জৈষ্ঠ্য শেষের জলধারা…আহাহা!

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 11 June 2015, 07:56 PM
Updated : 11 June 2015, 07:56 PM

জৈষ্ঠ্য শেষের দাবদাহে যখন অতিষ্ঠ হৃদয় তখনই হঠাৎ রূপালি জলের ধারা নামলে কার না হৃদয় নাচে? সে যেন কবিতা প্রহর হতে নেমেছে খরাতপ্ত ধরায়। যেন ঢাকার নাগরিক জীবনে আচমকা খানিক স্বস্তির কবিতাময় কিছু সময়, জলেভেজা নরোম সেচনের মতোন খরাক্লান্ত হৃদয় ভিজিয়ে যাওয়া। কারও-কারও হৃদয় যেন দারুণ রোমাঞ্চিত যমুনা হলো। রাজধানীর যান্ত্রিক ধাতব সার্বক্ষণিক আওয়াজের জের যাতনাবাহী সংক্রামক রোগের মতোন বড়ো বিরক্তিকর। তাইতো যন্ত্রণাদগ্ধ প্রহরে হঠাৎ রূপালি জলধারা অসীম আনন্দনে ভিজিয়ে যাওয়া কবিতাময়তায় কিছু বোধের অনির্বচন হৃদয়জয়ী হয়। এমন ক্ষণে হৃদয় খানিক উদাস হয় বৈকি। তারেই তখন যেন বলাও যায় –

"এসোগো বানাই স্বপ্নবান রূপালি কবিতা"!

আদতে যদিও জলাবদ্ধ ঢাকার দশা করুণ- ক্লিশে এতটাই যে অপরিচ্ছন্ন আশপাশের নালা-নর্দমার অসহনীয় পচা পানির ভ্যাপসা বিকট গন্ধে জনসাধারণের দুর্ভোগ চরমে ওঠে। রোজই যাদের জীবন "নুন আনতে পান্তা ফুরোয়" – এমন জীবন, আচমকা রূপালি বৃষ্টিতে তাদের মন নাচেনা জানি। তাদের উদোম গা ঢাকার শতছিন্ন জামাও জোটানো কঠিন জানি। তাদের প্রতি কেবল সরকার না, আমাদেরও দায়ভার রয়েছে।

তবু এমন জৈষ্ঠ শেষের জলধারা জরুরী যথেষ্ট বলেই সমস্যা সয়েও নাগরিক কলোনিয়াল হাজার হৃদয় নেচে উঠতে চায়। আমার মতোন / আকাশতলে পথচারী লোকজনের কারও-কারও হয়তো বা তখন নৃত্যময়
"হৃদয় আমার নাচেরে"
হয়ে রূপালি সুরজালে ভিজতে থাকে। মাথার 'পরে রঙিন ছাতা থাকুক না থাকুক তবু হৃদয় নাচে রূপালি স্নানে … কবির কবিতায় / গানের সুরে। বাংলাদেশের বাঙালি মন আদতে এমনই –
"এমন দিনে তারে বলা যায়"
সুরের ঘনঘোরে জড়ানো যেন। হাজার সমস্যা ভুলেই রূপালি জলের ধারাজলে ভিজতে ভালোবাসে। কিশোরী কন্যা মায়ের বারণ না শুনে / জ্বরজারিতে পড়ার ভয়ে ভীত না হয়ে একছুটেই ছাতে ভিজতে যায়। এদিকে ছাতহীন পথশিশুরা তোয়াক্কা করে না কোনও নিষেধাজ্ঞা। পথের পাশে জলকাদায় দাপাদাপি করতে থাকে। ধূলিধূসর গাছের পাতায়, রঙওঠা শ্যাওলাপড়া পাড়ার বাড়িগুলো কেমন ঘোর জাগানো কবিতা লেখার দৃশ্যপট বানায় – বৃষ্টি না এলে কবি জানতো? লেখা হতো কি সেই কবিতা যা পড়ে জলের ভাষা পাঠক বোঝে? যা দেখে শিল্পী অাঁকতে বসে? কেমন অঝোর রূপালি জলে আকাশ হতে গড়িয়ে পড়া … এমন জলধারা নদীরা , সাগরধারা ধারণ করে আরও খরতোয়া … এ বড়ো অমল আবেগমাখা দৃশ্যপট। আমার লাগে কবিতাময় … মায়াময়। মায়াজালেই জড়ানো মানুষ কবিতা ও গানের ভিতর না পাওয়া প্রেমের মতোন রূপালি বৃষ্টিজলে দারুণ রোমাঞ্চিত যমুনাবতী / পদ্মাবতী / মেঘনামতি / গোমতীয়া প্রেমঢেউয়ের ভাসান শোনে … এমন লাগে আমার আচানক দাবদাহের দিনে রূপালি বৃষ্টি নামলে। নেশা ধরানো ধারাজলে ভিজতে চায় হৃদয়। তিতিবিরক্ত চারপাশের বহুতর অসম যুদ্ধসম জীবনধারা বৃষ্টিতে ধুইয়ে দেয় বেদনা / অসুখের দাপট। তখনইতো পৃথিবী ভালোলাগাময়তায় ভাসিয়ে যায় চোখের অধিক সে এক জলরঙের কবিতা যেন। গানও তারে বলাই যায়। তবুও কেন জানি না জলরঙে ডোবানো প্রকৃতি …. কবিতা বলি তারেই আমি।

রটনা রয়েছে – কাকের চেয়ে কবির সংখ্যাধিক্যের কথা। তাতে কি ! বৃষ্টিপ্রিয় বাঙালি হৃদয় রূপালি জলের ফোঁটায় নেচে উঠতে চায় – এটিতো চিরকালীন একটি অনুভব। অনুভবকে কে কবে ঠেকাতে পারে? কবিতা এমন দিনেই আসে। নাচের ভঙিমায় আকাশভাঙা রূপালি জলের ফোঁটা যেন বা কে এক কিশোরী কন্যা রঙিন ছাতা মাথায় কবিতার মতোন খোলাচুল ভিজিয়ে নেচেনেচে ফিরছে মাঠের পারের দিগন্ত রেখাটি হতে হৃদয় জাগানিয়া। এ যদি কবিতা না হয় – কবিতা কাহারে কয়?

জৈষ্ঠ্য। ১৪২২ বঙ্গাব্দ।
ঢাকা। বাংলাদেশ।