কোটি কোটি এশীয় চরম দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে

পাগলা হাওয়া
Published : 26 June 2011, 09:08 AM
Updated : 26 June 2011, 09:08 AM

বিশ্ব অর্থনীতির পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে খাদ্য ও জ্বালানি মূল্য ক্রমাগত বাড়তে থাকায় এশিয়ার কোটি কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বা এডিবি। সম্প্রতি এডিবি গবেষনা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এএফপি ও ইউপিআই নিউজ ট্র্যাক জানিয়েছে, জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম যদি ক্রমাগত বাড়তে থাকে, তবে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।

নিজস্ব গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে ম্যানিলাভিত্তিক এ আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংক বলছে, গত এক বছরে এশিয়ার অনেক দেশে খাদ্যপণ্যের দাম ১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্য সংকটের কারণে তেলের দামও বেড়েছে। আর এ দুটি বিষয় এশিয়ার অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি। এডিবি'র মতে, খাদ্যপণ্যের উচ্চমূল্য এশিয়ার কোটি কোটি মানুষকে চরম দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে। অভ্যন্তরীণ বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম ১০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার মানে হলো প্রায় ৬ কোটি ৪০ লাখ লোককে চরম দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দেওয়া।

ম্যানিলায় ওই প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সংস্থার প্রধান অর্থনীতিবিদ ছাংইয়োং রি বলেন, খাদ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি উন্নয়নশীল এশিয়ার বহু দরিদ্র পরিবারের, বিশেষ করে যারা তাদের আয়ের ৬০ শতাংশেরও বেশি খাদ্যে ব্যয় করে, তাদের চিকিৎসা ও লেখাপড়ার ব্যয় বহনের সামর্থ্য মারাত্মকভাবে কমিয়ে দেবে। তিনি বলেন, এ সমস্যা যদি এখনই মোকাবেলা করা না যায়, তাহলে এশিয়ার দারিদ্র্য বিমোচনে সম্প্রতি যে অগ্রগতি হয়েছে তা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।

এডিবির প্রতিবেদনে কয়েকটি দেশের খারাপ আবহাওয়া এবং ডলারের দুর্বল অবস্থান ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিকে খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পাওয়া এবং তার দাম বেড়ে যাওয়ার জন্য দায়ী করা হয়। এতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে খাদ্যের উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে বলা হয়, দানাদার শস্যের উৎপাদন এ বছর কমপক্ষে ২ শতাংশ বাড়ানো না গেলে খাদ্য মজুদ বর্তমানের চেয়ে কমে যাবে।

এডিবি'র মূল্যায়ন হলো, মজুদ কমে যাওয়ার আশঙ্কায় অনেক দেশ খাদ্যপণ্য রফতানিতে যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তা পরিস্থিতির উন্নয়নে কোনো ভূমিকা তো রাখবেই না; বরং তা অবস্থা আরো খারাপ করবে। রি বলেন, ঝুঁকি এড়াতে এশিয়ার দেশগুলোকে খাদ্যপণ্য রফতানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আরো শক্তিশালী করতে হবে। তিনি বলেন, খাদ্য উত্পাদনে ভারসাম্য আনা এ অঞ্চলের দেশগুলোর এখন প্রধান কাজ হওয়া উচিত। এজন্য শস্য উৎপাদন ও মজুদ ব্যবস্থাপনা বাড়াতে কৃষি অবকাঠামো উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ প্রয়োজন। তবে তিনি মনে করেন, ওই বিনিয়োগের পরও শস্যের উৎপাদন বাড়াতে খানিকটা সময় লাগতে পারে ।

এডিবি প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, গত বছরের মাঝামাঝি থেকে থেকে এশিয়ার অনেকগুলো প্রধান খাদ্যশস্যের মূল্য দ্রুত ও অব্যাহত গতিতে বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং মার্চে অপরিশোধিত তেলের রেকর্ড উচ্চমূল্যে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে চরম সংকট দেখা দেয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় অনেকগুলো দেশ আমদানি ও বিক্রয় কর হ্রাস করার মতো স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তবে এডিবি বলছে, খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি ঠেকাতে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এসবের বদলে এশীয় দেশগুলোর দরকার আরও বেশি বিনিয়োগ এবং অধিক ফলনশীল কৃষিপণ্য উত্পাদনের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা। কেবল তাহলেই সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে।