জামায়াত গাড়ি ভাংচুরের ক্ষতিপূরণ দিবে যুক্তরাষ্ট্রকে, আমাদের গাড়িগুলোর কী হবে?

প্রণতি প্রণয়
Published : 4 Dec 2012, 03:10 PM
Updated : 4 Dec 2012, 03:10 PM

শুনলাম জামায়াত যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি ভেঙ্গে ফেলার দু:খে তাদের ক্ষতিপূরণ দিবে। যদি তাই হয়, তাহলে আমরা ঢাকাবাসী বা সারাদেশবাসী যে গাড়িগুলোয় যাতায়াত করি আমাদের গাড়ীগুলোযে জামাযাতের লোকজন ভাংচুর করল তারা আমাদের গাড়ীগুলোর মালিককে ক্ষতিপূরণ দিবে না? কবে দিবে এ ক্ষতিপূরণ?

সকালে ঘুম থেকে উঠে যখন টিভি দেখতে বসলাম ।দেখলাম শাহবাগের রুপসী বাংলা হোটেলের সামনে, খিলগাঁও, মিরপুর গাড়ী ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এখন সন্ধ্যায় জানলাম পুরো ঢাকা শহর ছিল গাড়ী ভাংচুরে ব্যস্ত। দুপুরে জানলাম জামায়াতের নেতাকর্মীরা রাস্তায় বাংলাদেশের মানুষের গাড়ী ভাংচুরের পাশাপাশি ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডাব্লিউ মজিনার গাড়ী টিও ভাংচুর করেছে। খবর টি দেখে মেজাজটা প্রচন্ড খিচড়ে গেল। প্রথম কথাই হলো, তোরা মারার আর মানুষ পেলি না। ঐ আমেরিকানদের কেউ ছোঁয়! আর উত্তর পেলাম না নিজের কাছে, কেন মজিনা হরতালের দিনে গাড়ী নিয়ে বের হলো। হরতালে তো কোন কূটনীতিক কখনো গাড়ী নিয়ে রাস্তায় বের হয় বলে শুনিনি। সব দূতাবাস তো হরতালের দিন পুরো বন্ধ থাকে। ওরা নিরাপত্তার ভয় পায়। আজ মজিনার এত সাহস কোত্থেকে এল!

আবার মাত্র কদিন আগেও মজিনা জামায়াতের সঙ্গে সংলাপ বসার জন্য সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে। বিচারাধীন মামলার জন্য কিভাবে সংলাপে বসে সমাধান সম্ভব তা আমার বোধগম্য নয়!
আবার এবার যে গাড়ী গুলো ভাংচুর হলো এর আগে এ বছরে বেশ কয়েকটি হরতাল হয়েছে আর সবগুলো হরতালে গাড়ী ভাংচুর ও অগ্গ্নিসংেযাগের ঘটনা ঘটেছে। সরকার যদি শুধু টিভি ক্যামেরার ফুটজে গুলো দেখে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করতো তাহলে কিন্তু এত গাড়ী ভাংচুরের আগে জামায়াত ভাবতো। কিন্তু সে ধরণের কোন ঘটনা ঘটেছে বলে শুনিনি। বিএনপিসহ অন্য দলের লোকজন যখন গাড়ী ভেঙেছে, আর সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেই নি। তখন আজ আর বলে লাভ নেই জামায়াত-শিবির যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের দল, তারা ৭১ এর বিরোধী শক্তি তাই তারা এদেশের ক্ষতি করতে সম্পদ ধ্বংস করছে। কিন্তু একথা বলতে পারছিনা। কেননা, অন্য সব হরতালেও একইভাবে গাড়ি ভাংচুর ও পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। আর যে দেশে এত আইন সে দেশে গাড়ী ভাংচুররোধে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

জামায়াত বলেছে, "অভূতপূর্ব এই দুঃখজনক ঘটনার ব্যাপারে প্রাথমিক তদন্ত শেষে এর দায় দায়িত্ব আমরা গ্রহণ করছি এবং নিন্দা জানাচ্ছি। এই ঘটনার জন্য দূতাবাস এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের নিকট আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি এবং এর ক্ষতিপূরণ দিতে আমরা প্রস্তুত।"

দূতাবাসের গাড়িতে হামলায় গাড়ির চালক 'সামান্য' আহত এবং গাড়িটির ক্ষয়ক্ষতি হয় বলে জামায়াতের বিবৃতিতে বলা হয়।
(বিডিনিউজ)

যুক্তরাষ্ট্র সরকার বরাবরই জামায়াতে ইসলামীকে একটি উদার ইসলামী দল হিসাবে বিবেচনা করে থাকে, যদিও তাদের এই অবস্থান নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো।

এবার যুক্তরাষ্ট্র জামায়াতের দু:খে কতটা দুখী হয় সেটাও দেখার বিষয়। কিন্তু জামায়াত যে বাংলাদেশকে এখনও নিজের দেশ মনে করে না তার প্রমাণ ও পেলাম এই বিবৃতি থেকে। তারা কিন্তু দেশবাসীর কাছে কোন ক্ষমা চায়নি। তারা চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। সত্যিই জামায়াতে ইসলামি কি বিচিত্র এক রাজনৈতিক দল! দেশের প্রতি যার টান নেই একফোঁটা!

আমি প্রতিদিন ঢাকা শহরের রাস্তায় পাবলিক ট্রান্সপোর্টে চলাফেরা করি , জামায়াতকে আমার চলাফেরার ট্রান্সপোর্ট নষ্ট করার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। আমি জামায়াতকে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। আর শুধু যুক্তরাষ্ট্রের গাড়িকে নয়, বাংলাদেশের সব গাড়ির ক্ষতিপূরণ দিক জামায়াত।

প্রণতি প্রণয়।
০৪.১২.২০১২, ঢাকা।