ফুলের গন্ধে জানলা ভাসে …

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 9 June 2015, 07:37 PM
Updated : 9 June 2015, 07:37 PM

অসুখ আমি পরোয়া করতে চাইনা বলে মাঝেমাঝেই একরকম গা ঝাড়া দিয়ে বেরিয়ে পড়ি বাড়ির ধারেকাছে কোনও কফিশপ / বাজারে। যদি কোনও ফুলঅলা দেখি তো কিনি ব্যাগে যা আছে তারই হতে যা জোটে সেই টাকায়। একটু হয়তো বেশি মূল্যেই কিনি বেলী / গোলাপ। বাড়ি এনেই যত্নে সাজাই নিজহাতে। হাড়ের ভোঁতা বেদনা, সার্বক্ষণিক ঝিমানি, ক্লান্তি ফুলেল গন্ধে মনেও পড়ে না তখন ! চিলতে জানলা ভাসে ফুলেল গন্ধ উড়িয়ে আশপাশ ভাসিয়ে সে কোন অচিনলোকে ! ঘুম আসেনা চোখে ! অনেক রাতজাগা টিভির সর্বশেষ খবর শুনতে-শুনতে – সেই যে ইশকুল বেলায় বাবার বাগানে বেলী ফুলের চারা লাগিয়েছিলাম – হঠাৎ এক বিকেলে দুইখানা বেলীর কুঁড়ি দারুণ গন্ধ ছড়িয়ে ফুটেছিলো – দিনটি হৃদয় জাগায় আজ – অসুখ ভুলিয়ে দিতেই আসে স্মৃতির বনে-বনে। পাঁজর জাগিয়ে-কাঁদিয়ে যায়।

আজ ফুলের আঘাতও সয় না হাত। যে হাত কত না সামলাতে পারতো যতো কঠিন ঝক্কি, ঝামেলা, সংসারযাত্রা … তারই মাঝে আবার কিঞ্চিত নিজের ফুলপ্রীতির টানে যখন যেখানে যেমন থাকা – সকল কিছুর সনেই তাল মিলিয়ে ভাড়া বাড়ির এক চিলতে ব্যালকনিতে টবের বেলী-জবা নিজের হাতে অনেক যতনে ফোটানো ! বৃক্ষমেলা শুনে একলা চলে যেতাম রিক্সায় চড়েই। জমানো টাকায় কিনতাম ফুলের চারাগাছ। দারুণ উতসাহে টবও কিনতাম। এবঙ এমন কি বনসাইও কিনে এনেছি – ঝিরিঝিরি চিরল সবুজ পাতার ছোট্ট তেঁতুল বৃক্ষ, জারুল বনসাই। সঠিক যত্নের উপায় না জানায় সেসব মৃতপ্রায় যখন – তবুও বাঁচাতে চেয়ে – না পেরে হাল ছেড়েছি অবশেষে।

এখন এ হাত কিছুই পারে না আর ! অসুখ খেয়েছে তার হাড়ের ধার ! তবুও পথ চলতি ফুলঅলা দেখলে না কিনে পারি না কিছুতেই। স্বভাব দোষ যায় কি ছাড়া ! তাছাড়া যে ফুল বেদনানাশা তারে ভালোবাসাই ভালো … ভালো না? পাঠক ভাইবোনেরা বলুন … না বলুন –
তবু এ হাত অকেজো হয়েও ভালোবাসে বেলীর গন্ধে হারিয়ে যেতে যোজন স্মৃতিময় দিনের কাছে। অাজই বেলী ফুলের এক ডজন মালা কিনেছি পথের ফুলঅলার কাছে একশো টাকা নগদ দিয়ে। দারুণ তাজা বেলীর গন্ধে একলা বিমোহিত হয়েছি। ছবি তুলেছি মোবাইলে। কালই হয়তো শুকিয়ে যাবে। তবুও আমি ফেলি না ফুলমালা। শুকনো মালা সাজিয়ে রাখি। দেখতে কারও ভালো না লাগলেও আমার লাগে ভালোই। ফুল বেদনা নাশকারী – এমন লাগে। কত কি মনে পড়ার দিন জাগায় পুরনো আমায়। অই দিনের তুল্য কোনও দিন হয় না আর। এখন হাড়েও কেমন পাতা ঝরার ঝুরঝুর শুকনো মর্মর শুনতে পাই।

একটা বয়সে কোনও অনুষ্ঠানে যাওয়া মানে খোঁপায় গুঁজে গোলাপ / বেলী ফুলের মালা … অাহাহা … দিনগুলি হারিয়ে গেছে যোজন দূরে। তবুও তরুণীদের যখন দেখি খোঁপায় / চুলে গোলাপ গুঁজে দারুণ সাজে – হৃদয়, চোখ দুটোই ভরে। ফুলেল সাজ মানায় মেয়েদেরই কেবল। ও সাজ ছেলেদের না। ফুলেল সাজ যুগেযুগেই কবিদের কবিতা লিখিয়েছে। অাাঁকিয়েদের অাঁকিয়েছে দারুণ ছবি। গানের মানুষ বেঁধেছে গান। প্রেমিকদের কথা কি আর বলি ! যদি না নিদেন একটা গোলাপ দিয়েছে প্রেমিকারে তবে তো বৃথা জীবন ! এমনই জেনেছি প্রেমের প্রহর। একটাও কবিতা লেখেনি জীবনে সেও কেমন একখানা কবিতা দিব্যি লিখেই ফেলে যখন প্রেম জীবনে আসে। এখনকার প্রেম কেমন – এখনও গোলাপ গুঁজে কবিতাময় প্রেমপত্র রচে কি প্রেমিক প্রবর? এখনও ফুলেল বাতাসে খবর আসে প্রেমের? প্রেমের বয়স গেছে যোজন দূরে অচিনপুরে – আজ এমন দিনে গোলাপ-বেলী আমারে পেয়ে বসেছে – নাই কাজ তো খই ভাজার মতো … তাইতো বেদনানাশি ফুলেল গন্ধ লিখতে বসা … খুঁজতে বসা অসুখ ভুলে ! চিলতে জানলা বলতে আসে আমায় –

কিগো, কেমন ভুলেছো বেলী-গোলাপের দিন?
ফুলেল বাতাসে তাই বেদনার ঝিনঝিন !

জৈষ্ঠ। ১৪২২ বঙ্গাব্দ।
ঢাকা। বাংলাদেশ।