বাংলা সাহিত্যের অনন্য-সব্যসাচি কথাশিল্পী শওকত ওসমান-এর আজ চতুর্দশতম মৃত্যুবার্ষিকী। জন্মঃ ২ জানুয়ারী ১৯১৭ তে ভারত-এর হুগলি-র সবলসিংহপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। ইস্কুল-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠপর্ব কোলকাতায়। লেখালিখির শুরুও সেখানেই। কোলকাতার পত্রপত্রিকায় ছাত্রকালেই তাঁর লেখা ছাপা হয় এবঙ সাহিত্যাঙ্গনে সমাদৃত হয়। লেখায়-কর্মে তিনি ছিলেন চিন্তা-চেতনায় অগ্রসরতা-অসাম্প্রদায়িকতার ধারক-বাহক। পিতৃদত্ত নাম শেখ আজিজুর রহমান। লেখার জন্য তা বদলে নেন নিজেই। নতুন নামে আত্মপ্রকাশ করেন। সেই নামটিই শওকত ওসমান। এবঙ সেই নামেই পরিচিতি পেয়ে যান কথাশিল্পী শওকত ওসমান।
১৯৪৭ এর দেশ-বিভাগের পরে এদেশে স্থায়ীনিবাস গড়েন। প্রথমে চাকুরী নেন চট্টগ্রামে। অতঃপর ঢাকায়। সর্বশেষ ঢাকা কলেজ-এ বাংলার শিক্ষক ছিলেন। ক্লাশ-এ বন্ধুর মতো গল্প করতেন। ছাত্রদের "স্যার" বলে সম্বোধন করতেন। প্রিয় ছাত্রদের মাঝেমাঝেই ফোন দিতেন "স্যার ক্যামন আছেন" বলে। বন্ধু-স্বজনদের ফোনে "ভ্রাতঃ প্রাতঃ স্মরণীয়" বলে সম্ভাসন জানাতে ভালোবাসতেন। যা আজকের অগ্রজ সাহিত্যিকদের কাছে পাওয়া দুষ্কর প্রায়। এমনই নমস্য ব্যক্তিত্বের লেখক-শিক্ষক ছিলেন তিনি। জীবনভর লিখেছেন প্রচুর। মূলতঃ ঔপন্যাসিক হলেও অনেক ক্লাসিক গল্প রচনা করেছেন। অনেক শিশুতোষ সাহিত্য রচেছেন। সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ বিরোধী চিন্তা-চেতনায় শক্তহাতে কলম ধরেছেন। শক্তিমান রচনায় সমৃদ্ধ করে গেছেন বাংলা সাহিত্য সম্ভার। তাঁর রচিত "কৃতদাসের হাসি" স্বৈরাচারের প্রতিবাদী গণজাগরণের এক প্রতিকী উপন্যাস হিসেবে সর্বকালে পাঠযোগ্য-মঞ্চায়নযোগ্য আলোর পথের দিশারী বলা যায়। তাঁর "জননী" উপন্যাস ইংরেজীতে অনুদিত হয়ে বিশ্ব সাহিত্যে ঠাঁই পেয়েছে। তাঁর রচিত "রাজা উপাখ্যান" , "চৌরসন্ধি" , "সমাগম" , "জাহান্নাম হইতে বিদায়" অসামান্য উপন্যাস-এর উল্লেখযোগ্য সংযোজন বাংলা সাহিত্যে। গল্পও প্রচুর রচেছেন। গল্পগ্রন্থ-র মধ্যে উল্লেখযোগ্য "মবিন ও তার কুকুর" , "জুনু আপা" ,
"ঈশ্বরের প্রতিদ্বন্দী"। স্মৃতিগাথাও লিখেছেন বিস্তর। তার মধ্যে "কালরাত্রির খন্ডচিত্র" , "উত্তর পর্ব" , "গুডবাই জাস্টিস মাসুদ" , "স্বজন সংগ্রাম" ও "মুজিবনগর" উল্লেখযোগ্য। কীর্তিমান এই নমস্য লেখক অর্জন করেছেন অনেক পুরষ্কার-সন্মাননাঃ আদমজি সাহিত্য পুরষ্কার, বাংলা একাডেমী পুরষ্কার, প্রেসিডেন্ট প্রাইড অব পারফরমেন্স পদিক, মুক্তধারা পুরষ্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরষ্কার, টেনাসিস পুরষ্কার, মাহবুবুল্লাহ ফাউন্ডেশন পদক ও স্বাধীনতা পুরষ্কার।
১৯৯৮-র ১৪ মে এই মহতী কথাশিল্পীর জীবনাসান হয়। তাঁর সব্যসাচি স্মৃতির প্রতি জানাই আনত শ্রদ্ধার্ঘ্য।
১৪ মে ২০১২