ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ঘটনা এবং কিছু কথা

রুকসানা পারভীন সুমী
Published : 15 July 2011, 11:54 AM
Updated : 15 July 2011, 11:54 AM

প্রতিদিন খবরের কাগজে এমন কিছু সংবাদ ছাপা হয় যা দেখে চোখ থমকে যায়, মন আহত হয় আর বিবেক হয় প্রশ্নবিদ্ধ । ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ঘটনাটিও সেরকম একটি খবর । কিছুদিন আগেও জানতাম শিক্ষক হলেন মানুষ গড়ার কারিগর আর শিক্ষকতা হলো সবচেয়ে সন্মানজনক পেশা । শিক্ষক একজন শিক্ষার্থীকে ন্যায়ের পথে চলতে শিখাবেন , আলোর পথ চিনতে শিখাবেন , পৃথিবী ছুঁয়ে স্বপ্ন বুনতে শিখাবেন । কিন্তু শিক্ষক নিজেই যদি শিক্ষার্থীকে অন্যায়ের পথে , আধাঁরের পথে চলতে শিখান , স্বপ্ন বোনার কুঁড়ি ধ্বংস করে দেন তবে কিভাবে আলোকিত মেধাবী শিক্ষার্থীর জন্ম হবে ?

কিভাবে মেধায় মননে সমৃদ্ধ জাতি গড়ে উঠবে ? শুধু ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ঘটনাই নয় , প্রায়ই পত্রিকার পাতায় দেখা যায় দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষক দ্বারা ছাত্রীর যৌন হয়রানির অভিযোগ । কিন্তু কেন ?

শিক্ষক শব্দটির সাথে জড়িয়ে আছে শ্রদ্ধা , সন্মান , ধৈর্য আর বিশালতার ব্যাপ্তি । একজন শিক্ষার্থী শিক্ষকের ছায়াতলে থাকবে নির্ভয় , নিরাপদ অথচ বর্তমান পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন । শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর মাঝে শিক্ষা ছাড়া অন্য কোন কুচিন্তার প্রবেশ কোনভাবেই সুস্থতার পরিচয় নয় । শিক্ষা যদি কারো কুদৃষ্টির উপর সুদৃষ্টির আবরণ ফেলতে না পারে , লিঙ্গ বৈষম্যকে দূর করতে না পারে তবে সে শিক্ষার
কি মূল্য আছে ? যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের আগে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের তদন্ত এবং মনস্তাত্ত্বিক সুস্থতার মাপকাঠিকে প্রাধান্য দেয়া উচিৎ । এ ধরনের শিক্ষকরা শিক্ষক নামের কলঙ্ক বৈ কিছু নয় । শিক্ষিত হয়েও যারা বিকৃত লালসাকে দমন করতে পারে না তাদের প্রত্যেকের মানসিক সুস্থতার প্রয়োজন ।

এই ঘটনায় যে বা যারা যুক্ত তাদের প্রত্যেকের যথোপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে । বিচারের বাণী যেন নীরবে নিভৃতে না কাঁদে সেদিকে নজর দিতে হবে । কেননা যে কোন অন্যায়ের শাস্তি না হলে অন্যায়কারীর সাহস বেড়ে যায় এবং একই ধরনের অন্যায় বারবার সংগঠিত হতে থাকে । লক্ষ্য রাখতে হবে যেন পত্রিকার পাতা থেকে অন্যান্য সাধারন খবরের মতো এই খবরটি হারিয়ে না যায় বরং শেষ পর্যন্ত এটি খবরের খবর হতে পারে ।

পরিশেষে বলছি শিক্ষিত হয়েও যারা মানবিক হতে পারেননি তারা অশিক্ষিত জয়নালের কাছে দীক্ষা নিন । যিনি শুধুমাত্র রিকশা চালিয়ে একটি হাসপাতাল , একটি বিদ্যালয় , এবং একটি মক্তব গড়েছেন । যেখান থেকে রোগীরা বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা এবং ছাত্র-ছাত্রীরা বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে । অশিক্ষিত হয়েও যিনি স্বার্থ ত্যাগ করে সমাজে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন । শিক্ষিত সমাজের মানবতা যার কাছে হেরে গেছে । আসুন , আমরা দেশকে ভালবাসি । আগামী প্রজন্মকে আলোকিত করতে নিজের মাঝে আগে আলো জ্বলায় , কু প্রবৃত্তি এবং অশুভ রাহুকে ধ্বংস করি ।