ঈদের উপহার উপরঅলা নাকটি জখমিত করিয়া দিয়াছেন !!

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 21 July 2015, 07:10 PM
Updated : 21 July 2015, 07:10 PM

এবার এমনিতেই অমানুষিক কতিপয় ঘটনা বিপর্যস্ত করেছে মন। ঈদের চাঁদের খবর তাই রোদনভরা লাগছিলো বিষম। তবু ঈদের দিন কিছু না কিছু আয়োজন করাই লাগে পরিবার ও স্বজনদের আপ্যায়নের জন্য। এবঙ বাড়ির কাজের মানুষের কাছে তো ঈদ মানেই কিছু রঙিন পোশাক, বাড়তি বখশিস, খাওয়া, খুশির একটি দিন। তাইতো ঈদের নামাজ পরবর্তী খাওয়াপর্ব সেরে কাজের দুই মেয়ের সালামী প্রদান করে স্বামীর সনে ননদিনীর বাসায় বেড়াতে গিয়ে লিফটে ওঠার আগেই অভাবিত পড়েছি উল্টে হোঁচট খেয়ে। কথায় আছে না – 'কপালের লিখন না যায় খন্ডন' তেমন অঘটন আর কি। মানুষের যেখানে কিছুই করার নেই। তো, দৈব দুর্বিপাকের পাকেচক্রে পড়ার করুণ কাহিনী হয়ে জীবনে নামে হঠাৎ অঘটন। হোঁচট খেয়ে পড়ার ফলে কতজনের মাথা ফেটেছে / হাত ভেঙেছে / পা ভাঙা / মাজাভাঙার খেসারত বহন করতে হয়েছে বাকি জীবনভর – তার কোনও হিসেব আছে কি!

যাহোক, জীবনে বহুবার হোঁচট খেয়ে পড়েছি বটে, তরুণ বয়সে স্বভাবদোষে সেটি আমার অনবধানতাবশতঃ তরতরিয়ে ওঠা-নামার কারণে ঘটেছে। অই বয়সে সেটি সামলে ওঠা গেলেও এই বয়সে কঠিন দশায় পড়ার মতোন দশা বলতে পারি।

বছর দশেক ধরেই আমার হাড়ের অবস্থা ভালো না। একবার পায়ের হাড়ে ফ্র্যাকচারও হয়েছিলো। তখন এক্সরে রিপোর্টে হাড়ের ভঙুরতা পড়লো ধরা। চিকিৎসক চলাফেরায় অনেক সতর্ক থাকতে বললেন। তখন হতে সাবধানেই চলি, পা ফেলি। অথচ, আমার কপালের লিখন ছিলো বলেই এবার ঈদের দিনেই ধপাস পড়া। উপরঅলা তবু সদয় হওয়ায় পড়াটা যত জোরসে হবার হাজারভাগ সম্ভাবনা অবধারিত ছিলো – ততটা জোরসে পড়িনি। স্বামী ভদ্রলোকের বাড়ানো হাতের বাড়ি প্রটেকশন ছিলো। এবঙ আমার হাতের ব্যাগটিও প্রটেকশন হয়েছে পড়ার কালে। পড়াটা তাই মাথার ইনজুরি / চশমা ভেঙে চোখের ভিতর কাচের গুঁড়ো ঢোকা বা মাজা / হাত-পা ভেঙে যাওয়া না হয়ে নাক ফাটার দশা হয়েছে। বুঝে ওঠার আগেই নাকের রক্তক্ষয় অনেক। ননদিনী থাকেন সাত তলায়। বরফ আসতে-আসতে আমার করুণ দশা ক্রমেই। অতঃপর এ্যাপোলো ইমার্জেন্সি, এক্সরে, রিপোর্টে নাকের হাড়ে বাঁকানো ক্র্যাক পাওয়া, মেডিকেশন সমেত ঘরে ফেরত আসা। ফেরত আসা যে মাথা না ভেঙে / মাজা / হাত-পা না ভেঙে – সেইতো ঢের। কেবল নাকের হাড়টি ক্র্যাক – সে আর কি এমন ! হাজার শুকরিয়া। উপরঅলা আমার উপর বড়ো সদয় বলে অবধারিত পতনটি তেমন বিশাল হয়নি। তাই রোদনভরা ভরা বরষাকাশের অঝোর বারিধারা ঝরঝরিয়ে পড়ার ঘোলাটে জলছবি শুয়েশুয়েই দেখার কপাল করে এসেছি দুনিয়াতে। এমন শুয়ে থাকার ঈদের ছুটির দিনের অঘটন না লিখে পারি ! লেখাই আমার অমোঘ নিয়তি হয়তো।

আমার এবারের ঈদের এই করুণ দশাটি ঈদের ক্ষণিকের বাঁকানো চাঁদের মতোন কলঙ্কচিহ্ন আর কি। চারপাশের অমানুষিক অভাবিত ঘটনাবলির ভিতর এও একটি দৈব দুর্বিপাকের ঘটনা হিসেবে শেয়ার করলাম। জীবনে ফাড়া অনেক গেছে আমার। ফাড়া সহজভাবে কাটিয়ে উঠতে চাই উপরঅলা নির্দেশিত নিয়তি ভেবে। জীবন সায়াহ্নে আরও কত ফাড়ার মোকাবিলা করতে হবে কে জানে ! এইতো জীবন। কত না সাধের। কত না সাধনারও। তবুও জীবন … এই আছি তো এই নেই।

শ্রাবণ। ১৪২২ বঙ্গাব্দ।
ঢাকা। বাংলাদেশ।