বিজন জলছায়ায় বসেছি একা

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 26 Dec 2014, 02:08 PM
Updated : 26 Dec 2014, 02:08 PM

সে এক বিজন সকাল। অামি দেখেছি একেলা তার দারুণ ঘোলাটে মুখ। ছিলোনা কোথাও অন্তর অাড়াল। দেখেদেখে অদেখায় দুচোখ অামার অাঠা। বসেছি জলছায়ায় একদম একা। এক জীবনের যা কিছু যোজন যা কিছু অধরা অাজ তারই নিমিত্তে বুঝি ভুলেছি সকল হাঁটা। যা কিছু জীবনভর বাকি রয়েছে অদেখা হয়তো বা তাহারই নিমিত্তে অামার এক জীবনের এতটা দূর বয়েসী হাঁটা! অামি কি এবার তবে সকল ফেলেই ফিরে যাবো যোজন দূরত্বে একা? ও জলছায়া, তুমিই বলো, অামি কি সকল ফেলে যোজন  দূরত্বে যাবো একা? তখন নিজের ছায়ার সনে অাবার হবে কি জলজ দেখা? কে দেবে জবাব? অামি ভেসে যাই চোখের অধিক জলেভাসা পাতা …  অামি ভেসে যাই চোখের অধিক জলেভাসা পাতা …

অতঃপর অামার বাড়ি ফেরা। এবঙ স্বভাবদোষে কাব্যজালে নিজেকেই বাঁধা … কেউ তা পড়ুক না পড়ুক – তবুও অকাজে অামার ভেসে যায় একলা ধূসর বেলা … তখনইতো শব্দের অন্তহীন অাচাভুয়া খেলা … অামি যা পারিনি এক জীবনে কোনওদিন – সে অজবিথীতলে অালোক শব্দ লেখে ও লেখায় এইখানে অবলীলায় … অাশ্চর্য শব্দবন্ধে বাগান ভালোবেসে বসে থাকতে-থাকতে দু'পায়ে শিকড় গজিয়েছে প্রায় … বিশ্বাস না হলে পাতার, বাগানের কি অাসে যায় !!! অামার কেবল লিখে যাওয়ার বেলা … অামার কেবল বসে থাকার ধূসর খেলা … শব্দ কি অামায় লেখে? না অামি শব্দকে – খুঁজিতে-খুঁজিতে দিন কাটে তো কাটে না রাত – তখন নতুন অারেকটি রাঙা ভোর পুরানো অামায় দেখে ! দেখেই অামিও লিখি নতুন ভোরের বাতাসের সনে পাল্লা দিয়ে – যখন যা মনে অাসে … প্রকাশ করি … হয়তো হঠাত কারও অঢেল অবকাশের ক্ষণে নজর পড়তেও পারে , বা, কেউ ভুলেও দেবেনা নজর, তাতে কি যায় আসে ! আমার যা-যা ভালোলাগার -সেতো অপর নজরে পড়ার জন্য লিখি না, আদতে অলস প্রহরের অকাজ আমার, এইতো এই, খানিক লেখালিখি নিয়েই কোনওমতে কখন সন্ধে নামবে, আর ফিরবে প্রিয়জন / সন্তান ঘরে – বসবো চা-জলখাবার সাজিয়ে – তখন আমার একা থাকার সকল অকাজ সাঙ্গ একদমই। তখন সুশান্ত আরেকটি অপেক্ষা – অারেকটি নতুন রাঙা ভোরের। সকালের ব্যাস্ততা – অতঃপর আবার একা – এইতো বৃত্তবন্দী জীবন ! তারই কারণে কত দিবস-রজনীভর হেঁটেছি – অাজ সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে নিজের সঙ্গে একলা চলোরে-র মতোন খুঁজছি জীবনের নতুন উপলব্ধিজাত শব্দের ধূসরিত শহর – সেইখানে কত না ছায়ান্ধ ছবি ও কথাজালে নিজের সঙ্গে আজন্ম কথা – যেন সে জন্মজন্মান্তরের কুঁকড়ে থাকা মাতৃগর্ভের মনোটোনাস নিজের ছায়াজাল – তারই তরে জীবন ভালোবেসে যোজন হাঁটাহাঁটি – প্রিয়জনের – প্রিয় মাতৃভূমির শিকড়জাত মঙ্গলাকাঙ্ক্ষা নিয়ে একটা জীবন কাটিয়ে অন্য অচিনপুরে চলে যাওয়া – সেইখানে আছে কি ছায়া? আছে কি এমন জগতপ্রিয় মায়া? কে জানে? মানুষ জানে না। তবু মানুষ ছায়াপ্রিয় বলেই বেঁচে থাকার জন্য কত কি ছায়াময় জগতবাড়ি বানিয়ে ভালোবাসায় মজে। অথচ আদতে মানুষ একা – একাই যায় অচিনপুর দোসরবিহীন। এইসব ভাবনাজাত আমার বিজন প্রহরের এ লেখা – কিঞ্চিত কবিতা বলে চালানো যায় কি যায় না তাও জানি না। তবু প্রকাশ করার তাড়না – তাতক্ষণিক অর্বাচীনের মনে যা অাসে তারই প্রকাশ এই লেখা ও ছবিপোস্ট।

একলা হেঁটে যাওয়া হঠাৎ পথে
এমন সঘন ঘোলা বিজন জলছায়ার রথে
অামি যে বসেছি একা –
তখনই ভুলেছি অামার সকল অদেখা!
তখনই ঘনঘোর অামার সকল দেখা –
সঘন ভাসায় দিন , সে হয় রাতের একা!
এভাবে জীবন দেখা –
হয়নি জীবনে অার, সে কোন অদেখা –
যারে দেখেদেখে এতকাল তথাপি সে নয় দেখা!
অামি কি অচিন বনে
এবার একেলা সেই শিখাময় শিকড়ের সনে
বলবো সকল কথা?
বলবো অলব্ধতার কথা?
যা কিছু জীবনভর অাগলে ভেবেছি
অামারই সব, অামার সে অাজ যে দেখেছি
অদেখার, অচেনার, যান্ত্রের অাড়ালে কথাতুর –
চোখের অধিক জলে ভেসে যাওয়া দুপুর
অামারই ছিলো বটে, অাজ সে যোজন দূর…
অামি কি ভেসেই যাবো ছায়াতুর বহুদূর?

*অামার মোবাইলে ধারণকৃত ছবিকাব্যজাল*
পৌষ। ১৪২১ বঙ্গাব্দ।।