ভারতের পানি নিয়ে দাদাগিরি

শফিকুল ইসলাম জীবন
Published : 31 August 2011, 04:02 AM
Updated : 31 August 2011, 04:02 AM

সম্প্রতি লন্ডনের একটি পানি সম্মেলনে গেলাম। বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটির একজন প্রফেসর বললেন, আর দু থেকে তিন দশকের মধ্যে বিশ্বে তেলের মতো আরেকটি রাজনৈতিক ইস্যু হবে পানি। এই ইস্যু যুদ্ধের রুপ নিতে পারে। এখুনি ইংল্যান্ডের অনেক জায়গায় পানি নেই। ওয়েলসের অনেক স্থানে শুষ্ক মৌসুমে মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যায়। বিকল্প পদ্ধতিতে ফসল ফলানো যায় কিনা গবেষনা শুরু হয়েছে। পানি সমস্যার সমাধানের জন্য ব্রিটিশ সরকারকে জরুরী ভিত্তিতে একটি বিশেষ নীতিমালা এবং পদক্ষেপ নেয়ার দাবী ওঠে ওই সেমিনারে।

বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের ভৌগলিক সমস্যা এবং পানির ইস্যুতে ভারত এবং বাংলাদেশের প্রসঙ্গটিও আসে। তিনি বললেন, ত্রিশ বছর আগে ভারতের পক্ষে পানি দেয়া অনেক সহজ ছিল। তখন কুটনীতিক এবং রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান যদি একটু শক্ত অবস্থানে থাকতো তাহলে তাদের পক্ষে অমিমাংসিত পানির বিষয়টি নিষ্পত্তি করা সম্ভব হতো। তবে এখন রাজনৈতিক সমস্যার চেয়ে সামাজিক কিংবা প্রাকৃতিক সমস্যাগুলো বেশি প্রকট আকার ধারন করেছে। এই পরিস্থিতিতে ভারত যে কোন ছল ছুতোয় বাংলাদেশের পানি আটকে রাখার প্রচেষ্টা চালাতে পারে। পানি প্রতিবেশী দেশগুলোর সম্পর্কের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করতে পারে-তার দৃষ্টান্ত দিতে গিয়ে তিনি এই প্রসঙ্গটি আনেন।

গত বছর দিল্লীতে ক্লাইমেট চেঞ্জ সম্পকির্ত সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ব্রিফিং ওয়ার্কশপে একজন সাংবাদিক হিসেবে আমিসহ ঢাকার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের বেশ কিছু প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলাম। দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথি ভারতের পরিবেশ মন্ত্রী বাবু জয়রাম রমেশ উপস্থিত ছিলেন। তিনি জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে বলতে গিয়ে বাংলাদেশ এবং ভারতের আঞ্চলিক ও ভৌগলিক সমস্যার অনেক দিক নিয়ে কথা বললেন। কিন্তু কোন ভাবেই তাঁর মুখে পানি প্রসঙ্গটি আসলো না। তাঁর বক্তব্যের মাঝে আমি বলেছিলাম, জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে পানি বাদ দিয়ে আলোচনা সম্ভব কিনা। এখন তো পানিই সব ক্ষেত্রে প্রধান কারন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পানি প্রসঙ্গে কথা বলতেই প্রথমে আমাকে থামানোর চেষ্টা করেন ওই ওয়ার্কশপের আয়োজক সেন্টার ফর সাইন্স এ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের প্রধান সুনিতা নারাইন। তিনি কোন রকমে বললেন, পানি নিয়ে তারা নাকি খুব শিগগির আরেকটি সম্মেলন করবেন। সেখানে আমাকে আবারও আমন্ত্রন জানানো হবে। পরে আমি আবার পরিবেশ মন্ত্রীকে বললাম, আপনি তো আমার প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন। এবার তিনিও সুনিতা নারাইনের কথার প্রতিধ্বনি করে বললেন, জলবায়ু পরিবর্তন আর পানি দুটো দুই ইস্যু। পানি নিয়ে আমরা পরে আবার বসবো।

ওয়ার্কশপ শেষে ভারতের কয়েক সাংবাদিক, তাদের পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলছি। এরা কেউ কেউ হাসতে হাসতে বলে উঠলেন, দাদা, মেরা বিদ্যুত দেগা, কিন্তু পানি নেহি দেঙ্গে। তখন ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যুত চুক্তির বিষয়টি দু'দেশেই আলোচিত। আমার মনে হয়েছিল, ওরা ওদের মনের কথাই বলেছে। এখন যদি সত্যিই বাংলাদেশে পানি আসে। এটা একটি স্বপ্নে পাওয়ার ব্যাপার হবে।

লেখক: যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক এবং ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলসের ছাত্র