২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা ভয়ঙ্করের নজির

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 21 August 2015, 04:28 AM
Updated : 21 August 2015, 04:28 AM

১৯৭৫ এ সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে যেভাবে হত্যা করেছে এই দেশের কুলাঙ্গার কয়েকজন সেনাদল চরম ষড়যন্ত্রের পরিকল্পিত উপায়ে, তার চেয়েও ভয়ঙ্করতম একটি ষড়যন্ত্রের হামলা এইদেশে ২০০৪-এ ২১-শে আগস্ট জনসভায় গ্রেনেড হামলা চালিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যাকেও হত্যা করার চরম পরিকল্পনা। তখনকার বিরোধীনেত্রী আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা সেদিন জনসভায় বক্তব্য শেষের পরপর গ্রেনেড বিস্ফোরণের ভয়ঙ্কর হামলায় পতিত হন। বলতে গেলে যেন বা অলৌকিক উপায়ে রক্ষা পাওয়া শেখ হাসিনা তাঁর দলীয় কিছু নেতার চক্রবূহ্য গড়ার কারণেই আজও বেঁচে। হয়তো উপরঅলা এবঙ বাবা-মায়ের দোয়ায় বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আজকের প্রধানমন্ত্রী হয়ে সেদিনকার ভয়াবহতার বিভীষিকাকে উপলব্ধি করেন।

২০০৪ সালের আগস্টের ২১শে তারিখে সেইদিন বোমায় আওয়ামী লীগের প্রয়াত জিল্লুর রহমানের স্ত্রী নিবেদিতপ্রাণ নেত্রী আইভি রহমান দুই পা হারিয়ে চিকিতসকদের আপ্রাণ সকল চেষ্টা বিফল করে অকালে মরণসাগরপারে পাড়ি জমান। সেদিনের গ্রেনেড হামলার শিকার আওয়ালীগের আরও বহু জনের শরীরে আজও স্প্রিন্টারের জখম বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতা সাবেক মেয়র হানিফ সেদিনের জনসভায় শেখ হাসিনা যাতে বাঁচেন সেই চক্রবূহ্যেই নিজে আহত হন। এবঙ অই আহত ক্ষত বহন করে চিকিতসাধীন ছিলেন, কিছুদিন পরেই মারা যান তিনিও। ঘটনাটি আজও জলজ্যান্ত একটি বিভীষিকাময় ঘটনা। আইভি রহমানের মতো আওয়ামীলীগের নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষিত নেত্রীর অকালমৃত্যু সেদিনের গ্রেনেড হামলার শিকার হয়ে – এমন মৃত্যু বিবেকবান মানুষদের আহত করে। এমন বেদনাদায়ক অন্যায় বিভীষিকার দৃশ্য হৃদয় হতে রক্তক্ষরণ ঝরায় কেবল।

বিএনপি আমলে বোমা হামলা জঙ্গীবাদের সে এক তীর্থধাম বানাতে চেয়েছে বাংলাদেশটিকে। আজ সেসব তথ্য প্রমাণ উদঘাটিত হওয়া খুব জরুরি। যারা জড়িত সেদিনের গ্রেনেড হামলায় তাদের বিচারিক উচিত দন্ডাদেশ আজও কেন হলো না – প্রশ্নটি এসেই যায়। আমরা শান্তিপ্রিয় নাগরিকরা আর কোনও ষড়যন্ত্র / জঙ্গী হামলা দেখতে চাই না এইদেশে। কারও যেন শরীরে স্প্লিন্টারের জখম বয়ে বেড়াতে না হয় এদেশে আর। একটি শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ বিশ্বে নিজের অবস্থান রচুক যাতে কোনওদিন জঙ্গীবাদ সাহস না পায় আবার মাথাচাড়া দেবার। আজকের প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং সেদিনকার বিভীষিকার শিকার হতে-হতেই  বেঁচে গেছেন। তাঁর সরকারের আমলে গ্রেনেড হামলার বিচার না হলে আগামীদিনে আর হবার সম্ভাবনা দেখি না। আইনী জটিলতার দীর্ঘসূত্রীতা দুঃসহ এবঙ দুঃখজনক। আইনের উপর শ্রদ্ধাবোধ রাখতে চাই বলেই আজ সরকারের কাছে একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলায় জড়িতদের জরুরী বিচার কাজ দেখতে আগ্রহী আমরা। অপরাধিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হোক। এবঙ সমুচিত বিচারে দণ্ডাদেশ দেওয়া হোক। এটিই সময়ের একটি দাবি হিসেবে লেখা উচিত বলে আমার এই লেখাটি সেদিনের গ্রেনেড হামলার শিকার যাঁরা তাঁদের জন্য উতসর্গিত করলাম।

২০ শে আগস্ট। ২০১৫ সাল।
ঢাকা। বাংলাদেশ।