রামপাল অভিযোগনামা: পর্ব ৩

আঞ্জুমান ইসলাম
Published : 22 Oct 2013, 07:11 AM
Updated : 22 Oct 2013, 07:11 AM

কয়লা, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও Coal Combushion Product সংক্রান্ত বিভ্রান্তি

অক্টোবরের ৬ তারিখে bdnews24.com এ প্রকাশিত "রামপাল: কিছু অভিযোগ কিছু উত্তর" শিরোনামে প্রকাশিত মতামত বিশ্লেষণে এ বিষয়গুলোর ব্যাখ্যা দিয়েছিলাম স্বল্পপরিসরে। কিন্তু লক্ষ্য করছি যে কেউ কেউ নানাভাবে কয়লা ব্যবহারজনিত দূষণ এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপন্ন Coal Combushion Product এর ব্যবহার নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েই যাচ্ছেন। এ কারণে উপরোক্ত বিভ্রান্তি নিয়ে বিস্তারিত লেখা জরূরি মনে করছি।

কয়লাজনিত দূষণ

দেখুন বিগত বাষট্টি বছরে মার্কিন মুলুকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার ব্যবহার কীভাবে বেড়েছে–

সচরাচর শুনে আসছেন নিশ্চয়ই যে, কয়লা হলো ভয়ঙ্কর। কয়লা পরিবেশনাশিনী। কয়লাভিত্তিক শিল্প থেকে একশ হাত দূরে থাকতে হবে, ইত্যাদি ইত্যাদি। এগুলো যদি সত্যি হয় তাহলে তো উচ্চহারে কয়লার ব্যবহার পরিবেশ নিশ্চয়ই ধ্বংসের দোরগোড়ায় নিয়ে গেছে বিগত অর্ধশতক কালে! পঞ্চাশের দশকে পরিবেশের যে অবস্থা ছিল, এখনকার দূষণ-পরিস্থিতি তা থেকে নিশ্চয়ই অনেক খারাপ। SOx, NOx পরিস্থিতি না জানি কতটা ভয়াবহ! আসুন দেখি US EPA (United States Environmental Protection Agency) কী বলে?

সে কি, এ তো দেখা যাচ্ছে একেবারেই উল্টো চিত্র। US EPA বলছে, কয়লার ব্যবহার যতই বাড়ুক, আমেরিকায় বায়ুদূষণ কিন্তু দিন দিন কমছে। কিন্তু তা কী করে হয়? এই যে এতসব পরিবেশবিদ উঠতে-বসতে কয়লার পিণ্ডি চটকাচ্ছেন, তারা সবাই কি তাহলে ভুল?

কয়লা ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে একসময়ে পরিবেশ যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল, এটা কিন্তু ঠিক। যখন আরও বিদ্যুৎ দরকার হল তখন একসময় পরিবেশ দূষণ কমাতে কয়লার ব্যবহার কমানোর উপর চাপ যে এসেছিল, সেটাও ঠিক। কিন্তু তারপর কী এমন ঘটল যে সে চাপ উপেক্ষা করে কয়লার ব্যবহার বেড়ে গেল, কিন্তু পরিবেশদূষণ বাড়ল তো না-ই, উল্টো কমা শুরু হল?

যা ঘটেছে তা খুবই সিম্পল একটা সমীকরণ। বাংলায় যাকে আমরা বলি "সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙ্গবে না"-– ঠিক সেই ঘটনা। প্রথম যখন কয়লাসহ নানাবিধ ফসিল ফুয়েল ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়, পরিবেশের ক্ষতির বিষয়টা তখন খুব একটা গুরুত্ব পায়নি। তবে এই আপাত অগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা গোচরে আসতে স্বাভাবিক নিয়মেই খুব একটা সময় লাগেনি। প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে ফসিল ফুয়েল ব্যবহার বন্ধে চাপ সৃষ্টি ছিল স্বাভাবিক প্রথম পদক্ষেপ।

কিন্তু এতে বিপুল সম্ভাবনাময় বিদ্যুৎ উৎপাদনও স্বাভাবিকভাবেই ঝুঁকির মুখে পড়ে। এ পর্যায়ে উৎপাদন থেকে দূরে সরে যাওয়া একটা অপশনও হতে পারত। কিন্তু এটাও তো ঠিক যে দূরে সরে গেলেই প্রলয় থেমে থাকে না। তাই সবচেয়ে যথার্থ যে সমাধান– প্রযুক্তির ব্যবহার করে দূষণমাত্রা গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে নামিয়ে আনা– দূষণ-সমস্যা সমাধানের সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে সে প্রচেষ্টাই শুরু হয়। প্রচেষ্টাটি কতটা সফল গত ৩০-৩৫ বছরের ডাটা প্লট করে দেখলে যে কেউ তা সহজেই অনুধাবন করতে পারবেন।

আলোচনার এ অংশে আমরা যে বিষয়টার উপর আলোকপাত করতে চাচ্ছি তা হল, কেন কয়লাকে এদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি হিসেবে বেছে নেওয়া হল?

