বিস্তর দহন সয়েও পোড়া দেশে স্বপ্নরা জাগে…

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 27 April 2012, 04:39 PM
Updated : 27 April 2012, 04:39 PM

আমার ছাপ্পান্ন বর্ষের অর্ধকেরও অধিক বেঁচে থাকা এক জীবনের হাত ধরে বিস্তর হেঁটেছি জীবনানন্দে, ব্যাক্তিক ও সামষ্টিক বলয়ে, স্বদেশের সবুজ-সোঁদা গন্ধের মাঠের পারের স্বপ্নে। যদিও স্বপ্নের দশাটি আজ খড়কুটো ধরেই ভাসমান। তবুও তার গন্ধটি আজও আকুল করা বটে। আজও তার সনে কাজে-অকাজে-অবকাশে স্বপ্নবান স্বপ্ন রচিত-চিত্রিত-ছন্দিত করবার আপ্রাণ প্রয়াসেই আমার যত লেখালিখি একথা আজ খুব করেই বুঝি।

খুব করেই বুঝি চারপাশের অবস্থা ক্রমশঃ খারাপের দিকে। তবুও আমার তারই তরে দেশজ অজস্র আগুনজলে হৃদয় জ্বলে। জর্জরিত-জখমিত প্রতিটি বর্জ্যভারে কম্পমান নদীর মতো কথাজালের খোঁজে হৃদয় ঝরে। রোজ ভোর হলেই মনে হয় নদীময় আলোজলের ভাষায় পঙক্তি যদি আসে ! পোড়া বাংলাদেশ-এর "কপাল পোড়া" এই যুক্তির সমস্ত ব্যাখ্যাই খোঁড়া মনে হয় যখন অবারিত ধানক্ষেতে কৃষান-কৃষানীর ধানকাটার গন্ধ মনে আসে। চিত্রল বিভায় দু'চোখ ভেসে যায়। কবিগুরুর-বঙ্গবন্ধুর "আমার সোনার বাংলা" সুর পাঁজরের হাড় ভেদ করে বাতাসের সনে পাল্লা দিয়ে ওড়ে উড্ডীন ডানাময় উড়ালপঙ্ক্ষী প্রায় ! হাজার বর্জ্য-জঞ্জালভার ভুলে যাওয়া যায় এ অমল-ধবল সুরের যাদুজালে ! ভাবিঃ আসুক অসহনীয় অশনি যত আমাদের সুতীব্র ভালোবাসাজালে ধরা খেয়ে মরণ হবেই তাদের।

আমাদের মাঠের চাষাদের অক্লান্ত অর্জনের ভাগ তাদের ভাগ্যে যত কমই জুটুক না কেন তারা নতুন ধানকাটা ফসল চাতালে-চাতালে ভরে দিয়ে যে আনন্দ অন্নজলে শানকিতে শাক-নুন-মরিচ মাখে তাদের সন্তানের যেন ভালো হয়। তাদের কুঁড়েঘরে আলোর অভাব না হয় এই প্রার্থনায় আজ আমার অন্তর্গত সমস্ত চিত্রকলা স্বপ্নের দেশে ধায়। ফসলিত শস্যল দ্যূতি হয়ে দোল খায় বাংলা বাতাসে। কোনও অমঙ্গলের ধাক্কায় সে যেন না ঝরে কবরের আঁধারে। তার সবুজ-সোনালিয়া গাঁয় ঘুণপোকা যেন না আসে। স্বপ্নবান সহস্র তারুণ্যের হাত ধরে সে যেন অগ্নিস্নানে শুদ্ধতা কিনে ঘরে ফেরে রোজ। কোনও অকল্যান তারে পোড়াতে ব্যার্থ হোক। আমেন।

আমার নির্বাচিত দেশজ কবিতা বই থেকে "প্রেম" শিরোনাম-এর পঙক্তি নিবেদন করছিঃ

আমাদের প্রেম নেই ঈর্ষায় পুড়ি সারে-সারে।
আমাদের ঠাঁই নেই বৈষম্যের বাড়ি আছে কাতারে-কাতারে।
রাজপথ-এঁদোগলি-ডোবানালা-হাওয়া ও হাওড়
ফুলপাতা-এঁটোকাঁটা-খুনোখুনি-ছাড়াছাড়ি আছে সব
পাশাপাশি এমন কি স্তব্ধতার গন্ধনীল ত্রিভঙ্গ সমাধি
আছে সেও। নেই সুন্দরের ঘর।
আমাদের ভুলগুলি কুলকুল করে
ভূগোল ডিঙিয়ে কোথায় যে যাচ্ছে !
পারম্পর্যহীন অদ্ভুত বাগান নিয়ে বসে আছি
রাত্তিরে বিষম ব্যাধি পাড়া দাবড়ে বেড়ায় !

তবু বসে আছি অদম্য প্রেমিক
বর্ম না থাক আমার আছে প্রণম্য বাংলা ঠিক।

১৪ বৈশাখ ১৪১৯