এদেশে কারা নারীর স্বাধীনতা চায় না, প্রাণের মেলা চায় না – অজানা কার?

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 20 April 2015, 01:10 PM
Updated : 20 April 2015, 01:10 PM

এদেশে এমন অনেক দলীয় আছেন, যারা বরাবরই নারী স্বাধীনতাকে অপছন্দ শুধু না, নারীর পথচলাও অপছন্দ করেন। তারা ছুতোনাতায় ধর্মীয় জিহাদী ভূমিকায় নারীর সম্ভ্রমে হামলাকারীদের বাঁচাতে মরিয়া হন। এবঙ বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী চিহ্নিত রাজকারের বিচার না চাওয়ার দল করেন। বিচারে ফাঁসির পরে – "শহীদ" আখ্যায়িত করেন। এমন কি চাঁদেও মুখ ঝুলাতে পারদর্শী উনারা। এ হেন দলবাজ ও বকধার্মিকে ঠাসা বাংলাদেশ আজ। দুনিয়াদারির অবাধ মজা দারুণ উপভোগ করেন। আর নারীর 'পরে চাপান নিষেধের হাজার খাড়া। তাতেও যখন নারীরা অগ্রসরমান – তখন হামলে পড়েন দানবিক আচরণের নিকৃষ্টতম নমুনা হয়ে। তাদের টার্গেট নারীরা তখনই – যখন এদেশে নারীর অগ্রাধিকারের বিষয়টি নারীর মুখে, নারীর চলায়, নারীর স্বাধিকারে প্রকাশ পায়। নারীরা কাজে বেরুলে, উচ্চ শিক্ষায় অধিকার চাইলে তারা নাখোশ হন। তখন ধর্মীয় বিধিনিষেধে নারীদের বসিয়ে রাখতে মরিয়া প্ল্যান কষেন। নারী লিখিয়েদের লেখায় নজরদারি করেন, বয়ান দেন।

যাহোক, সম্প্রতি পহেলা বৈশাখের মেলায় নারীর সম্ভ্রমহানি ঘটানো নিয়ে অনেক আওয়াজ উঠছে, উঠবে আরও। ঘটনাটি অনেক ঠান্ডা মাথায় সুপরিকল্পিত উপায়ে 'ভুভুজেলা' নামক বংশি বাজিয়ে ঘটানো হয়েছে। ভুভুজেলা বাঁশের বাঁশরী না। বিষম বাজে অসহনীয় আওয়াজের প্লাস্টিকের বংশি। কান ফাটানো পোঁ—পোঁ আওয়াজের ফাঁকে ঠিকই দানবগুলি নজর রেখেছে মেলার কোন মেয়েটি একলা হাঁটছে। এসবই ভিডিও ফুটেজে পাওয়া দৃশ্য এখন দৃশ্যমান। তাহলে দানবগুলিরে ধরা কঠিন কেন? বিশেষ পত্রিকার হেডিং কাদের বাঁচাতে চায়? উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপুক কেউ চাইনা। আমাদের সবার কন্যাদের অবাধ পথ চলায় দানবিক হামলা আর চাইনা। অই অমানুষিক হামলাকারীরা যে দলের হউক তাদের জরুরী সমুচিত আইনতঃ দন্ডাদেশ দেখতে চাই। তাদের দৃষ্টান্তময় বিচার চাই। বোনের উপর হামলা -আর না, আর না। মা-জাতিকে জুজুর ভয় , ওয়াজ-নসিহত, ফতোয়া – আর না, আর না।

'ভুভুজেলা' নামক প্লাস্টিকের বংশি যে যেখানে দেখিবে পোড়াইয়া করুক ছাই। নারীর 'পরে ঝাঁপিয়ে পড়ার উছিলা খোঁজা দানবদের বাংলাছাড়া হওয়া চাই। যে দেশে প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার নারী, বিরোধী নেত্রী নারী ও জাতীয় সংসদে আসনপ্রাপ্ত অনেক নারীর মুখ – আমরা তাঁদের ভূমিকা সঠিক দেখতে চাই। আমরা নারীরা পুরুষ বিদ্বেষী না। আমরা আমাদের পুরুষ ভাই-বেরাদর, স্বামী-পুত্র ও প্রেমিকের দুহাত ধরে এগিয়ে চলায় পারস্পরিক শ্রদ্ধার বোধটি চাই।

ছবিটি আমি তুলেছিলাম পার্কে। নাজমা নামের ঝাড়ুদারের কন্যাশিশু পড়তে যায় মায়ের আয়ে বস্তির ইশকুলে। মায়ের স্বপ্ন মেয়েকে পড়ালেখা শিখিয়ে নিজে যা পারেনি সেই স্বপ্নপূরণে সাধ্যমতো এগিয়ে দেবে। মায়ের কন্যাকে এগিয়ে নেয়া কাদের অপছন্দ এদেশে? কার অজানা তাহারা কাহারা? সরকারেরও অজানা নয়।

যেহেতু লিখিয়ে মানুষ, তাই লেখাই অবলম্বন আমার। তাই লিখেই বলি মনের কথা। এবঙ হাতিয়ার বানাতে চাই লেখাটিরেই। সদ্য লিখিত পদ্য পাঠকদের জন্য –

অদ্ভুতুড়ে বংশি ভুভুজেলা বাংলাছাড়া হোক ***
****************************
অই বংশি ভুভুজেলা বাঁশের বাঁশরী নয়।
অংশি তারেও বলি যে বংশি দানবের হয়।
তারেও দানব লাগে তাইতো পোড়াতে চাই।
সে যেন এদেশে আর না বাজে এমন আইনটি চাই। ।
ও ভাই, ও বোন, কন্যা তোমরা কঠিন হও।
তোমরা কারাতে শেখো, কঠিনতম মারের কৌশলী হও।
যেখানে দেখিবে যত দানব জটলা জোট –
হাতের মারেই হোক দানব নপুংসক।

বৈশাখ। ১৪২২ বঙ্গাব্দ।
ঢাকা। বাংলাদেশ।