চৈত্রের প্রথম ভাগেই ঝড়-জলে ভেজা সন্ধে এবঙ

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 18 March 2012, 10:36 AM
Updated : 18 March 2012, 10:36 AM

বলা নেই কওয়া নেই আচমকাই চৈত্রের ঝড়ো জানান পাওয়া হলো। আকাশ জুড়ে কালো মেঘের হানা পড়লো গত সন্ধ্যায়। সঙ্গে বৈশাখি ঝড়ের বিদগ্ধ আলামত। এ যেন আগাম জানান প্রকৃতির যে রুদ্র আমি আসছি …. অবশ্য সন্ধেটা বেশ অন্যরকম স্বস্তি-অস্বস্তি দুয়েরই মিশ্রজালে ঢেকে দিয়েছিলো কাল ঢাকার আকাশ। ঢাকার বাইরেও নাকি প্রায় সারা দেশেই দমকা ঝড়জলের বার্তা পাওয়া গেছে। তো, স্বস্তি এই যে বেশ একটু গুমোট-ভ্যাপসা দিন যাচ্ছিলো গত ক'দিন। তাই আগাম বৈশাখি প্রকৃতি তাকে বেশ জোরালো বাতাসে-বর্ষনে শান্ত করেছে। মানে ভালোই ধুয়ে দিয়েছে ভ্যাপসা-গুমোট দিনের আকাশ। ঘরেও বিদ্যুতহীন হয়েও টের পাওয়া যাচ্ছিলো যথেষ্ট ঠান্ডা-ভেজা আবহ। অস্বস্তির যা তা এই , আহা , ঘরহীন-ছাতহীন মানুষগুলোর নিশ্চয় অনেকটা মড়ার 'পরে খাড়ার ঘা এর মতোই দুর্গতির অবর্ণনীয় অবস্থার শিকার !

কিন্তু আজ সকালে চিলতে বারান্দা সূর্যালোকে হেসে উঠলে আমিও অবাঙ-মুগ্ধ দেখি ঝড়জলে ধোয়া সবুজ পাতার আশ্চর্য সুন্দরের ঝিলিক। হয়তো এমন সুন্দরের জন্যই শক্তি চট্টোপাধ্যায় লিখে গেছেন তাঁর অসামান্য পঙক্তিঃ

সুন্দরের হাত দুটি বেঁধে দাও
সময় হয়েছে।

আর আমি চিলতে বারান্দার আলোয় ভেসে যেতে-যেতে অন্তর্গত শব্দাকাশের হাতছানি শুনি , শুনি আর লিখতে চাইঃ

আহ সুন্দর সে থাক অধরা ছায়ায় মায়াবী একাকী
কাল যেন না বাঁধে তাহার আঁখি।
কাল যেন আবারও সে হয় অচিন পাখি
বারবার যেন বারান্দার রেলিং এ সুন্দরের আয়োজন দেখি।

এ দ্যাখা আদতে এমন ছোট এক জীবনে দেখে-দেখে অদ্যাখায় অন্যজীবনপানে ক্রমশঃই অপসৃয়মান ছায়াটির / মায়াটির মতোই। তার কোনও সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। তার কোনও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণেরও প্রয়োজন নেই। অপ্রয়োজনহীন সে আসে। সে যায়ও। কেবল রেখে যায় তার চিরন্তনী। তার মানে খোঁজার আদতেই কোনও মানে নেই। কেবল হয়তো বা ফ্রেমবন্দী করে রেখে যাওয়া যায় আর কারও তরে !

এইসব ভাবনাজাল ভেদ করে আচমকা দুলে ওঠে জগতবাড়ি ! আঁতকে উঠি ঘটনার আকস্মিক ধাক্কায়। খানিক ধাতস্থ হয়ে টের পাই ঢাকায় ভূকম্পন হচ্ছে। রিখটার স্কেলে মাত্রা কত তাতো আর তাতক্ষণিক জানা সম্ভব না , টিভিনিউজে শুনবো একটু পরেই। আমার আতঙ্কের প্রধান কারণটি ঢাকার ওভার-লোডেড হাইরাইজ ভবন আর অপরিকল্পিত বসতি এবঙ পুরান ঢাকার অগণিত ঝুঁকিময় বসতি নিয়ে। কত যে পরিকল্পনা আর প্রকল্প প্লান এর কথা শুনি খবরে …. কিন্তু তার অগ্রগতির নমুনা কি পাই ! পাইনা। এ যেন পরিকল্পনার পরী উড়ে যাওয়া নিতান্ত ফাইলবন্দী কল্পনাটুকু পড়ে থাকা ! বড়সড় ধস নামার আগে টনক নড়বেনা। যদি বা নড়েও হয়তো তখন নিজের বাঁচারও উপায় থাকবেনা।

এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সুদৃষ্টি অতীব জরুরী। তা নইলে আমাদের যত সুন্দর অচিরেই তার সলিল সমাধির পদধ্বনি এগিয়ে আসবে দ্রততম সময়ের হাত ধরে। ছুটন্ত সে ধেয়ে আসছে বলেই মনে হয়। প্রার্থনাঃ আমার আশঙ্কা অমূলক প্রমাণ করে সরকারী সকল জরুরী পরিকল্পনার ঊড়ে যাওয়া পরী ফিরে আসুক ঘরে। বাসা বাঁধুক ঢাকা নগরীর বুকে।

৪ চৈত্র ১৪১৮ সাল