দীর্ঘ সময় চিকিৎসা জনিত চরম ক্লান্তি ঘুচায় গরম চা

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 1 Sept 2015, 04:58 PM
Updated : 1 Sept 2015, 04:58 PM

এমন এদেশে হরহামেশা ঘটে হসপিটালে, ক্লিনিকে, চিকিৎসাজনিত কারণে কয়েক ঘন্টা চরম বিরক্তিকর এবঙ অস্বস্তিকর কমবেশি সময় বসে থাকার অভিজ্ঞতা। অতঃপর সেই অভিজ্ঞতার ক্লান্তি সমেত ফেরা বাড়িতে। পথে জ্যামজনিত ততোধিক করুণ অভিজ্ঞতা। তো, এই করুণ অভিজ্ঞার ভিতর হাঁসফাঁস প্রহরে যদি হসপিটাল ক্যান্টিনে চা-কফি মেলে তখন একটু গরম চা অথবা পানীয় আশপাশের কোনও চা-কফির শপে গিয়েও বসে একটু পান করতে   পেলে ঝিমানি / ক্লান্তি খানিক ঘুচে।

আমার প্রায়শঃ এমন বসে থাকার তিতিবিরক্ত ঘটনা ঘটে। কারণ সপ্তাহান্তে আমার ক্লিনিকে যাওয়া পড়ে ও ঘন্টা কয়েক কাটে সেথায়। আসা-যাওয়া এবঙ পথের ধকল স্বল্প হলেও আমার ঝিমানি পায় বিষম। সেই সময়টুকু গরম চা পেলেই খানিকটা ঝিমানিমুক্ত হই। টি ব্যাগ মির্জাপুর / লিপটনের ঘ্রাণ আমাকে বড়ো জিয়নকাঠি হয়ে জাগিয়ে রাখে। যেন বা রূপকথার বাতির ঝলকানি আর কি ! তারিয়ে-তারিয়ে পান করার কালে অমন লাগে আমার। লোকে যা ভাবে ভাবুক, আমি আমার চা পানের চুমুকে-চুমুকে ঝিমানি মুক্তির ঝলকানিটা উপভোগ করতে থাকি। একটা নানরুটি পেলে তো সোনায় সোহাগা হয়। নানরুটির টুকরো গরম চায়ে চুবিয়ে খেতে দারুণ স্বাদ। আমার এই স্বভাবটির কারণে স্বামীর কাছে প্রচুর টিকাটিপ্পুনী খেয়েও খাই। বিদেশে গিয়ে যখন রেঁস্তোরাতে খুঁজতে যাই কোথায় নানরুটি আর চায়ের মেনু পাওয়া যাবে – স্বামীর বকাবাদ্য হজম করে হলেও সেটি আমার চাই।

নানরুটির ছবি আমার তোলা হয়নি বলে গরম চায়ের সনে গার্লিক ব্রেডের ছবিটি দিয়ে দিলাম। মন্দ লাগে না কিন্তু গরম চায়ে ডুবিয়ে গার্লিক ব্রেডও। আমার শ্বশুরবাড়ি পটিয়া থাকা কালীন শিখেছি গরম চায়ে ডুবিয়ে বেলা বিস্কুট / পরোটা খাওয়া। সেটিও দারুন লাগে আমার। যখন তরুণী কাল আমার কাটিয়েছি অনেক মাস শ্বশুরবাড়ি পটিয়ায় তখন জেঠি শ্বাশুড়িমাতা যাঁকে শ্বাশুড়ি হিসেবে পেয়েছি তাঁকে ডেকেছি "আম্মা", তিনি যে কি মজার মানুষ ছিলেন সেসব নিয়ে লিখতে গেলে ঢাউস স্মৃতি কাহিনী হবে। তো, আজ শুধু চায়ের একটি কাহিনী বলি – তখন বড়পুত্র মিশুক এক বছর পেরিয়েছে। আমার শ্বাশুড়ি শিখিয়েছেন চায়ে ডুবিয়ে বেলা বিস্কুট খাওয়া। সেদিন প্রায় বিকেল , মাত্র দুখানা বেলা বিস্কুট ঘরে, আমার শ্বাশুড়িমাতা নাতিকে অই দুখানা বিস্কুট সমেত বসিয়ে চায়ে ডুবিয়ে খেতে দিয়েছেন, তা নাতি মহানন্দে খানিক খেয়ে পিরিচে ফেলে রেখেছে। লোকজন ছিলোনা কেউ বাড়িতে। তখনই হঠাত অনাহুত অতিথি মামা শ্বশুড় এসে হাজির। পড়েছি বিপাকে আমি। কি দিয়ে আপ্যায়ন করবো তাঁকে? এদিকে শ্বাশুড়িমাতা পরম সমাদরে উনাকে বসিয়ে আলাপচারীতার ফাঁকে আমাকে ডেকে উনাকে চা খাওয়ানোর আদেশ দিয়েছেন। কি করি … ইশারায় শ্বাশুড়ি মাকে দিলাম ডাক … এলেন উঠে … ফিসফিসিয়ে বলি – "মিশুক খুটে খাওয়া বিস্কুট ছাড়া তো আর কিছুই নাই, কি দিয়ে উনাকে চা দিবো?" তিনি মোটেও ভাবিত না হয়ে অই খুটে খাওয়া বিস্কুট দুখানা ট্রে তে পিরিচে রাখলেন এবঙ চা টুকু গরম করে আনতে বললেন আমাকে। আমি আদেশ মতো গরম করলাম। শ্বাশুড়ি মাতা তখন গরম চা সমেত ট্রে নিজেই নিলেন , অতিথি কে দেখিয়ে গরম চায়ে খাওয়া বিস্কুট দুখানা ফেলে দিলেন এই বলতে-বলতে – "আজিয়া তুঁই ন' খাই ফেলাই যাইত ফাইত্যা ন' " !!! মানেটা এই – "আজকে তুমি না খেয়ে ফেলে যাইতে পারবা না " !! যেহেতু চা নিয়ে লিখছি – এই কাহিনী না লিখে পারলাম না। পাঠক, কেমন লাগলো – জানাবেন।

আর আমার বর্তমান চায়ের ছবিতে দেওয়া মেন্যু দেখতে পারেন একটু টেস্ট করেই – যারা আমার মতোন হসপিটালে অপেক্ষা করেন দীর্ঘ সময়। তারা হয়তো জানেন কি করে অই সময় ক্লান্তি ঘুচাতে উপায় কিছু না কিছু বের করতে হয়। এবঙ যারা আমার মতো চা প্রিয় উপরন্তু গরম চায়ে ডুবিয়ে নানরুটি খাওয়া ভালোবাসেন তাদের জন্য আমার আজ হঠাৎ করে লিখিত এই লেখাটি উৎসর্গ করছি …
যারা মোটেও ভালোবাসেন না তাদের জন্য পাঠকপ্রিয় কোনও মেনুর ছবি সমেত পোস্ট লিখবো আগামীতে ইনশাহ আল্লাহ বেঁচে থাকলে …

১লা সেপ্টেম্বর ২০১৫ সাল।
ঢাকা। বাংলাদেশ।