জগতে বেঁচে থাকাটা অাজ অধিক বিস্ময়ের

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 31 May 2015, 06:34 AM
Updated : 31 May 2015, 06:34 AM

অাজকাল অামার বেঁচে থাকাটা জীবনের সবচে' অবাক কান্ড বলেই লাগে। মরাটা সবচে' সহজ অাজ জগতে। কত সহজে একজন মানুষ এই অাছে তো এই মৃতের দলে। অনেকে জীবন্মৃত যুঝতে থাকে জীবনেরই সনে। অনেকে মরণপণ লড়াই করে বাঁচাতে চায় অাপন ভিটেমাটি, স্বদেশ। নমস্য মানুষ তারা। অনেকে অাবার কবির সেই মরণপণ নন্দলালের মতোন –

'নন্দলাল একদা একটি করিলো ভীষণ পণ
স্বদেশের তরে যে করেই হোক রাখিবেই সে জীবন'

এমনতর কঠিন পণ যে কত বিরাট হাস্যকর কসরতের নমুনা রচনা করে তাহারা যদি জানতো তবে তো জগতে নন্দলালের নমুনা থাকতো না ! যেমন জগতে অনেক দেশে রাজনীতিবিদরা / তাহাদের ছেলেপুলেরা আজও কবির নন্দলালের উপমা!

অাজ অামার অযথাই কেন যে এইসব জীবনমরণ বিষয়ে যত নমুনা জগতে তারই চিত্রকলা অাসছে মনে! যতই ভাবি – কি হবে ভেবে – ততই চলচ্চিত্রের সেলুলয়েডের ফিতায় বাঁধা রেলের ঝমঝমাঝম বাজনা বাজিয়ে সে অাসে মনে। কী অার করি! তাই তো অগত্যা লিখতে বসি। অামার বেকার জীবন অাজ। অাগে তো তাও একটু পারতাম ছুটতে, রিক্সায় চড়তে। গত কয়েক বছরে অচল পদ্যের মতোন অামি। সচল হবার নো ওয়ে। ডাক্তার বুঝিয়ে দিয়েছেন অনেক বিশদ ভাবেই। বড়ো রাজরোগের অধিক অামারে ধরেছে ডিজিজ বোনম্যারো ডিজিজ নামক কঠিন রোগ। জীবনে অায়ু যতটা অাছে ভুগতে হবে। চিকিতসাও সহজলভ্য নয় এদেশে কি বিদেশে। মহারোগ বলাই যায়। অনেক ব্যয়সাধ্য চিকিতসায় স্টেবল থাকার পথ। নিজেকে বোঝার মতোন লাগে। তারপরেও অদম্য আমার উতসাহ লেখালিখিতে এইখানে। অনেক কলাম, কবিতা দৈনিকের পাতায় লিখতাম একদা। আজকাল ছেড়েছি প্রায় ওসব। ভালো লাগেনা দৈনিকের পাতার / মিডিয়ার রাজনীতির কচকচানি / টকে যাওয়া টক-শো নামক খিস্তিপর্ব। তারচে' এইখানে লেখাই ভালো। অনেকে গালমন্দ যদিও করে, তাতে কি ! জাত কোনও সস্তার জীবনী নয় , কারও গালমন্দ খেলেই জন্মবৃত্তান্ত হাওয়া হবে ! এবঙ এই অসুখ আমায় বুঝিয়ে ছাড়ছে এখন দুই দিনের দুনিয়াদারীটা নিয়ে এতটা হা-হুতাশন / হিংসা-বিভাজন হৃদয়ে পুষে কোনও লাভ হবার বদলে কপালে ঢের খারাবি জোটে। বানানো নয়, আমার অভিজ্ঞা আমায় বহুভাবে জীবনে ঠকে ও ঠেকেই শিখিয়েছে হৃদয়ভর্তি হিংসায় লাভ তো নেই, বরং উল্টে নিজের ক্ষতি সাধন করা। তাইতো আজ অবলীলায় জগতের হিংসা, বিভাজন, গালিগালাজ শুনেও শুনিতে চাহিনা আমি। দেখিলে বেদনাদগ্ধ হলেও দূরে-দূরেই সরিয়া কাঁদি হৃদয়বদ্ধ কবিতায়। এবঙ আজও বেঁচেই আছি বলিয়া শুকরিয়া হাজারবার বলি।

