হিজরি সালের প্রথম মাস মহররম ও কারবালার বিষাদ সিন্ধু

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 23 Oct 2015, 08:12 PM
Updated : 23 Oct 2015, 08:12 PM

সাধারণ মুসলমান মহররম মাসের দশ তারিখ পবিত্র আশুরা মানে। পালন করে। মহররমের মানে পবিত্রতা। আর 'আশুরা' শব্দটি হিজরি দশ তারিখ, আরবি 'আশারা' শব্দ হতেই নামকরণ হয়েছে। এ মাসের দশ তারিখটিতে আল্লাহ বিশেষ নেয়ামতপূর্ণ হিসেবে বিভিন্নভাবে অনেক মহতি ঘটনাবলী ঘটিয়ে মুসলমানদের শিক্ষা নেবার দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। হিজরি ৬১ সালে মহররমের দশ তারিখে কারবালার ফোরাত নদী তীরে সংঘটিত মোনাফেক ইয়াজিদের সনে নবীজি (সাঃ আঃ) এর পরম প্রিয় নাতি হোসেন (রাঃ)-র অনুসারীদের অসম যুদ্ধটি হোসেন (রাঃ)-র একটি অসীম সাহসী সিদ্ধান্ত। অন্যায়ের নীতিতে কিছুতে নতি স্বীকার না করে সাহস অর্জনের সে এক অনুকরণীয় আদর্শ মানব হোসেন (রাঃ)। অনুসারী ও পরিবারের সবার একে-একে পানীয়, খাদ্যের অভাবে করুণ মরণ সত্বেও হার না মানা হোসেন (রাঃ)-র ঐতিহাসিক ত্যাগের কাহিনী কারবালা।

ঐতিহাসিক করুণ এই কাহিনী নিয়ে রচিত কাজী নজরুলের "মোহররম" কবিতাখানি পাঠ করলে কাঁদন আসে না এমন পাষাণ কে আছে জগতে? মীর মোশাররফের "বিষাদ সিন্ধু" ঢাউস সাইজের সুবিখ্যাত উপন্যাসের একটি পর্বে মহররমের বিষাদিত কাহিনী পাঠেও কাঁদতে হয়। কতবার যে পড়েছি আর কেঁদেছি অই মহররমের পর্বটি পড়ে হিসেব নেই।

এমন একটি ঐতিহাসিক শিক্ষণীয় ত্যাগের বিষয়টিকে অযথা "হায় হোসেন – হায় হোসেন" করে মাতম করবার কথাটি শিক্ষা দেয় না ইসলাম ধর্ম। আদতে এটি মহতি ত্যাগ শেখায়। মানুষকে কঠিনতম অন্যায়-অসম যুদ্ধে সাহসী ভূমিকা রেখে মোকাবিলার সংযম শেখায়। তাই তাজিয়া সাজায়ে এবঙ তরবারি সমেত হুংকারে চারপাশকে সন্ত্রস্ত করেই ঘোড়া ছুটিয়ে বুক কিলিয়ে রক্তরঙ ছিটিয়ে মুহররম মাসের "আশুরা" পালন করা মোটেও কর্তব্য না কোনও মুসলমানের। তার চাইতে মুহররমের স্মরণে আত্মসংযম রূপে "আশুরা" পালনে দুইটি রোজা রাখাও উত্তম অনেক। কারবালার ঐতিহাসিক করুণ কাহিনী ছেলেমেয়েদের সঠিকভাবে জানানো, শেখানো উত্তম অনেক। আদতে শিয়াগণের দ্বারা এদেশে আশুরাতে তাজিয়া সাজিয়ে মাতম করা নিয়মে দাঁড়িয়েছে। যা ইসলামে নেই। নবীজি (সাঃ আঃ)-এর অনুসারীরা সুন্নী মুসলমান এই মাতমে বিশ্বাসী নয়। আদতে শান্তির ধর্ম ইসলামে অযথা বাড়াবাড়ি করাটি নেই। অথচ সেটিই এখন চারপাশ কাঁপিয়ে পালনের নিয়ম কারা চাপায়? যাতে বুকের চাপড়ানিতে মাতম করে শাদা রঙের শার্ট ছিঁড়ে রক্তরঙে রাঙিয়ে শিশুকে ভয় দেখিয়ে পাড়া কাঁপিয়ে ছুটে যাবার খেলা দেখতে বহু জনের ভালো লাগতে পারে , যদিও এটি সঠিক ইসলামের শিক্ষা মোটেও নয়। ওদের থামাবে কে? জানিনা, জগতের মুসলমান প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা নেবে কি নেবে না , আমার ধর্মশিক্ষা তত বিশাল নয় বলেই আমি অযথা তর্কে রাজী না। শুধু একটি পবিত্রতা বিষয়ে নিজের শেখাটি লিখলাম – আগামী কাল মহররমের দশ তারিখ "আশুরা" পালিত হবে বলেই।

কাজী নজরুলের "মুহররম" কবিতাটির পুরোটাই আমার মা মুখস্ত দারুণ করে আমাদেরকে শোনাতেন চিকন সুরে … আমরা শুনে সবাই কাঁদতাম … মাতম নয়, নিঃশব্দে … আশুরা এলে আমার মায়ের চিকন সুরে কবিতাটির দুইটি লাইন আমি মনেমনেই আউড়াই – এবঙ কাঁদি। শরীরে কুলোলে রোজাও রাখি। ইফতারের পর মাগরিবের নামাজের মুনাজাতের সময় কারবালায় শহীদ সকলের রুহের মাগফিরাত কামনা করি। লেখার শেষে আমার প্রিয় কবিতাটির অই দুইটি লাইন দিয়েই শেষ টানছি –

"ফিরে এলো আজ সেই মোহররম মাহিনা
ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাহিনা"।।

৯-ই মোহররম। ১৪৩৭ হিজরী।
কার্তিক। ১৪২২ বঙ্গাব্দ।

ঢাকা। বাংলাদেশ।