সে কোন অজানা পথের ডাক …

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 26 Jan 2016, 05:05 PM
Updated : 26 Jan 2016, 05:05 PM

মাঝেমাঝে আমাদেরই চার দেয়ালবদ্ধ ঘর কে ছেড়ে ঠিকানাহীন যাত্রায় হৃদয় হয় ধাবিত। গন্তব্যহীন কোনও যাত্রা যেন বা ডাক পাঠায়। রেললাইনের একলা এ ছবিটি তারই কথা বলছে যেন। বিষম মন কেমন করে এমন ছবি যখন দেখি। কত কি অজানিত, অনিশ্চিত পথের ডাক শুনতে পাই। যেন বা এখনই আসবে তীব্র হুইসেলের সিটি বাজাতে-বাজাতে গমগমিয়ে লম্বা বাঁকানো ট্রেন। অমনি তড়িঘড়ি চড়বো তাতে। ঠিকানাবিহীন সে এক যাত্রার শুরুটা ভাবি কেবল। দিকচিহ্নহীন শেষের পথরেখা পাই না আর। কোথাও সে ট্রেন না থামে যদি? অফুর সে যাত্রা আমার … কোথায় হারাবো কেউ জানে না। মন? না সেও ভাবিত নয়তো তত। বেশ তো যেন অসীম যাত্রার দুলুনি ক্ষুধা, তৃষ্ণাহীন। জগতবাড়ির মায়াবী হাতছানি রইবে পড়ে পেছনে। ম্লানমুখ আপনজনের গভীর মুখ অবচেতনে খচখচে বেদনা জাগিয়ে আবার তিরহিত। শতেক অপসৃয়মান জীবনেরই হল্লামুখর ছবিরা কম্পমান যবনিকার মতোন আসবে, যাবে চলার কি এক মধুর ছন্দিত-নন্দিত পথে। পথের ঠিকানা আপনা হতে হয়তো এসে থামবে এক সময় হঠাৎ ঝাঁকুনি দিয়ে। সুবিস্ময়ে হতবিহ্বল পড়বো নেমে সেথায়। অজানা সে কোন ইস্টিশন জানি না নাম … জানবো ধীরে … যখন আরেক জীবন শুরু – জীবন সায়াহ্নের একদমই শেষ মাথায় চুপিসারে ঘনায়মান অন্য জীবন।

এমন একখানা সিনেমা দেখেছিলাম এইতো কিছুমাস আগেই – "সুতপার ঠিকানা"। সুতপা নারীটি একদিন দারুণ চঞ্চলা কিশোরী ছিলো। খেলতো বনেবাদাড়ে, নদীর ধারে। মায়ের বকুনী না খেলে ফিরতো না ঘরে। মা ধরে এনে হাত-পা ধুইয়ে চুল না বাঁধলে হতো না ঠিকঠাক। হঠাৎ সেই সুতপার-ই বিয়ে দেওয়া "উঠ ছুঁড়ি তোর বিহা লাগাইছে"। কারণ সুপাত্র পাওয়া গেছে। শহুরে ভালো চাকুরীজীবী। সুতপা শহুরে জীবনে পড়লো ঢুকে। মা হলো। হঠাৎ স্কুলে পড়ুয়া ছেলে নিয়েই স্বামীর অকাল মৃত্যুতে বিধবা হলো। ছাড়তে হলো সরকারী কোয়ার্টার। ভায়ের বাড়িতে উদ্বাস্তু জীবন। ছেলেকে মানুষ করা। অনেক কষ্টে ছেলের মাস্টার্স, চাকুরী হলো। ভালোবাসলো বেশ বড়লোকের কন্যারে। বাণিজ্য করার খেয়ালে বাবার জমিবিক্রি করলো। এ্যাপার্টমেন্ট কিনলো। বউ আনলো। শ্বাশুড়ি অভিভাবক হলো। মায়ের আত্মসন্মান সূক্ষ্মচালে অপমানিত হতে লাগলো। একদিন সুতপা নামের নারীটি মধ্য বয়সে ছেলেগৃহ করলো ত্যাগ সবার অজান্তে। উঠলো ট্রেনে। সে এক গন্তব্যহীন ঠিকানা পথে পা রাখলো। সব যাত্রীর নামার পরে একদমই অচেনা একটি সর্বশেষ ইস্টশনে নেমে পড়লো। সেখানে ঠিকানা হবে সুতপার? জানি না।

জানুয়ারি। ২০১৬ সাল।
ঢাকা। বাংলাদেশ।