হ্যাঁ, শুকরিয়া হাজারবার। এই অামিতো তবুও স্বামীর কারণে চিকিতসা সঠিক পেয়ে বেঁচেই অাছি। এবঙ লিখতেও পারছি অনলাইনে। অফলাইনে। এ জগতে এভাবে বাঁচা অনেকে জানেও না। অনলাইন-অফলাইন এসব ডিজিটাল দুনিয়াদারী সবার না। যাদের নাই মাথার 'পরে ছাতও তারা কি করে বেঁচে থাকছে – সেই মানবেতর জীবনগুলি কি খায়, কি করে চলে এখনকার অনলাইন-অফলাইন কর্মবীর নারী-পুরুষ বিস্তর লেখালিখিতে তুলে ধরেন বহুভাবে। মিডিয়া, চ্যানেলগুলিও বহু সচিত্র প্রতিবেদন দেখায়। তো, যাদের জন্য তারা কি জানে? তারা কি তাদের জীবনধারা বদলের সমাধানটি পায়? জগতে সচরাচর হয়তো হাতেগোণা মানুষরাই হতদরিদ্রদের সরেজমিন পাশে দাঁড়াতে চায়। হাতটি বাড়ায় ভালোবেসেই। তাই হয়তো কিছু গরীব / হতদরিদ্র মানুষদের ছেলেপুলে একটু শিক্ষার অালোক পায়। একটু পোষাক পায়। বিশেষ দিনে খাবার পায় একটু ভালোমন্দ। একটি অানন্দ দিনের দেখা জীবনে অাসে। তরুণ কিছু উদাহরণযোগ্য ভূমিকা রাখে সমাজে। অইসব তরুণদের ভূমিকা নেবার কারণেই কোথাও একদিন তাদের স্বপ্নপুর নামের ইশকুল রচিত হয়। তাদের পাঠপর্ব অারও অনেকের সহায়তায় শুরু হবার উদযোগে এগুতে পায়। সেথায় কিছু মা-বাবাহীন ইয়াতিম শিশুর পাঠপর্ব চলতে দেখে অামার অসুখ অামাকে ছুঁয়ে থেকেও উঠে দাঁড়াতে বলে। অামার রিক্সায় না ওঠা পা দুখানা হাড়ের অসহ্য যাতনা ভুলে অামায় প্রাণিত হবার পাঠ শেখায়। সে অামায় অনেক জীবনানন্দে ভাসিয়ে বলে – জীবনানন্দীয় লাইন –

"আমরা দু'জনে মিলে
শূণ্য করে চলে যাবো
জীবনের
প্রচুর ভাঁড়ার।।"

এই লাইন ক'খানা দারুণ স্যূভেনিরে বাঁধাই করে আমারে দিয়াছিলো আমার কন্যা। আজও আমার দেয়ালে সে আছে যতনে। সবশেষে কবিতা দিয়াই টানছি ইতি …

জীবনপুঁথি।। পর্ব-৩-৪।।
*************
দেখি আহা কি অভূত ওড়াউড়ি ভাই !
অসীম-আদিম সেই শিখাময় গন্ধ পাই !
অদূের আনন্দঘাটে ঝরা গোমতির গান।
সে ছিলো দারুণ প্রিয় নদীময় উপাখ্যান।
এইতো এখন সেও চুরচুর-ঝুরঝুর একা।
এইতো একেলা সেই খেয়াপার দেখা।
সত্য হয়তো হয়না, শুধু ভাবের ছবিটি আঁকা !
ভাবছি মন্দ না, তবু, এই বেঁচে থাকা !

তবে থাক পেছনে ঈর্ষার বৈভব-বাহাদুরীর চোখরাঙানি।
মিথ্যাচারের লোকহাসানি।
থাক অকাতর আহাময় মনভাঙানি, ছেলেভুলানি।
জীবনের কাছে চুপ হলে, থামে সব হানাহানি।

জৈষ্ঠ। ১৪২২ বঙ্গাব্দ।
ঢাকা। বাংলাদেশ।