মে দিবস-এ শব্দাঞ্জলি …

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 1 May 2012, 07:39 AM
Updated : 1 May 2012, 07:39 AM

আজ মে দিবস। যে দিবসটির সূচনা আজ থেকে বহু বর্ষ আগে আমেরিকার শিকাগোতে এক সূচ-কারখানায়। শ্রমিকরা তাদের দৈনিক ১২ ঘন্টার বদলে ৮ ঘন্টা কাজ ও মজুরির দাবিতে সাহসী প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে রক্তক্ষরা জয় অর্জন করে। সেদিন থেকেই ঐতিহাসিক মে-দিবস-এর মহান চেতনার জন্ম। অথচ আজ সেই চেতনা পুঁজিবাদী মালিকপক্ষের ভন্ডামীজালে ভুলুণ্ঠিত। প্রতিনিয়ত উপেক্ষিত পদদলিত শ্রমিকের ন্যায্য দাবী ও অধিকার। এদেশে কোটি শিশু শ্রমিক কাজ করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জীবন-জীবিকার নির্মম তাড়নায় অস্বাস্থ্যকর বিড়ি-কারখানায় / ইটভাটায় / গার্মেন্টস-এ / খোলা আকাশতলে ডাস্টবিন-উচ্ছ্বিস্ট ঘেঁটে। চিরকালের বঞ্চিত ওরা। তাদের কথা আর আমরা যারা নিতান্ত কলম শ্রমিক আমাদের চাওয়া-পাওয়ার কথা নিয়েই আজ আমার শব্দাঞ্জলিঃ

এইতো খানিক আগেও যথারীতি ছিলো লোভ।
ছিলো গান। হাতছানিমালা। ধূলিকাব্য। মেঘার্ত গন্ডোলা।
অথচ মুহূর্তে অন্ধ হিংসাযজ্ঞে পুড়ে গেলো ডানা।
এখনতো ঘরভর্তি খাদ। খাদের কিনারে প্রত্ন ধুমতানানা।

কুয়াশার ক্লিবগন্ধে ঘুম আসেনা আসতে মানা।
তবু স্বপ্নপোড়া মানুষ প্রস্তুতি নিচ্ছে দমবদ্ধ জগতগুহায় ঝাঁপ দিতে।
ফুসফুসে এক চিলতে আকাশরেখা মেলে কি না।
রিরংসার চিলথাবা যদিও অনন্ত উড্ডীন বাতাসে যথারীতি।

যথারীতি আলো আর অন্ধকারের অসম যুদ্ধ।
বলি, এখন কি এত হদ্দ অসার রাজত্ব নিয়ে দম্ভ করা ভালো ?
এখন কি এত অন্ধ মৃত অধর্মের কুঠারবিদ্ধ হওয়া ভালো ?
ভালোনা, ভালোনা এত রক্তখাকি চাপ। চাপিয়ে দেওয়া তত্ত্ব।

বিকেলে সন্ধের গন্ধে ঝপ করে নামে কালো পর্দা।
নক্ষত্র না ক্ষত ভেবে কেঁপে মরে সত্তা।
কাঁপেনা কেবল খুনে ধড়িবাজ আদমের ছুরি।
কেবল ছুরি না, ছেনি-রামদা-কুড়ালে ফালা-ফালা পিঠ।

পিঠ দিয়েছি, দিয়েছি বুক থেকে কণ্ঠনালি।
এবঙ কপাল ফুটো করে খুলি ভেদ করে গেছে গুলি।
তথাপি রক্তের সাধ ?
আর কত রক্তপাতে শান্ত হবে পিশাচের হাত ?

হাড়বজ্জাতরা জানে কখন কে শিকারকে দিচ্ছে ছাড়।
সকালে টেবিলে শুয়ে থাকে রক্তাক্ত সংবাদ।
লজ্জাহীন ছবি ও হেডলাইনে কেন যে হৃদয় লজ্জা পায় চোখে
জল আসে যেন অশ্রু জানে স্বপ্নের অধিক স্বপ্ন জ্বলে জলের অক্ষরে !

আজ বুঝি এত যে সয়েছি মার, মারের দাপটগুলি
এত যে সয়েছি ভার, বিষাক্ত বিবরগুলি
উদ্ভট উদোম চাঁদ, চাঁদের নষ্টামী, নখরামি
তবে কি পায়ের নীচে ভিত্তিটা ছিলোনা কোনও দিনই !

