আজও কাঙ্ক্ষাগুলি জলেস্থলে পোড়ে…

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 5 May 2012, 09:31 AM
Updated : 5 May 2012, 09:31 AM

আজ বিশ্বের সমস্ত মিডিয়া জুড়ে বাংলাদেশ টপ নিউজ কভারেজে। কেন? কেন আবার? আজ যে বিশ্বের পরাক্রমশীল দুই-দুইজন সন্মানিত রাষ্ট্রীয় অতিথির আগমনে বাংলাদেশ ধন্য হবার অপেক্ষায়। যদিও আমরা যথেষ্ট আশাবাদী হতে চেয়েও খানিক দোদুল্যমানতা টের পাচ্ছি কমবেশি প্রায় সবাই। কেননা এদেশে আগেও তাঁদের পদধূলি পড়েছে। আর তাতে বিস্তর আগ্রহ আতিশয্য থাকলেও কার্যতঃ সুদূরপ্রসারি কোনও সুফল এসে ধরা দেয়নি আজও তেমন করে। যেমন করে মানুষ আশা জাগানিয়া কর্মযোগের বাস্তব চিত্রটি অচিরে দেখবে বলে বসে থাকে তার আর বাস্তব রূপায়ন ঘটে না যতটা আশায় থাকা। তো, আশাময়তায় বসে থাকতে-থাকতেই বছর ঘুরে বছর আসে কাজ যদ্দূর যাওয়ার কথা তদ্দূর যায়ওনা, এগোয়ওনা। এবঙ এদেশের মানুষ এতেই অভ্যস্ত বলা যায়। যদিও আজ দুই-দুইজন সন্মানিত অতিথি আসছেন বলে আমরা সবাই গর্বিত। একজন আমেরিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাননীয় হিলারি ক্লিনটন। অপরজন আমাদের পড়শি রাষ্ট্র ভারত-এর অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জী। তাঁরা দুজনেই বাংলাদেশে দুদিনের সফরে আসছেন। তাঁদের জানাই হার্দিক অভিবাদন, সুস্বাগমতম।

এর অল্পদিন আগে সফর করে গেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনোমোহন সিং। তাঁর আন্তরিকতার অভাব না থাকলেও বাংলাদেশ-এর প্রধান তিস্তা-পানি-চুক্তি ও তিস্তা বাঁধের বিষয়টি সমাধানের পথে এগোয়নি আজও। ভারত-এর মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী মমত্বহীন এ বিষয়ে। আজ কি প্রণব মুখার্জী এই বার্নিং ইস্যুটিকে একটি দ্বিপাক্ষিক সমঝোতায় এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হবেন ? প্রার্থনা এই তিনি যেন তা পারেন। মমত্বহীন মমতা দিদির মন যেন গলে বাংলাদেশ-এর তরে।

এই দেশ ও দেশের মানুষ বড়ো পোড় খাওয়া। তারা জানে উদয়াস্ত হাড়ভাঙা শ্রমের শেষেও সুখের নাগাল পাওয়া কঠিন। এটি অবশ্য আম-জনতার ক্ষেত্রেই। ধনাঢ্য শ্রেণীর কথা আলাদা। যারা দিন আনে দিন খায় তাদের রোজের জীবনে নতুনের কোনও আয়োজন নেই-ই বলা যায়। রোজই তাদের একই "থোড় বড়ি খাড়া / খাড়া বড়ি থোড় " অবস্থা। কোনও বৈচিত্র তারা হয়তো স্বপ্নেও ভাবেনা। কিন্তু ভাঙা বাঁধের কিনারে দাঁড়িয়ে প্রায়শঃই তাদের দীর্ঘশ্বাসে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। তাদের কথা আমরা যেন কেবল কথায় / লেখায় তুলে আনি বটে, তাদের তাতে কিছুই বদল হয়না। ভাবিঃ এদেশে তবে অযথা এত দিন বদল-এর ধুয়া ওঠানো কেন ?

তবুও লিখি তাদের ভেবে দু'চার পঙক্তিঃ

এত যে অতন্দ্র আমাদের জিজীবিষাগুলি !
এত যে সশঙ্ক আমাদের সুপ্ত সাধগুলি !
ভেসে যায় নদনদী অশ্রুত পঙক্তিগুলি !
ভাঙা ঘরদোর জ্বেলে তবু এষণা জোগাই যেন বেঁচে থাকে স্বপ্নগুলি !

যাতে ঘরহীন ভাঙা বাঁধের কিনারে সম্প্রীতির চিহ্নগুলি
আর জগতপুরাণ থেকে সুন্দরের বার্তাগুলি
ছুটে আসে, পাশে বসে
খেয়োখেয়ির বিকট গর্ত থেকে মুক্তি আসে।

৫ মে ২০১২ ইং