যে জীবন জানেনা কিসে তার সান্ত্বনা

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 18 March 2012, 03:25 AM
Updated : 18 March 2012, 03:25 AM

এমন কোনও দিনের কথা আদতে আজ ভাবাও যেন বড় দায় যেদিন পত্রিকার পাতায় শিশু-কিশোরী-নারী নির্যাতন / খুনের বার্তা নেই ! সকালে মন ভালো হওয়া বার্তার বদলে মনভার শুধু নয় যাতনার শিকার হতে হয় রোজের নিত্য এক মর্মপীড়াদায়ক শিশু-কিশোরী-নারী নির্যাতন / খুনের ভয়ঙ্কর খবর পড়ে। এমনও হয় ভালো করে পড়াও অসম্ভব হয়ে ওঠে ! কেবলই মনে হয় কি ভয়ঙ্কর ! মানুষ কি করে এমন পারে ! মানুষ তারা নিশ্চয় নয়। মানুষ নামের নরপশুরও অধম তারা। মনে হয় আহ ওই শিশুটি ওই কিশোরী ওই নারী সেতো হতেই পারতো আমারই শিশু / কন্যা / মা ! আহ পাঁজর জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে বটে কিন্তু নিঃশব্দেই ! নইলেতো হাড়ের ভাঙন বাঁচাতে তক্ষুনি আমার করনীয় হোত ক্ষতিগ্রস্তের পাশে ছুটে গিয়ে তাকে প্রতিবাদে ফেটে পড়তে সহায়ক যা-যা দরকার তার যোগান দেয়া। অথচ কই তেমন কিছুইতো আমি করিনা আদৌ।

তবে কি আমারও মনুষত্বে ঘাটতি আছে ! ভেবে স্তব্ধ বেদনা সয়ে যাই দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী। সমাধান আমার হাতে নেই জেনেও যন্ত্রনাকাতর সময়েয় হাত থেকে নিস্তার মেলেনা। জানিনা কবে কোনদিন এমন সকাল আসবে যেদিন কোথাও শিশু-কিশোরী-নারী নির্যাতনের মর্মন্তুদ বার্তা ছাপা হবেনা ! আমারও অন্তত একটি সকাল যাবে যন্ত্রণাহীন।

আজ আমার মনে আসছে সদ্য সংবাদ নয় অনেক আগের পঠিত এক বর্বর শিশু ধর্ষণ+খুন এর বার্তা , যা পড়ে বহুদিন আমার নির্ঘুম কেটেছে। অবশেষে একটি কবিতা লেখার প্রয়াসের মধ্য দিয়ে যন্ত্রণা থেকে নিস্তার পেতে চেষ্টামাত্র করেছি , আজ আমার সেই কবিতাটি শেয়ার করছি।

শিরোনামঃ শাস্তির জন্য এই কবিতা

গল্প না কাব্য না ঘটনাটি
হৃদয় রক্তাক্ত করা।
এলাকা চিকনছড়া।
গ্রাম ফটিকছড়ি , চট্টলা।
শিশু শারমীন।
সরকারী প্রাথমিক স্কুল , প্রথম শ্রেণী।
বাবা মনির হোসেন। চাকরী প্রবাসে।
শারমিন মা ও দাদীর তত্ত্বাবধানে।

ঝলোমলো জুন মাস।
শারমীনের বায়না খিচুড়ির।
ঘরে তেল বাড়ন্ত , তো , দাদী পাঠালেন
পাড়ার দোকানে।

একঘড়ি , দুইঘড়ি
শারমিন কই , শারমিন কই
দাদীর কলিজা কাঁপে। পাড়াময় হইচই।
ঘড়ি-ঘড়ি পার।

অবশেষে মেলে পরিত্যক্ত ঝিলে
রক্তাক্ত নিথর শিশুটিরে।

প্রতিবেশি নরপশু মীর হোসেন ধর্ষণ শেষে
চোখ সুদ্ধো খুবলে নিয়েছে।

কি বিচারে জীবনের মিলবে সান্ত্বনা
জীবন জানেনা , জীবন জানেনা।

আমি ভাবি আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ এমন ছিলোনা
আহ আমাদের প্রিয় দেশ এমন ছিলোনা।
আজ যারা তারে এমন করেছে
আজ অই নরপশুদের শাস্তি চাই।

নিশ্চয় আমরা চাই
বাংলার যে কোনও ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য
তার লিঙ্গ কাটা হোক।
তার চোখ খুলে নেয়া হোক।

( নুরুন্নাহার শিরীন এর নির্বাচিত দেশজ কবিতাঃ পৃষ্ঠাঃ ৬২ )

এমন শব্দ অন্ততঃ উচ্চারণ / লেখার মধ্য দিয়ে যতকিঞ্চিত প্রতিবাদের প্রয়াস চালিয়েছি। বন্ধু ও পাঠক আসুন এমন অপরাধীদের এমনই শাস্তির বিধানের জন্য জোর দাবী তুলি যাতে নরপশুরা নিজেদের রক্ষার্থে হলেও সংযত মানুষ হবার ব্রতী হয়।