তবে আর কারে বলি তীব্র দগ্ধ অভিমানগুলি !
কারে বলি অপমান-উতকণ্ঠাভর্তি স্বপ্নাবলি !
কান্নার চল্লিশ পর্ব এই বর্ষা এই গ্রীষ্ম এই শীতবসন্ত বিধান !
এইখানে উড়ালের নামে বলি দেয়া হয় গান।

এইখানে ভাতৃত্বের নামে জলাঞ্জলি দিতে হয় ঘর।
এইখানে কৃতাঞ্জলিতলে প্রানান্ত ফুলেও নেই ক্ষমা।
আমরা হয়তো চিনি সেসব বিষাদ অমা।
জানি ক্ষমাহীন পৃথিবীর ছাত বেয়ে ওঠা ছায়ার খবর।

আসমুদ্র পদ্ম যার ভেসে গেছে নয়ানজুলিতে
মরাহাজা মূলে তার জল দিতে বয়ে গেছে মালিদের !
এদিকে অপালনের পাপে ছায়াহীনতার কাল।
বাগানের অমল ধারণা খুন হয়ে গেছে কাল।

অন্যদিকে ফন্দিপ্রিয় প্রভুত্বের ফাঁদে হাসফাঁস মন।
বিপাকে সাধের পদ্মা, সেচনের পরাণ-বাহন।
তবু বাগান বিলাস, তবু ভূঁইচাঁপা, জবা ও মল্লিকাপাশ।
পাশে কামিনীরা, মালতীরা ফেলে দীর্ঘশ্বাস।

যদিও মাথার 'পরে ছাত তত শক্ত নয় যত হলে চলে দিন
ভাড়াটে ও প্রজাদের উদয়াস্ত শ্রমের-ঘামের দিন।
চাওয়াতো সামান্যই কোটি হাড়-হাভাতের তাও কি পাওয়া হয়
এদেশের গোলাভরা ধানের গল্পটি মিছে মনে হয়।

অথচ অসাম্প্রদায়িক এদেশ একদিন বড়ো ধানী ছিলো।
রক্তে টগবগে ফুটন্ত স্বপ্নের ঘোড়া ছিলো।
রূপকথাও পানসে সেই উড়ালের কাছে !
দিনগুলি আজ কোথায় হারিয়ে গেছে !

বলি, ও সনাতন, ফিরে এসো, তোমার জন্য
আজও লুকিয়ে আছে স্বপ্ন।
কেবল সে কোন কুক্ষণে এদেশে আমাদের প্রিয় ঘরে
ঢুকে পড়েছে শুকুন-প্যাঁচা, মরিচিকা, পড়েছি খপ্পরে।

যা চাইনি ভুলেও সেসব ছিনাল গহবরে কেন যাই
কেন যে উদ্যান দিই ধার আর তিলে-তিলে ক্ষয়ে যাই !
দশচক্রে ভগবানও মরে জেনেও অশুভ সঙ্ঘে যাই
আজ সব সঙ্গদোষ সব চান্দ্রদোষ খুলে হাতে আলো চাই।

চাই অমলের দেশে অবাধ প্রেমের দিন পড়শির ভালো।
চাইনা ফলন্ত মাঠ মাতবরের ভাগের চাপে হোক কালো।
আজ যারা পুড়ে গেছে ঈর্ষাগুনে সেসব বন্ধুর জন্য
জম্পেশ আড্ডার ডাক শুভেচ্ছার খামে ভরলেই হয়ে যাক স্বপ্ন।

যদিও এখন রাজ্যপাট শয়তানিতে বিষিয়ে আছে বলে
আসনকে সিংহাসন আর সিংহাসনকে যাতনা বলি আমরা সকলে।
মূলতঃ মূল্যহীন তবু হত্যে দিয়ে পড়ে থাকা বাণিজ্যের পায়ে
বলাতো যায়না শূণ্যের যত্রায় আচানক প্রভুর দয়ায় লাগে কার
ফাটা কপালে জোয়ার ! এই না হলে কি আর শয়তানের বাড় !
পা চাটা কুত্তাও তত নয় যত তার জিহবা-মারণাস্ত্র ভার।

ভাবি, একদিন সব লীলাখেলা শেষে আসবে ভগবানের মার।
ভাবি, একদিন সব পায়ে পা বাঁধিয়ে মাঠে ফাঁসিয়ে দেবার
খেল শেষ হবে আর জনতারা ফিরে পাবে অধিকার
আমরাও আমাদের ফিরে পাবো কলমের ধার।

আজ শুধু এটুকুই ছিলো বলবার।
আজ শুধু এটুকুই বৃত্তবন্দী প্রয়াস আমার।
আজ বিশ্বের শ্রমিক ভাইবোন ভালো থাক।
আজ আমাদের মন ভালো যাক।

১ মে ২০১২ ইং