একজন সিটিজেনের পরিবেশ ভাবনা

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 5 June 2014, 05:05 PM
Updated : 5 June 2014, 05:05 PM

আজকের বৈশ্বিক পরিবেশ বিপর্যয়ের হুমকি বিশ্বের সব দেশই কমবেশি মোকাবেলার এক মহাবিপদ সংকেতের মতোন সতর্কবাণী শুনতে পাচ্ছে। এবঙ পাচ্ছে বলেই বেশ কিছু বছর ধরে বিশ্বের সকল দেশসমূহ "বিশ্ব পরিবেশ দিবস" পালন করছে। ফলে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে  অনেক  কর্মসূচী পালিত হয়। তো, বাংলাদেশেও সরকারি-বেসরকারি বহু কর্মসূচীর উদ্যোগ গৃহিত হয় যখন "বিশ্ব পরিবেশ দিবস" আসে। অনেক সভা-সেমিনার-সিম্পোজিয়মে অনেক বড়বড় ব্যাক্তিত্ব, পরিবেশ বিশারদ বা পরিবেশ বিজ্ঞানী, পরিবেশবাদী সুশীলদের জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য মিডিয়ার বরাতে আমরা শুনতে পাই। তাতে কি আদৌ  লোকজনের পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি ঘটছে কি না, অথবা কতটা প্রসার পেয়ে ছড়িয়ে পড়ে অর্বাচীনের তেমন ধারণা নেই। কেবল অবাঙ বিস্ময়ে দেখি – আমার চারপাশের জঞ্জালভারে নুব্জ্যতায় ধুঁকছে উতকট গন্ধের বস্তিগুলো / নালা-নর্দমা-খালবিল-নদীগুলো। যেন বা নীলিমাও। অব্যক্ত যাতনাবিদ্ধ বৃক্ষরা্জির আর্জিনামা হয়েই যেন বা বাতাসে কান্নাভর্তি কর্তিত হাজার-হাজার পল্লবিত ডালপালার / নদীদের দ্রোহের ফরিয়াদ ঝরছে ঠিকই। কেবল জগতবাসি মানুষগুলোর চৈতন্যদয় নেই ততোটা, যতটা প্রকৃতি চায়। জগতবাসি মানুষগুলো স্বার্থান্ধ এতোটাই এবঙ দলবাজির কারণে প্রকৃতির প্রাণকে কেটেকুটে ক্ষতবিক্ষত উজাড় করতে পারে নজির তার সর্বত্র। অথচ মানুষগুলো নির্বিকার / নির্বিচারেই নদী দখল, চর দখল, বন দখল করবার কারণে বিপর্যয়ের শিকার আজ প্রকৃতি। প্রকৃতি তাইতো প্রতিশোধ হিসেবে এক একটা আইলা হয়ে সুনামি হয়ে আসছে ধেয়ে। তখন কোনও পরিবেশবাদীর / পরিবেশ বিশারদের / বিজ্ঞানের বাপের সাধ্য কি তারে ঠেকায় !!! এক একটা জনপদ তখন মুহূর্তে সমুদ্রস্ফীত ভয়ঙ্করের গর্ভে ডুবন্ত। জলবায়ুকে বিষিয়ে তুলবার কারণে এভাবেই প্রকৃতি প্রতিশোধে প্রচন্ড রূপী প্রলয়কান্ড ঘটিয়ে ছাড়ছে।

আজ তাইতো ভাবছি আমিও। অর্বাচীন হলেও ভাবছি। মানুষকেই ভাবতে হবেই আজ  সৃষ্টির সেরা মানুষ কেন নিকৃষ্টতম? নিষ্ঠুরতম নজির  আজকের মানুষ কেন? যুগেযুগেই চিন্তাশীল গুণীর বাণী / কবির বাণী মানুষ পাঠ যদিও করে হৃদয়ে ধারণ / লালন করে কয়জনায়? প্রকৃতিপ্রেম / মানবপ্রেম কেবলই গানের বাণী? নেতানেত্রীর সারগর্ভ মুখের বুলি? অই যে আমরা পাঠ্যপুস্তকে স্যার জগদীশ চন্দ্রের রচনায় জেনেছি গাছেরও আছেতো প্রাণ, যে গাছ ফুলেফলে বাঁচিয়ে রাখে প্রকৃতি এবঙ মনুষ্য জীবনকে, তারেই কুঠারে উপড়ে ফেলা মানুষগুলোর পাপের শাস্তি কি মানুষই বইছে? মানুষের পাপের শাস্তি হওয়া জরুরী নয় কি? বিশ্ব নইলে পাপের ভারেই ডুবে যাবার দিনটি দেখবে অচিরেই। হয়তো অচিরেই একটা পত্রপুষ্পবৃক্ষহীন বাংলাদেশের হৃদয় হতে রক্তক্ষরণে বঙ্গোপসাগর হয়ে উঠবে লাল জ্বলন্ত লাভাস্রোতে উত্তাল সর্বগ্রাসী। দৃশ্যটা ভাবতেও হৃদয় ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে উঠছে।

আজ ঢাকার বুড়িগঙ্গা এবঙ অন্যান্য আরও নদনদী যমুনা-পদ্মা-গোমতি-তিস্তা সব-ই বর্জ্যভারে ধুধু ধুঁকছে বড়ো শুকনো নদীটির মতোন। নদীগুলোর অববাহিকা জুড়ে অবৈধ দখলদারিত্বের অন্যায় কর্মকান্ড। হৃদয় নদীদের, নদীপারের বসবাসকারী মানুষদের অবর্ণনীয় ভোগান্তি আর নেশাভাঙের আখড়া হবার কারণেই প্রত্যহ খুনোখুনি মারামারির নিত্য খবর। সরকারের টনক নড়বার খবর নাই। এসব দুঃসহ বস্তিবাসের দিকে যদি না সরকার জরুরী সঠিক কর্মসূচিটি নিতে না পারে তবে অন্ধকারের আওয়াজে সরকারেরও তিষ্ঠানো দায় হবেই, অর্বাচীনের ধারণা।

আজ হতেই তিনমাসের বৃক্ষমেলার শুরু। আমরা যেন প্রকৃত বৃক্ষপ্রেমী, প্রকৃত নদীপ্রেমী হবার স্বপ্নটা সবার মাঝে জাগিয়ে, চারিয়ে, ছড়িয়ে দিতে শপথ নিই আজ-ই এ আমার সনির্বন্ধ আহ্বান একজন সিটিজেনের ভাবনাজাত লেখায়।

৫-ই জুন ২০১৪ ইং।।