একটি ঐতিহাসিক ভাষণ, একটি স্বাধীনতার জন্ম

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 6 March 2012, 05:53 PM
Updated : 6 March 2012, 05:53 PM

বাংলাদেশ সময় রাত বারোটায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা-র ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। ১৯৭১ এ এই দিনে সাড়ে সাত কোটি জনতার প্রাণপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অধীর আগ্রহে অপেক্ষমান জাতির জন্য বজ্রকন্ঠে ঘোষণা করেন কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার বাণী, কবি নির্মলেন্দু গুণ তাকেই বলেছেন আমাদের স্বাধীনতার অমর কবিতাখানি। হ্যাঁ, যদি কবিতার অধিক উচ্চারণযোগ্য কোনও বাণী জগতে থেকে থাকে তবে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বাংলার মুক্তিকামী মানুষের জন্য তারও অধিক দামী। একটি নির্যাতিত জাতির মুক্তির দাবীর পক্ষে এর চেয়ে স্বপ্নময় উচ্চারণ আর কি হতে পারে ! না, সেদিন তার বেশি চাওয়া বাংলার মানুষের ছিলোইনা, যা মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর পক্ষেই কেবল সম্ভব ছিলো, এবঙ তিনি তাই করেছেন। শোনামাত্র জাতির বুক ভরে উঠেছিলো গর্বে। অতঃপর বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য আর কোনও নির্দেশ আর কোনও ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করেনি জাতি। সেদিন থেকেই চলেছে নেতার নির্দেশে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি।

একটি শৃঙ্খলিত জাতির জন্য জীবনভর জেল-জুলুম-মৃত্যুর ঝুঁকি অগ্রাহ্য করে সংগ্রামে-ত্যাগে-নেতৃত্বে যিনি জাতিকে শৃঙ্খল মুক্তির চেতনায় জাগিয়ে তুলেছেন, ৭ মার্চ পশ্চিমা শাসকজান্তার রক্তচক্ষুর বিন্দুমাত্র পরোয়া না করেই নিজের হৃদয়-বিবেকজাত তাড়নায় টানা ১৭ মিনিট জনসমুদ্রের মাঝে পিনপতন মন্ত্রপুতঃ আবহজালে বজ্রকন্ঠের যাদুতে শুনিয়েছেন –
"এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম অামাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।" এরচে' জাগ্রত-জ্বলন্ত ঐতিহাসিক সত্য বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কি হতে পারে !! অথচ দুঃখজনকভাবে সত্য যে এমন ঐতিহাসিক সত্য নিয়েও আজ কিছু বোদ্ধা-জ্ঞানপাপীরা বহুবিধ বিবৃতি-ধ্যান-ধারণার জন্ম দিয়েই যাচ্ছেন, অযথাই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ একজন বাঙালি নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াসমত্ত এঁদের জন্য দুঃখিত হওয়া ছাড়া আর কি করা যায় তাও আজ খুব করেই ভাববার বিষয় মনে হয়। এমনও কেউ-কেউ বলছেন যে সেদিন ভাষণ এর শেষাংশে নাকি বঙ্গবন্ধু ' জিয়ে পাকিস্তান / পাকিস্তান জিন্দাবাদ ' জাতীয় উচ্চারণ করেছিলেন !!! কে বা কাদের দ্বারা তা নাকি মুছে দেয়া হয়েছে !!! আজ আমার প্রশ্ন এমন করে বঙ্গবন্ধুর মতো মহান নেতার নেতৃত্ব কি কালিমালিপ্ত করা যায়! তাছাড়া আজ যখন স্বাধীনতার চল্লিশ-চল্লিশ বর্ষ পার করে জনদাবীর প্রেক্ষিতেই চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীর হাতে হাতকড়া, তারা আজ বিচারিক প্রক্রিয়ায় কাঠগড়ায়, এমন একটি জাতীয় যুগান্তকরী কালের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আমাদের কি কিছুতেই জাতি / প্রজন্ম বিভ্রান্তিতে পড়ে এমন ভূমিকায় যাওয়া ভালো কি? আমার মনে হয় – না, ভালোনা, ভালোনা, এই সময় অযথা এমন বিতর্কের জন্ম দেওয়া কিছুতেই ভালোনা। বাংলাদেশের জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের জাতীয় গৌরবের একটি মহান অধ্যায়। তাঁকে সকল বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখাই আমাদের জাতীয় দায় মনে করি। আজ আমার একান্ত প্রার্থনা আমাদের জাতিগত শুভ বোধের জয় হউক।

সবশেষে, ঐতিহাসিক দিবসটির প্রতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসেবে সদ্য লেখা আমার পঙক্তিমালা নিবেদন করছি –

বিদগ্ধ প্রজন্ম জানো –
আজও জ্বলন্ত আমাদের ইতিহাসকাল।
আজকের চাপাবাজ দল-উপদলের অস্তিত্ত্বই ছিলোনা তখন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
জাতির কান্ডারি তখন।
১৯৭১ এর ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্সের ময়দান গণজোয়ারে উত্তাল।

অবশেষে এলেন মহান নেতা
বেজে উঠলো মহান বজ্রকন্ঠস্বর –
ভায়েরা আমার
এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।
মন্ত্রমুগ্ধ জনতা শুনলো অনন্য মুক্তির গান।
যে গানে জেগেছে
সাড়ে সাত কোটি বাঙালির প্রাণ।

এইদেশে এই ঘোষণার পর
স্বাধীনতা ও মুক্তির লক্ষ্যে জয়বাংলা জয়োধ্বনিতে মুখর
বাংলার প্রতিটি ঘর
যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছে
প্রতিটি যোদ্ধার অন্তর।

গোটা দেশ নেতার নির্দেশে
অসহযোগের দেশ।
স্কুল-কলেজ-অফিস-আদালতে তালা, পশ্চিমা-জান্তার দিন শেষ।
২৫ মার্চ ভয়াল জান্তব আক্রমণে
ধর্ষিত বাংলা জ্বলে-পুড়ে
জখমিত মৃত্যুপুরী থেকেও ঠিকই
দাঁড়িয়েছে ঘুরে।

পড়শি দিয়েছে ঠাঁই
আর ক্রমে বাংলাদেশের তরে তাই
গড়ে উঠেছিলো বিশ্ব জনমত।
এভাবেই একদিন রক্তাক্ত বাংলায় বিজয়ের পতাকা উড়েছে পতপত।

এভাবেই একটি ভাষণ জন্ম দিয়েছে একটি দেশ। বাংলাদেশ।
জয়বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু। জয় বাংলাদেশ।

৭ মার্চ ২০১৪ ইং