অনেকেই জানি চমকে উঠতে পারেন সেই পচাঁত্তুরের পনের আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার নেপথ্যে খলনায়ক হিসেবে দুইজন বিখ্যাত মানুষের জড়িত থাকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র সমেত নাম জানলাম। আমিও প্রথম জেনে যথেষ্ট বিস্ময়াভিভুত। সেই দু'জন হলেন আপেল মাহমুদ ও প্রয়াত খান আতা!
আপেল মাহমুদ তখন বাংলাদেশ বেতারে নিয়োজিত প্রধান ক্যাটাগরির কর্মকর্তার পোস্টে। পনের আগস্ট রাত্রিতে তার অফিস কক্ষ যখন সর্বশেষ প্রচার কার্যক্রম শেষের পর নিয়ম অনুযায়ী বন্ধের কথা, বন্ধ না হয়ে ভেজানো ছিলো দরোজা। ভোর রাতের পর বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মম হত্যার অন্যতম ঘাতক মেজর ডালিম চারটার সময় পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক সশস্ত্র সৈন্যসামন্ত সমেত বেতার ফটকে ঢুকে পড়ে দরোজা ভেজানো ডিউটি কক্ষটিতে প্রবেশ করে। কিছুক্ষণের মধ্যে আপেল মাহমুদ হাসতে হাসতে সেখানে এসে মেজর ডালিমকে অভিনন্দিত করে। অত:পর ফোনে নির্দেশ দিয়ে টেকনিশিয়ান ও প্রকৌশলীদেরকে ভয়ভীতি হত্যার ভয় দেখিয়ে বেতার চালুর পর ঘাতক মেজর ডালিম বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘোষণা প্রচার করে। আপেল মাহমুদ তখন নিজ হাতে ঘোষণা লিখে রেকর্ড করে এবং বারংবার প্রচার করে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সংবাদ। সকালে বেতার ভবনে ছুটে আসেন খান আতাও নিজের লিখিত গানের সুর করেন।
"ওরা সূর্যসন্তান – সূর্যসেনা ওরা কোনও বাধা মানবেনা"
তড়িঘড়ি করেই গান রেকর্ড করে বাজানো হয় পনের আগস্ট সকাল দশটার পরেই। বারংবার বাজতে থাকে সে গান বাংলাদেশ বেতার হতে। ফাঁকেফাঁকেই সেই চরম নির্মম ঘোষণা – বঙ্গবন্ধু নিহত হয়েছেন সপরিবারে। আপেল মাহমুদের অই রুমটি তখন মেজর ডালিমের অফিস রুম। সেথায় আসে মীরজাফর খন্দকার মোশতাক ও তাহের ঠাকুর, চাষী নজরুলের মতো সাঙ্গপাঙ্গরা। বঙ্গভবনে খলনায়ক মেজর জিয়া, রশিদগঙ খন্দকার মোশতাক কে অভিনন্দন জানায় সকালেই। জাতির উদ্দ্যেশ্যে দখলদার সামন্ত পরিবেষ্টিত মোশতাক নতুন রাষ্ট্রপতির ভাষণ দেয় কম্পিত কন্ঠে। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ বলে ভাষণ শেষ করেই দ্রুত ঘাতকদের প্রহরায় বঙ্গভবনে আশ্রয় নেয়।
সেদিন হতে বেতার ভবন আপেল মাহমুদ মেজর ডালিমকে নিয়েই অলিখিত দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি হিসেবে খানাপিনা ও পানশালার মত্ততায় চালিয়ে গেছে যদ্দিন খুনীচক্র দখলদার ছিলো বাংলাদেশে।
এই লেখার তথ্যসূত্র বাংলাদেশ বেতারের সাবেক স্ক্রিপ্ট রাইটার ও সহ-সম্পাদক খালেক বিন জয়েনউদদীন লিখিত – "পনেরোই আগস্ট বাংলাদেশ বেতারে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের অপারেশন" নামক ফিচার পোস্ট, দৈনিক জনকন্ঠ, ১১ আগস্ট ২০১৪ইং [লিংক] ।
লেখাটির শেষাংশও সবিশেষ উল্লেখযোগ্য –
"আমরা বিস্মিত হয়েছি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামীদের নামের তালিকা দেখে। বেতার অপারেশনে যারা বা যিনি অনেক পূর্ব থেকেই ডালিমের সহযোগীর ভূমিকায় জড়িত, গান রচনা করে দেশের শোকাহত মানুষদের ব্যাথা দিয়েছে, তাদের আসামী করা হয়নি মামলায়! বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রকাশিত বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি পুস্তিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খান আতার নাম উল্লেখ করেছেন। তাহলে আপেল মাহমুদ ও খান আতার দায়মুক্তি কেন?… বাংলাদেশ বেতার একটি রাষ্ট্রীয় প্রচার যন্ত্র। এই যন্ত্রটি দখল করে খুনীরা কত মিথ্যে ভাষণ ও কথা প্রচার করে মানুষদের বিভ্রান্ত করেছে। কিন্তু খুনীচক্রের শেষরক্ষা হয়নি। কারও ইতোমধ্যেই ফাঁসি হয়েছে। পনেরো আগস্ট ফিরে এলেই সেই বিভীষিকার সময় বেদনা রাত্রি মনে পড়ে।… "
খালেক বিন জয়েনউদদীন যথার্থ সময়ের লেখাটি লিখে ইতিহাসের অজানিত আরেক সত্য জানিয়ে যে প্রশ্নটি রেখেছেন সে প্রশ্ন আজকের একটি অত্যন্ত জরুরী প্রশ্ন আমাদেরও।
***
পোস্ট আপডেট: ২২ আগস্ট ২০১৪
আপেল মাহমুদ এর প্রতিবাদ [লিংক]
খালেক বিন জয়েনউদদীন এর পরবর্তী কলাম: