এদেশে পূজোর বাজনা শুনে আমরা বড় হয়েছি, জাত যায়নি

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 21 Oct 2015, 06:10 PM
Updated : 21 Oct 2015, 06:10 PM

জন্মাবধি এদেশে শারদীয়া ঢাকের বাদ্য, পূজোর গন্ধে আমরা বেড়ে উঠেছি, জাত যায়নি। সেই সেকালে কেউ এদেশে ভাঙচুর করেনি পূজো-মন্ডপ / দেবীর বেদিমূলে কুঠার চালায়নি ভুলেও। সেই সময় যদি সবার মন অপর ধর্মীয় খুশিতে বেজার না হয়ে পারতো , তাহলে আজ না পারার কারণটা কি? কি কারণে এদেশে আজ পূজো কে নিয়ে লিখলে অন্তরজ্বালায় পোড়ে অনেকে? লেখক কে অনবরত জাতপাত তুলেই খিস্তি-খেউড়মার্কা শতেক মন্তব্যে আমরা লজ্জিত হলেও, ওরা একদমই নির্লজ্জ একদল বেহায়া মানুষ নামের অমানুষ ! কেন যে ওরা অমন ! আজ আমরা টার্গেট হলেও , ওরা অবাধে অন্তর্জালের সুযোগে চষে বেড়ায় সামাজিক সাইট / অনলাইন মিডিয়া কিভাবে কে জানে !

বিস্ময়াহত , প্রশ্নবিদ্ধ হৃদয় … কেননা বাতাসে আজ পূজোর গন্ধ … ঢাকের বাদ্য শুনেই মন উড়ছে অমল ছেলেবেলায় … আমরা তখন দল বেঁধেই যত মুসলমান বন্ধুরা যেতাম হিন্দু সখীর বাড়ি। সেথায় পাত পেতেই বসতাম। খেতাম মজাসে ফুলকো লুচি, ছোলার ডালের ডালনা, আমড়ার অম্বল ও ক্ষীরের সন্দেশ, নারকেলের নাড়ু … আহাহা … ! আমাদের ঈদের দিনে ওরাও আমাদের পোলাও, কোরমা, সেমাই খেতো খুশিতে … কোথায় হারালো দিনগুলি? আমরা তখন সহজ খুব। কারও মনে অপর ধর্ম পালনে বিদ্বেষ ছিলো না মোটে। মুসলমান সহজ মনেই শারদীয়া পূজোর শুভেচ্ছা জানাতো হিন্দু বন্ধুদের। মুসলমান বন্ধুদের ঈদের শুভেচ্ছা জানাতো হিন্দু বন্ধুগণ।

অমল সেই দিনগুলিরে ফিরেও পাবো না জানি, তবুও শারদীয়া শুভকামনা এই – এদেশে অসাম্প্রদায়িক চেতনার সুদিন ফিরে আসুক … আমাদের শিশুরা হোক অমল হৃদয়বান মানুষ … ধর্মান্ধ না হোক কেউ … বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ হোক আগের মতোন – অমল – আমাদের সবার প্রিয় বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর, কবিগুরুর, নজরুলের, জীবনানন্দের, সুকান্তের বাংলাদেশ। এইদেশ অনেক সাধের বাংলাদেশ। সে কি "সাধ না মিটিলো আশা না পুরিলো"-র মতোন কেঁদে ফিরবে কেবলই পূজোর গন্ধে … ঢাকের বাদ্যে? না। আশাবাদী মানুষ এদেশের বাঙালি আজও … সহজে হার না মানা বাঙালি জাতি , সকল ধর্ম-মতের সনে মিলেমিশেই খুশি থাকতে জানে। তাহলে কতিপয় অমানুষ বা ধর্মান্ধতায় – বাংলাদেশের অধিকাংশ জনসাধারণের চাওয়া মার খাবে না এমন একটি আশাবাদ রাখতে চাই আগামী দিনের নতুন শিশুদের নিকট। আশাবাদ পূরণ হওয়া সহজ নয়, যদি না আজকের নতুন বাবা, নতুন মা তাদের শিশুকে শেখায় ধর্মবোধ বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা ধারণ করতে, শেখায় অপর ধর্মে বিরূপ বিদ্বেষ তাড়িত না হতে 'আপনি আচরি ধর্ম পরকে শেখাও' এমন শিক্ষা ব্যতীত কোনও জাতির ধর্মবোধ অসাম্প্রদায়িক চেতনা সমৃদ্ধ হয় না। বাঙালি জাতির সেই বোধটি সমৃদ্ধ একদা ছিলো বলেই আশা আজও – এদেশ আবার সেই অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ফিরবে অচিরেই। সকল হিন্দু বন্ধুদের জানাই শারদীয়া শুভকামনা, শুভেচ্ছা। শারদীয়ার আবাহনে জাগুক হৃদয় … জয় হোক শুভবোধের … জয়তু বাংলাদেশ।

এই বাংলাদেশ জয়ী হয়েছে বহু প্রতিকূলতার সনে চরম ষড়যন্ত্রের সনে শত্রুর সনে লড়াই করে। অনেক দুঃখদিনেও সাহসে এগিয়েছে। এদেশে বহু কালের সম্প্রীতির সুনাম রয়েছে জগতে। কার কারণে বিনষ্ট হবার পথে সেসব চমৎকার পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ? পূজোর আনন্দ দিনের অংশী আমরা। তাতে যায়নি, যায়না, যাবেনা জাত কোনও মুসলমানের। যদি যেতোই বিশ্বের তাবত রাষ্ট্রনায়কদের জাত সবার আগে যাবার কথা, সকল ধর্ম-মতের মূল্য হৃদয়ে ধারণ করার ক্ষমতা হৃদয়বানেরই কেবল থাকে। কোনও ধর্মান্ধের থাকে না ক্ষমতা – হৃদয়বান হওয়ার। বাংলাদেশের বাঙালি অবশ্যই হৃদয়বান হিসেবে জগতে সমাদৃত হয়েছে, হবে আগামীতেও। তাই হৃদয় দিয়ে বারংবার 'জয়তু বাংলাদেশ' বলে জানাই শুভেচ্ছা, শুভকামনা আবারও সকল হিন্দু বন্ধুদের শারদীয়া পূজোর উৎসবে। পয়সা লাগেনা শুভকামনা, শুভেচ্ছা জানাতে।


কার্তিক। ১৪২২ বঙ্গাব্দ।
ঢাকা। বাংলাদেশ।