কালের জখমিত শিকড় ছুঁয়ে জ্বলন্ত নৈঃশব্দ জাগে…

নুরুন্নাহার শিরীন
Published : 3 June 2012, 08:04 AM
Updated : 3 June 2012, 08:04 AM

অনেক সাধের বাংলাদেশ তার জন্মলগ্ন থেকেই প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের উস্কানীমূলক কর্মকান্ডের টার্গেট। যার প্রভাবে চল্লিশ-চল্লিশ বর্ষ পার করেও বেশ একটি নেগেটিভ বলয় তৈরী হয়েই চলেছে বাংলাদেশ ঘিরে। তাতেই প্রায়শঃই পজিটিভ কর্মকান্ড ছাপিয়ে নেগেটিভ কর্মসূচীর প্রভাবে বেশ প্রভাবান্বিত হয়ে পড়ে একটি শ্রেণী। তাদের অনেকেই অনেক শ্রেণীপেশায় যুক্ত থেকেই দিব্যি চায়ের কাপে ঝড় উঠিয়ে পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গির বদলে সর্বত্র নেগেটিভ আলোচনা-সমালোচনার এক বিরূপ পরিবেশ সৃষ্টিতে ততপর সদাই। যাকে নিঃসন্দেহে অপততপরতা বলা যায়। তাদের উস্কানীতে উত্তপ্ত হয়েই মিডিয়া-মঞ্চে ছড়িয়ে যায় বিভ্রান্তিকর বক্তব্য-ভাষণ ও টক-শো। যাতে জড়িয়ে পড়ে প্রচুর মেধাবী প্রজন্ম। বিষয়টি মোটেও হেলাফেলার নয় বলেই মনে করি। কেননা এতে করে সাধারণ জনমনেও যথেষ্ট বিভ্রান্তি জাগে। সার্বিকভাবে এতে প্রজন্ম কেবল ক্ষতিগ্রস্তই নয় তাদের সম্ভাবনাময় মেধামনন উন্নয়নের বিপরীতমুখি স্রোতের খপ্পরে পড়েই দিকভ্রান্ত হয়। জাতিগত ঐতিহ্য তাতে ভুলুণ্ঠিতই হয়। কোনও সুস্থ্য মননশীল জাতি এমন ক্ষতিকর অবস্থার শিকার হয়ে, তার সকল প্রণোদনাময় চেতনা ভুলে, কেবল হিংসা-রিরংসার দিকে বিপুল প্ররোচনায় এগিয়ে যাবে, এমন অবস্থার জরুরী অবসানকল্পে জাতীয় ঐকমত্য আজ বিষম প্রয়োজন মনে হয়। অথচ কি করে যে সম্ভব এই অসম্ভবের পাহাড়-চূড়ায় উঠে জাতীয় চেতনার চির-সমুজ্জ্বল পতাকা ওড়ানো, আমার ক্ষুদ্র মেধায় আসছেনা। তবুও খুব করেই বুঝি যে জরুরী কিছু উদ্যামী-বিবেকবানের সমুচিত পদক্ষেপেই তা আসতে পারে এবঙ তাকে আসতেই হবে সেই অজর পঙক্তির মতো

"…. তোমাকে আসতেই হবে …. "

বাংলার বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর তেমন কোনও ধারণাও নেই নিয়ত প্রভাব বিস্তারি এই প্রতিক্রিয়াশীল চক্র সম্পর্কে। তাই এদের প্রভাবান্বিত করাও বেশ সহজ। সহজেই তাদের সুদূর প্রসারি কাজ এগিয়ে চলে তরতরিয়ে। অন্যদিকে সুদক্ষ হস্তক্ষেপের অভাবে বহু সম্ভাবনার প্রজেক্ট আটকা পড়ে যেন বা সঠিক সময়ে ড্রেজিং-এর অভাবজনিত বর্জ্যভারে চড়ায় ঠেকা পদ্মা কি তিস্তা নদীর মতো। যেন বা ঠিক মহামারির কবলে আক্রান্ত প্রিয় নদীর বেহাল শুকনো দশা।

অথচ এমন তো কথা ছিলো না। কথা ছিলো অনেক সাধের বাংলাদেশ সম্ভাবনার চড়াই-উতরাই পেরিয়েই চির-উড্ডীন সূর্য খচিত সবুজের জয়বার্তা রচবে বিশ্বময়। অবৈধ বাণিজ্যের ঠিকানা হবেনা সে। জীবনানন্দ-র এমন সবুজ ঘাসের দেশে ধর্ম বাণিজ্য চলবে না কিছুতে। দল-উপদলের রমরমা টক-শো বাণিজ্যে মিডিয়া সয়লাব। আমরা যারা সামান্য লিখিয়ের দল আমাদেরও কারও-কারও 'পরে এসবের আছর পরে বৈকি। তারই জের ধরে বিস্তর লেখালিখির ঝড়ে মেধামনন বিপর্যয়ে পড়ে। আমার তখন নিজের লেখা ভুলে সেসব পড়তে-পড়তে চোখের তেরটা বাজে। তবুও আমিও একজন সচেতন নাগরিক বলে কথা, আমি কি অবিবেচক-এর মতো তদের কথা না পড়ে নিজের বিবেকজাত বাংলার জখমিত কালের গুঞ্জনাদি ব্লগ-এ লিপিবদ্ধ করতে পারি !

তবুও সত্যবদ্ধ-রক্তবদ্ধ অজস্র রক্তজলে ভেসে যাওয়া সারি-সারি শিকড়জাত অভিমানী চোখ থেকে জলের বদলে আতপ্ত রক্ত উঠে আসে। আমার সকল শব্দই চুপ হয়ে আনত বসে জ্বলন্ত নৈঃশব্দের পাশে। কালের হৃদি হতে টুপ করে খসে পড়া অজস্র প্রিয় মুখগুলি জীবন্ত হয়ে হাঁকে

"…. জাগো কোন ঠে সবাই …."

আমার হৃদি জাগে জ্বলন্ত নৈঃশব্দে ..