গে সমান পাল্লা দিয়েই। হিমালয় চূড়াজয়ের ইতিহাস গড়েছে কন্যা জাতিকা। সেই ১৮৫৭ সালে আমেরিকার এক সূচ কারখানার নারী শ্রমিক দল তাদের ন্যায্য অধিকারের দাবীতে রাস্তায় নেমেছিলো। তাদের উপর নির্যাতনের খড়্গ সত্বেও তারা দমেনি। অধিকার আদায়ে লড়েছে মরণপণ। ১৮৫৭ পেরিয়ে ২০১৪-তে দাঁড়িয়ে বিশ্বের তাবত নারী সমাজ ধারাবাহিকতায় অর্জন করেছে বিস্তর। যার পরিসংখ্যান সত্যি-ই বিস্ময়কর।

আজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সহ স্পীকার, বিরোধী নেতাও নারী। নারীর জন্য সহজসাধ্য নয় দুনিয়া জয় তারপরেও অই কঠিন কাজে নারীরা প্রায় সর্বত্র সাফল্যের সূচক গড়ে চলেছে। বিপরীত চিত্রও বহু রয়েছে। তার মোকাবিলায় অনেক সময় অসহায় নারীরা। তাই বলে কি ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব? অসম্ভবের পাহাড়টা ভাঙছে আজকের নারীরা। তাই ২০১৪-র ৮-ই মার্চের আন্তর্জাতিক নারীদিবস-এর প্রতিপাদ্যটি নারীদের তথ্যের অধিকার এবঙ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়বার অঙ্গীকার। অধিকারের লড়াইয়ে আমরা হারবোনা। কন্যজন্মের জয়োগান গাইবো সকল বিধিনিষেধ তুচ্ছ করেই। জয়তুঃ কন্যজন্ম। জয়তুঃ মায়ের জাতি।

৮-ই মার্চ ২০১৪ ইং