প্রজাপতিটা জানি না কি করে ঢুকে পড়েছে গ্রিলের গরাদে … ছটফটে ডানার জোর ফুরিয়ে গেছে বলেই তারে অনেক তাড়াতে চেয়েও আমি না পেরে পানি ছিটিয়ে পান করাতে চেয়েছি কিছুটা জল। এবঙ মায়াবী প্রজাপতির গরাদবন্দী ছবিও ক্লিক করেছি। অবশেষে নিজের হাতের তালুতে সাবধানে উঠিয়ে নিয়ে বাতাসে উড়িয়ে দিয়েছি। সে বেশিদূর উড়তে পারবে তো? ডানায় জোর নেই যে তার … তাই বাতাসেরও মন খারাপ?
আমার মন খারাপ আজ। কারণ আমার ক্ষমতা কম। সীমিত গন্ডীবন্দী জীবন। গড্ডল একরকম। সমাজের অনেক অবিচার অনেক বিবেকহীনতা ক্ষুব্ধ প্রতিনিয়ত করে। অথচ সামাজিক মানুষ বিবেচক হয়েও কিছু তেমন করতে পারি না। যদি থাকতো তেমন ক্ষমতা তবে হয়তো সমাজের অবিবেচক যত অবিচারিক অক্ষমতা শোধনাগারে পাঠাতাম।
প্রজাপতিটা উড়িয়ে বাতাসে তার ডানার কমজোরের বিষয় নিয়ে ভাবিত মনে টিভির ব্রেকিং নিউজে দেখি – অই যে ঐশী নামের হতভাগিনী – তার অপরাধের দণ্ডাদেশ হয়েছে আজ। বিচারে রায় হয়েছে বন্দী ঐশীর ফাঁসির। তাতে অনেকে সন্তোষ প্রকাশ করছে – "উচিত হয়েছে" বলে। আমার মন মানে না কেন? আমিও একজন মা বলে মন আমার হতভাগিনী মেয়েটিরই জন্য ব্যথিত? কেন হবো না আমি ব্যথিত? একজন অভিভাবক এবঙ মা বলে মন বলছে – একটি উঠতি বয়েসী মেয়ের দায়ভার মায়ের এবঙ বাবার দুজনার। তাহলে ঐশী কি করে কুপথে … কুসংসর্গে চরম বখে যাওয়া মেয়ে হয়েছে বাবার টাকার জোরে … সে দোষ কেন বাবার নয়? মায়ের নয়? মেয়েটি রোজ কাদের সনে মিশছে … টাকা উড়িয়ে মিছে বলছে … মায়ের অজানা একদম এমন মানা যায় কি? বখে যাওয়া মেয়ের চরম দশা মায়ের / বাবার নজরে পড়েনি? একটিবার কোনও সংশোধন কেন্দ্রে উনারা কন্যাকে পাঠাতে কেন পারলেন না? আজ তাহলে ঐশী নিজের মা-বাবা কে খুনের দায়ে ফাঁসির আসামী হতো কি?
আমি বেদনাহত ঐশীর ফাঁসির রায়ে। আমার ক্ষমতা থাকলে আমি শোধনাগারে পাঠাতাম সমাজটাকে। ডানাহীন হলেও আমার হৃদয় ঐশীর ডানাহীনতা খুব করেই অনুভব করতে পেরে নিজের অক্ষমতায় ব্যথিতচিত্তে হতভাগীনীর প্রয়াত মায়ের, বাবার অশরীরী আত্মা অনুাধাবন করে আকুল বাতাসে-বাতাসে মন খারাপ দেখি … যেন বা রক্তাক্তচিত্তে কাঁদছে মায়ের, বাবার আত্মা খুব … বুঝতে পারছি যেন … আমার মাতৃহৃদয় ব্যাকুল হাহাকার করছে তাই । বিধাতা কারও কপাল লিখন এমন না করুন জগতে আর … রোদন সামলে ওড়নাঢাকা ঐশীর মুখটি দেখি … হতভাগিনী ঐশীর মনের ভাষা শুভকামনা দিয়ে ঢাকতে চাই … ফাঁসির পরে সে যেন সবার ক্ষমায় থাকে …… শুভকামনা এই।
১২-ই নভেম্বর। ২০১৫ সাল।
ঢাকা। বাংলাদেশ।