প্রিয় শহর চট্টলার হোটেল প্যাভিলয়নের জানলাদৃশ্য

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 26 Nov 2014, 11:19 AM
Updated : 26 Nov 2014, 11:19 AM

ছবিটি প্রিয় বন্দর নগরী চট্টলা শহরের একটি হোটেলের জানলাদৃশ্য। ক্লিক করেছি অামি নিজেই মোবাইলে। অামার প্রিয় লেনোভো মোবাইল। তখন ভর দুপুর। দেখছিলাম হোটেল হতে জানলাদৃশ্য। প্রিয় শহর চট্টলায় একসময় বসবাস করেছি টানা বাইশ বছর বিবাহসূত্রে। অামার শ্বশুরবাড়ি চট্টলার পটিয়া হওয়ায় অামার অারেক শিকড় চট্টলায়। এখন ঢাকাবাসি বলেই চট্টলাকে বিষম মিস করি। কোনও পারিবারিক অায়োজনের সুযোগে যাওয়া হয়। তখন অামরা সচরাচর এই প্যভেলিয়ন হোটেলটিতে উঠতে চাই। অতঃপর খানিক জিরিয়ে ফ্রেশ হয়েই ছুট লাগাই শ্বশুর বাড়িতে।

তো, সেবার দারুণ প্রাকৃতিক পাহাড়ি জনপদে লোকজনের, যানবাহনের সাড়া দেখছিলাম হোটেলের জানলা দিয়ে। তেমন করার ছিলোনা। দেখেদখে রঅদেখাজনিত কাব্য যে কিঞ্চিত জাগেনির মনে, তা ঠিক নয়। ঠিকই ঠুংঠাং ছুরিকাঁটার হোটেলের রোজের শব্দ অামাকে চার চারটি বছরের স্বভাবদোষে প্ররোচিত করেছে। হ্যাঁ, এখানে অর্থাৎ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর এর ব্লগীয় নাগরিক জার্নালিজম এর সাধের সনে কাব্যজালও বেঁধেছিলো ধোঁয়াশাময় বাসা হৃদয়কোণে। নোটবুকে হয়নি টোকাটুকি তখন। তো, কি করা, মুহূর্তে চড়ুই পাখিটি হয়ে হৃদয়কোণ ছেড়ে ফুরুৎ করে তাৎক্ষণিক কাব্য ভেসেই গেছে জানলা দিয়ে যোজন মনপবনের বাতাসে। কেবল ছবিটি মোবাইল গ্যালারি জুড়ে রয়েছে পড়ে।

তাইতো অাজ হঠাৎ জাগা খেয়ালে এইখানে জার্নালিজমের সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ভালোলাগায় ভাসলাম নির্জন দুপুর বেলায়। অাজকাল নিজের ভালোলাগা শেয়ার কিন্তু অন্তর্জালের জগতে সবচে' সহজ একটি কাজ। লেখালিখিতে পারদর্শীতার তেমন প্রয়োজনও পড়েনা। কেউ একটুখানি ক্লিক জানলে ছবি শেয়ার বিষয় না। রয়েছে সামাজিক যোগাযোগের সাইট – যেখানে রোজই ছবি পোস্টের অবাধ সুযোগ। ফেসবুক হাজারতর মানুষের ছবির ভার কি করে সইছে ভেবে তো কুলকিনারা পাওয়া অসম্ভব। যাহোক, অামিও অাজ অামার মোবাইলে ধারণকৃত প্রিয় স্মৃতির শহরের ছবিটি পোস্ট করতে গিয়ে যতকিঞ্চিত স্মৃতিচারণাও লিখতে পারলাম। কারও ভালো লাগলে সে অামার বড় পাওয়া হবে। অথবা , যদি ছবির সঙ্গে লেখাও পড়েন তো, সার্থক অামার এ মোবাইল ক্লিক করতে জানা। সার্থক এই লিখতে জানা।
যদিও অাজকাল শিশুও জানে মোবাইলের এক ক্লিকেই গেম খেলার হাজার মজার জারিজুরি। কাজের মেয়ে, বা, বুয়ারা মোবাইল চালাতে জানে শুধু না, মোবাইল চালাতে না দিলে চাকরী ছাড়ে। রাস্তার রিক্সাঅলা, ঠ্যালাঅলার কানে, লোকজনের কানে-কানে বাংলা মোবাইল। ম্যাসেজ মানে এসএমএসের যাদুকরী উড়াল। মোবাইল প্রেমেই মজেছে সকল শ্রেণীর মানুষ। সুতরাং অামার মোবাইল জার্নালিজম এমন কি উল্লেখযোগ্য কাজ ! নেহাত – নাই কাজ তো খই ভাজার কাজ অার কি। অাজকের ভরদুপুরে এইটুকুই ভাবনাজাত লেখা ও একখানা ছবির সনে শীতকালের দারুণ পিঠাপুলির কথাও দিলাম জুড়ে।

এমন অগ্রহায়নের পিঠাপুলির নবান্ন উতসবে যদি বা যাই – কোনও ক্লিক করার চান্সও পাই তো, ইচ্ছে রইলো লেখার – অাগামী পোস্টে। অাদতে মনে সাধ যে গরম-গরম ভাপা, চিতুই খাই বেজায় ঝাল চাটনী দিয়ে। শীতের ভোর হতেই রাজধানী ঢাকার মোড়েমোড়ে পিঠাঅলিরা বসে উনুন জ্বেলে। গরম পিঠে বানানো দেখতেও দারুণ লাগে। দেখার মতো দুচোখ থাকলে কি লাগে অার ! ভালোলাগার জন্য দুইচোখই ঢের। অামার গ্লুকোমারে তেমন পাত্তা দেই না অাজকাল। কেননা, তারও অনেক বড় রোগের পাল্লায় পড়েছি। তাই মনকে বলি – গোল্লায় যাক অসুখ। ভয় পাই না মরণকে। যদিও ভানুসিংহের পদাবলীর মতোন ভাবিনা –

"মরণরে তুঁহুঁ মম শ্যাম সমান" –

মরণরে শ্যামের সমান প্রেমিক ভাববার তেমন প্রেম জাগেনা মনে বয়স ধরেছে বলেই। বড়োজোর কবিগুরুর গান গুনগুনাই মনেমনে –

"তোমরা যা বলো তা বলো –
অামার লাগেনা মনে "

অসুখে বিসুখে কাতর হওয়ার কোনও মানে হয়না। চিকিতসা না পেলে হয়তো এমন ভাবনা সহজ হোতনা। স্বামীর বদৌলতেই চিকিৎসা যখন পাচ্ছি , তখন হা-হুতাশ না করে মোবাইলে ভাবনাগুলি লেখা অনেক ভালো – ভালো না? এমনই ভাবছি মোবাইলে লিখতে বসে। এই যে ক্যামন নিজের তোলা ছবিটি পোস্ট করার দারুণ মুহূর্ত উপভোগ করছি – সেইতো অামার অনেক পাওয়া এক জীবনেরই অনেক বয়স পেয়ে। অামার অার চাই না কিছু কারও কাছে।

অগ্রহায়ণ। ১৪২১ বঙ্গাব্দ।