আকাশতলে চৈত্রের ঝাঁজালো দাবদাহ আর মিথ্যের পাখনা গজানো

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 29 March 2014, 07:31 AM
Updated : 29 March 2014, 07:31 AM

ক'দিন হতেই যথেষ্ট টের পাওয়া যাচ্ছে চৈত্রের ঝাঁজ। আকাশতলে বাংলাদেশের জনগণ স্বস্তিতে নেই। একেতো সূর্যের উত্তাপ, উপরন্তু রাজনীতিবিদগণের মিথ্যে বয়ান উড়ছে বাতাসে। রীতিমত পাখনা গজিয়েছে। এমন যেন আমরা কেউ জীবনে পড়িনি ইতিহাসের পাঠ। জনগণের হাসফাঁস দশাটি রাজনীতিবিগণ যেন বা উপভোগ করেন বেশ শীততাপের হাওয়া খেয়েই। ভাবছি, চৈত্রের এই নির্জলা ভাবনাজাত প্রহরে –  কাঁহাতক অসহ্য অদ্ভুতুড়ে রাজনৈতিক খেল দেখবে জনগণ??? জনগণ কি তেনাদের রাজনীতির পোষ্য জানোয়ারের দল যে – তেনারা যখন যাহা বলামাত্রই মহানন্দে খাবে ও হজম করবে??? আদতেই তেনারা জানেন না, জনগণের অবস্থান আজ পোষ্যের না মোটেও। আজকের জনগণ যে তেনাদের চাইতে ঢের বেশিই সচেতন। সমস্যা হাজারও থাকুক, তার মধ্যেও জনগণ জানতে উতসুক বলেই সত্যমিথ্যের ফারাক বোঝে সহজে। বাংলাদেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম আজ অনেক বেশি রাজনীবিদগণের চেয়ে। জনগণকে মিথ্যের পাখনা গজিয়েও ভোলানো সম্ভব না। অর্থাৎ পাবলিকের পালস ধরা কোনও ভন্ড রাজনীতিবিদের পক্ষে একদমই অসম্ভব।

আরও অধিক সত্যটা এই – মেধাবী তরুণ প্রজন্ম এতটাই দক্ষ যে, মুহূর্তেই ঐতিহাসিক তথ্য-উপাত্ত নির্ভুলভাবে হাজির করছে মিডিয়ায় এবঙ সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলো ও ব্লগে। অন্যদিকে মূর্খের রাজনীতির চরিত্রে যারা নিত্যনতুন উদ্ভট ইতিহাস গড়ার হাস্যকর বয়ান-বিবৃতি দানের অপচেষ্টা নিয়েই মত্ত, তাদের কোনও বিকার নেই। অথচ আইনতঃ রাষ্ট্রের ঐতিহাসিক সত্যকে বিকৃতির চেষ্টাও দন্ডনীয় অপরাধের সম পর্যায়ে পড়ে। তাহলে বলতেই হয় যে, মূর্খ মিথ্যুক রাজনীতিবিদিগণের একটা হেস্তনেস্ত হওয়া জরুরী বিষয়। প্রয়োজনে তাদের বিচারও হউক ঐতিহাসিক সত্যকে বিকৃত করার দায়ে। কেননা যে কোনও দেশের ঐতিহাসিক সত্যকে বিকৃতির অধিকারটা কারুরই থাকে না। সেই অপচেষ্টাও যেহেতু রাষ্ট্রদ্রোহীতারই সামিল, তবে তাদের বিচার চাওয়া উচিত হবেনা কেন? সুদীর্ঘ সময়কাল ধরেই এইদেশে এমনতর অপচেষ্টার সঙ্গে জড়িত যারা, তাদের দল ক্ষমতারোহনের সুযোগ পেলেই পাঠ্যপুস্তকের ইতিহাস বদলে দেবার কাজটি করে প্রথমে। যেটি কোনও বিবেকবান জাতির কিছুতেই কাম্য না। সুতরাং বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সত্য বিকৃত করার অপরাধেই আজ তাদের বিচারিক কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হউক – এমন দাবী জানাই।

আমাদের বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস অনেক আত্মত্যাগের সুদীর্ঘ সংগ্রামী ইতিহাসের অন্যতম উদাহরণ বিশ্বে। সেথায় কারও অন্যায় স্বেচ্ছাচার আমরা দেখিতে চাহি না আর। এবঙ শুনিতেও চাহি না আর। কবিগুরুর গান "আমার সোনার বাংলা" আমাদের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে মনোনীত করে যে মহান বাঙালি নেতা বঙ্গবন্ধু আমাদের হৃদয়জয়ী হয়েছেন – তাঁরই অবিসম্বাদিত নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা নামের স্বপ্নের সোনার হরিণের নাগাল পেতে এইদেশের পরাধীন মানুষ জাতিধর্মবর্ণ নির্বিশেষে অভিন্ন "জয়বাংলা" শ্লোগান বুকে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছে। ঊনিশশো একাত্তুরের ঐতিহাসিক স্বাধীনতার ঘোষণাটি বঙ্গবন্ধুর কন্ঠেই সাত-ই মার্চের উত্তাল গণজোয়ারে উচ্চারিত সাড়েসাতকোটির প্রাণের চাওয়া পূরণের একটি অজর কবিতাসম দিকনির্দেশনা। পঁচিশ মার্চের কালরাত্রিতে তাঁর পাকিজান্তার কাছে স্বেচ্ছাবন্দীত্বে যাবার আগেও তিনি সুস্পষ্ট স্বাধীনতার ঘোষণাবাণী টেলিগ্রাফে পাঠিয়ে দিতে পেরেছিলেন বলেই ছাব্বিশে মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রের ট্রান্সফরমারে প্রচারিত হয়েছে। বিশ্ব শুনেছে সেই পঠিত ঘোষণা বারংবার। তার পরের দিন সাতাশে মার্চ হঠাত পঠিত হয়েছে আবারও। বঙ্গবন্ধুর পক্ষেই। সেই ঘোষণা পাঠ করেন ২৭শে মার্চের প্রায় মধ্যাহ্নে জনৈক মেজর জিয়া। তখন তিনি জনৈক মেজর জিয়া-ই। তার আগের দিনও আমরা কেউ জীবনে শুনিনি মেজর জিয়া নামটি। তিনি মোটেও এই দেশের সুদীর্ঘ স্বাধীনতার সংগ্রামে জড়িত ছিলেন না। সৈনিক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ২৭শে মার্চেই জিয়ার সম্পৃক্ততা। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। এই সত্যের অকাট্য প্রমাণ আছে। দলিল আছে। রেকর্ড আছে। মেজর জিয়ার চেয়েও আরও অনেক বীরত্বপূর্ণ সৈনিকের প্রত্যক্ষ অবদানেই মুক্তিযুদ্ধ সফলভাবে পরিচালিত হয়েছে।

আজকের বিএনপি-র জন্ম হয়েছে ঊনিশশো পঁচাত্তুরের বঙ্গবন্ধু হত্যাযজ্ঞ পরবর্তীতে জিয়ার ক্ষমতারোহনের পরে। জিয়াই বাংলাদেশে প্রথম সামরিক জান্তার গর্ভজাত দলের জন্মদাতা। জিয়াই বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের পুনর্বাসিত করেছেন। জিয়াই নিষিদ্ধ জামায়াতকে এইদেশে রাজনীতিতে বৈধতাদান করেছিলেন। তাঁর মুখের বুলি – " i will be make politics difficult for future" একটি কঠিনতম নিষ্ঠুর অবস্থানে নিয়েছে বাংলাদেশকে। যার খেসারতটি আজও জাতির 'পরে অভিশাপের মতো যুদ্ধাপরাধীদের বোঝা হয়েই ঝুলন্ত। এখন কি না আবার জিয়াসৃষ্ট দলের প্রধান এবঙ জিয়া পুত্রের  এদেশের স্বাধীনতার চুয়াল্লিশ বর্ষের ঐতিহাসিক সত্যকে নিয়ে বিকৃত করবার অপচেষ্টার অন্যায় খায়েশ! কেন??? এই প্রশ্নটি জনোমনে প্রবল আজ। বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাস রাষ্ট্রীয় দালিলিক ভাবেই লিপিবদ্ধ রয়েছে। উন্মুক্ত উইকি হতে যে কেউ সত্য জানতে পায়। বিশ্বও জানে। সেথায় কারও অন্যায় হস্তক্ষেপ কাম্য না। জাতিগত, ঐতিহ্যগত, ঐতিহাসিক সত্যর অবমাননা আমরা সইবো না। অপশক্তির শক্তি যাদের শক্তি তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে আমাদেরই। রুখে দাঁড়াতে হবে আমাদেরই। আমরা লিখবো। আমরা বলবো। রুখে দাঁড়াতে আহ্বান জানিয়ে যাবো যদ্দিন বাঁচি।

     চৈত্র ১৪২০ বঙ্গাব্দ।।

     মার্চ ২০১৪ ইং।।