ইঞ্জেকশন দিতে রাস্তায় বেরিয়ে অামার দেখা হরতালের চিত্র

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 26 Jan 2015, 08:42 PM
Updated : 26 Jan 2015, 08:42 PM

বেগম জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র কোকোর অকস্মাত মৃত্যুর খবরটি অনাকাঙ্ক্ষিত একটি অকাল মৃত্যু বলে সমব্যাথীচিত্তে ভাবছিলাম – গত বিশটি দিনের অবরোধ ও হরতালে জীবন্ত দগ্ধ পুত্রের মৃত্যুতে মায়ের বুকফাটা কান্না কি বিধাতার অারশ ছুঁয়েছিলো? তাই কি অভিশাপের মতোন মৃত্যু ঘটালো বেগম জিয়ার ছোট পুত্রের? ধর্মভীরু মানুষদের মনে এমন ভাবনা অাসাটা অন্যায় কি?' এবঙ এওতো সত্য যে এই কোকোর নামে বিদেশে তহবিল তসরুপের তথ্য প্রকাশ করেছে স্বয়ং সিঙ্গাপুরের ব্যাংকের অভিযোগের কারণে বিশ্বব্যাংক। সেই কারণে কোকো অভিযুক্ত অাসামী হয়ে মালয়েশিয়া অাশ্রয় পাওয়া বেগম জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র। এখন কোকোর মৃত্যুর ফলে মামলা ডিসমিস। কারণ, মৃতের তো বিচার এখন অচিনপুরে।

যাহোক, অতঃপর অারও হতভম্ভ হবার পালা। যখন দেখলাম খবরে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমবেদনাকাতর হয়ে বেগম জিয়াকে দেখতে গিয়ে গেইট না খোলার কারণে ৭-৮ মিনিট নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে ফেরত গেলেন! প্রধানমন্ত্রী ফিরে যাবার খবরটির সচিত্র বার্তা দেখেই তড়িঘড়ি বিএনপির মুখপাত্রের জবাব – বেগম জিয়াকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে ইঞ্জেকশন দিয়েই। তাই প্রধানমন্ত্রীকে ফিরে যাওয়া নিয়ে কোনও উদ্দেশ্যমুলক রাজনীতি না হয় যেন! এ যেন সেই – 'ঠাকুর ঘরে কে রে? অামি কলা খাইনি'-র মতোন হাস্যকর মূর্খের অজুহাত অার কি! অারে, বেগম জিয়াকে নাহয় পুত্রশোক ভোলাতে ঘুম পাড়াতে হয়েছে ইঞ্জেকশনে। তাই বলে কি উপস্থিত বিএনপির সকল লোকজনকেও ইঞ্জেকশন দিয়ে বেহুঁশ করার কারণে কেউ প্রধানমন্ত্রীকে ন্যূনতম সৌজন্য পর্যন্ত দেখাতে পারলো না? গেইট খুলে বসাতে পারলো না? বিএনপির এই অসভ্য অাচরণ কোনও অজুহাতে ঘুচবে অার? দলটি অচিরে অাঁস্তাকুড়ে ঠাঁই পাওয়া অাশ্চর্যের বিষয় হবে না তেমন। দুই দলের সংলাপে সরকারের উদ্যোগ উদ্যমহীন হওয়াই এবারতো স্বাভাবিক লাগবে সকলের। ইতোমধ্যেই প্রবীন ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের কড়া মন্তব্য মিডিয়াতে – 'কিসের সংলাপ? লাত্থি মারি সংলাপে। কোনও সংলাপ হবে না অার।'

তারপরেও কিন্তু জাতীয় সংসদে শোক-প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে। সাংসদ অনেকে প্রাণবন্ত বক্তব্য রেখেছেন। এবঙ কোকোর জানাজাতেও অাওয়ামীলীগ এর যোগদানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটি অত্যন্ত প্রশংসনীয়।

কিন্তু, দুঃখজনক সত্য তো এই – বিএনপির শেষ পেরেক বিএনপি নিজেই ঠুকলো এবার। উপরন্তু, দলের এমন একটি শোকাতুর ঘটনা ঘটবার পরেও, অবরোধ কর্মসূচি চলবে – এই ঘোষণা জনগণকে হতাশ, মর্মাহত করেছে। যদিও বোমার ভয় নিয়েই সবাই রাস্তায় বেরিয়েছে জীবন ধারণের তাগিদে। অাজ অামার নিজেরও ইঞ্জেকশন এর তারিখ। তাই বোমার ভয় নিয়েই বেরিয়েছি। অামার মতোন অনেকে বেরিয়েছে। যাদের না বেরিয়ে উপায় নাই। ক্লিনিকে সবার উদ্বিগ্ন মুখ। সবার একটাই অভিমত যে – অসহ্য, এভাবে চলতে পারে না। সকলের সোচ্চার হতে হবেই হরতালের বিরুদ্ধে। বোমায় পুড়িয়ে মারার বিরুদ্ধে #হোক-প্রতিরোধ#।। সরকারের অারও অধিক জন-নিরাপত্তা নিশ্চিত করা উচিত। জনগণেরও অনেক বেশি সচেতনতা দরকার। পাড়ায়, মহল্লায় প্রতিরোধের বুহ্য গড়তে হবে। যা দেখে চোরাগোপ্তা হামলাকারীরা পালাবে। এইসব শুনতে অামারও সাহস এলো হৃদয়ে।

ফেরার পথে গুলশানের ব্যাস্ত রাস্তার চিত্র ধারণ করলাম নিজের মোবাইলে। হরতালের এই চিত্রটি কি বলছে ? জনগণ হরতালের পক্ষে? বিএনপির হরতাল জনগণকে সঙ্গে নিয়েই?

২৬ শে জানুয়ারী। ২০১৫ সাল।