আজ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস ও বাংলাদেশ এর অর্জন

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 24 March 2012, 10:45 AM
Updated : 24 March 2012, 10:45 AM

আজ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। সারা বিশ্বসহ বাংলাদেশেও দিবসটি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই পালিত হচ্ছে। এই দিবসে আজকের প্রতিপাদ্যঃ যতদিন বাঁচবো যক্ষ্মাকে রুখবো। বিশেষজ্ঞ রিপোর্টে প্রকাশ আজও বিশ্বে প্রতিবছর ৮৮ লক্ষেরও অধিক যক্ষ্মায় আক্রান্ত হচ্ছে। এবং ১৪ লক্ষের মৃত্যু হচ্ছে অসচেতনতা / অবহেলা / সময়ে সঠিক চিকিতসা না নেয়ার জন্য। যক্ষ্মাক্রান্ত মানুষের ৪০ শতাংশের বাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। যার মধ্যে কিছু বছর আগেও বাংলাদেশের অবস্থান ছিলো মারাত্মক হুমকিতে। কিন্তু আজ আর সেই অবস্থানে নেই বাংলাদেশ। বিগত কয়েক বছরে বিশেষত বর্তমান সরকার এর বিশেষ উদ্যোগেই ব্যাপক প্রচারের কারণে দেশব্যপী যক্ষ্মা সম্পর্কে জনসচেতনতা বেড়েছে। ফলে মানুষ সময়ে সঠিক চিকিতসা নিতে নিকটস্থ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যাচ্ছে। প্রায় বিনামূল্যে যক্ষ্মা রোগের টেস্ট ও রোগ-শনাক্তের পরে রোগের পর্যায়ভেদে ৬ মাস / ৯ মাস / ১২ মাসের কোর্স করে আরোগ্যলাভ করছে যক্ষ্মাক্রান্ত মানুষ। ২০১১ সালে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর সাফল্য হিসেবেই যক্ষ্মার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান থেকে ঝুঁকিমুক্ত অবস্থানে আজ বাংলাদেশ। যে জন্য অর্জন করেছে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব বান কি মুন এর অভিনন্দন। জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব বান কি মুন যক্ষ্মা প্রতিরোধে বাংলাদেশের এই অভূত সাফল্য অর্জিত হওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-কে অভিনন্দন জানিয়েছেন। নিঃসন্দেহে এ এক জয়বার্তা। আজ আমাদেরও অভিনন্দন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী-কে।

এইতো অল্পকাল আগেও লোকে কারও যক্ষ্মা হয়েছে জেনে আঁতকে উঠতো। ভাবতো হায় তার আর রক্ষা নাই। এমন কি যক্ষ্মা থেকে বাঁচতে আক্রান্ত রোগীর কাছ থেকে শতহাত না কেবল যত দূরে সরে থাকা যায় তা-ই করতো। এমন কুসংস্কার কবলিত সমাজই ছিলো একদিন। যার জন্য যক্ষ্মা রোগীর সময়ের চিকিতসাটি হতোই না। আক্রান্ত রোগীও সহজে রোগের কথাটি প্রিয়জনের কাছেও জানাতে অনেক দেরী করে ফেলতো। সরকারি-বেসরকারি জনসচেতনতামূলক কর্মসূচীও তেমন ছিলোইনা তখন। তো, যা হবার তা-ই হতো। অকালে অসচেতনতা-হেলায় খসে পড়তো প্রাণ। আজ আর অবস্থা তেমন না। আজ মানুষ বোঝে যক্ষ্মা মানেই মৃত্যু না। যক্ষ্মা মানেই অচ্ছুত ছোঁয়াছুঁয়ি বাঁচিয়ে দূরে সরে থাকা না। যক্ষ্মা রুগীর পাশে বসা মানেই রোগাক্রান্ত হওয়া না। বরঞ্চ একজন যক্ষ্মা রোগাক্রান্তের পাশে বসে হাত বাড়িয়ে দেয়াই মানবধর্ম।

আশার কথাটি এই যে আজ বাংলাদেশের মানুষ ধীরে হলেও অর্জন করছে কুসংস্কারমুক্তির মানবিক বোধ। আজ আমার অই বোধের সন্মানার্থে নিবেদিত সামান্য পঙক্তিঃ

এ কোনও অচ্ছুত না এ কোনও দূরারোগ্য ব্যাধিও না
যে তার পাশেও বসা যাবেনা , ছোঁয়াও যাবেনা !
সে যে-ই হউক তারে দাও শুশ্রুষার হাত
সে হউক একই আকাশতলে বাসযোগ্য সতীর্থ অবাধ।

ছোঁয়াছুঁয়ির ঊর্ধ্বেই সে হউক প্রিয়জনের আশ্বাসমাখা দেশ
সে হউক তোমার-আমার সাধের প্রিয় বাংলাদেশ।

শুনেছি, বিশ্বের অনেক খ্যতিমান লেখক-শিল্পী-ব্যক্তিত্ব যক্ষ্মার কাছে সঁপেছেন নিজের ঝাঁঝড়া হওয়া ফুসফুস। যার মধ্যে রয়েছেন ম্যাক্সিম গোর্কি, এডগার এ্যালান পো, প্যল গঁগা, সমারসেট মম সহ আরও নাম। আজ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস-এ আমার চাওয়া বিশ্ব রিপোর্ট থেকে যক্ষ্মায় মৃত্যুর ১৪ লক্ষ হিসেব নেমে আসুক শতাংশেরও নীচে শূণ্যের ঘরে। অমল-সবুজ বাতাসে প্রাণ ভরে প্রিয়জনের হাত ধরে শ্বাস নিক প্রতিটি সুসফুস। বিশ্ব যক্ষ্মামুক্ত হউক।

২৪ মার্চ ২০১২ ইং