প্রথমেই বিকল্প জ্বালানিগুলির সঙ্গে টেকনিক্যাল বিষয়ের তুলনা করা যাক। কঠিন, তরল, বায়বীয়-– এই তিন স্টেটের জ্বালানির মধ্যে তরলটি সবচেয়ে সুবিধাজনক হিসেবে পরিগণিত হয়। এ কারণে তার চাহিদাও বেশি। বেশি তার দামও। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিশ্বব্যাপী ভারসাম্যহীন প্রাপ্যতা।

এ কারণে গুটিকয়েক দেশ, যেখানে এটার প্রাপ্যতা বেশি, তারা এর উপর একটা অন্যায় আধিপত্য সৃষ্টির সুযোগ পায়। ব্যবহারজনিত সুপিরিয়রিটি সম্পর্কিত যে মূল্য (Value) এটার হওয়া উচিত, তা থেকে এটার 'বাজার মূল্য' (Market Price) অনেক বেড়ে যায়। এ অবস্থায় সাশ্রয়ী হবার জন্য তরল জ্বালানির বিকল্প খোঁজা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।

বায়বীয় জ্বালানি (গ্যাস) হতে পারে পরবর্তী বিকল্প। যদিও এটিও তরল জ্বালানির মতো এলাকাভিত্তিক প্রাপ্যতায় আক্রান্ত, তার উপর পর্যাপ্ত স্টোরেজ নিশ্চিত করা খুবই কঠিন একটা চ্যালেঞ্জ। সবচেয়ে সুবিধাজনক অপশন হল, চাহিদানুযায়ী উত্তোলন/উৎপাদন ও তা তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহার করা।

এর অসুবিধা হল, প্রয়োজন হলেই উৎপাদন বাড়ানো আর না হলেই কমানো, এটা সম্ভব নয়। একটি খনিতে যে গ্যাস আছে তা থেকে কতটুকু সবচেয়ে এফিসিয়েন্টভাবে উত্তোলন করা যাবে তার একটি সীমারেখা আছে। ওই সীমা অতিক্রম করা হলে খনির উৎপাদন ক্ষমতা ভেঙে পড়ে। ঠিক এটাই হয়েছিল, অনেক আশাজাগানিয়া সাঙ্গু গ্যাসফিল্ডে।

গ্যাসভিত্তিক ছোট ছোট অনেকগুলি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র চালানো সম্ভব, কিন্তু ইকনোমি-অব-স্কেল অর্জন করতে সক্ষম এ রকম বৃহদায়তনের প্ল্যান্ট স্থাপনে গ্যাস-নির্ভরতা সবার জন্য খুব একটা গ্রহণযোগ্য সমাধান যে নয়, সেটা গ্যাসের বৃহত্তম রিজার্ভ ও উৎপাদনকারী রাশিয়াকে দেখলেই বোঝা যায়। এত বড় গ্যাস উৎপাদন ক্ষমতা থাকার পরেও, তারা কয়লা থেকে সরে আসেনি। প্রায় এক-পঞ্চমাংশ বিদ্যুৎ কয়লাভিত্তিক প্ল্যান্ট থেকে এখনও উৎপাদিত হচ্ছে রাশিয়ায়।

জাপান হল একমাত্র ব্যাতিক্রম যারা আমদানিকৃত লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস (LNG) ব্যবহার করে বিদ্যুতের বেশ বড় একটা চাহিদা মেটায়। কিন্তু যা জাপানের জন্য সম্ভব তা কি বহির্বিশ্বের জন্যও সম্ভব? আসুন একটু হিসেব করে দেখি।

LNG র পরিবহণ সবক্ষেত্রেই একটা বড় জটিলতা। বাংলাদেশে যে হিসেব-নির্ভরতা LNG কে উপযুক্ত অপশন গণ্য করে তাতে LNG র প্রতি মিলিয়ন বিটিইউ হিট কনটেন্টের মূল্য ধরা হয়েছিল ৫ ডলার। বর্তমান বাজার দরে এটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫-২০ ডলারে। এর ফলে এক হিসেবে দেখা যায়, দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট স্ট্যান্ডার্ড গ্যাসের সমমানের LNG আমদানি করা হলে প্রাক্কলিত ব্যয় বেড়ে যাবে বছরে আড়াই থেকে তিন বিলিয়ন ডলার।

যদিও এই গ্যাসে ২৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব, তারপরও LNG পরিবহণজনিত টেকনোলজিক্যাল যে নো-হাউ তা আমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন না হওয়ায়, এ সম্পর্কিত উচ্চমাত্রার পরনির্ভরতার কারণে সৃষ্ট যে অনিশ্চয়তা (Uncertainty) তা জাপান যেভাবে মোকাবেলা করতে পারে, আমাদের পক্ষে সেটা এখনও পারার কথা নয়।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে যে এ অপশন যদি এতই অসাশ্রয়ী (ইনএফিশিয়েন্ট) হবে, তাহলে জাপান, আমেরিকা, রাশিয়া এটা ব্যবহার করছে কীভাবে? উত্তর হল, তারা কার্বন নিঃসরণের থ্রেসহোন্ড ও কোটা অনেক আগেই অতিক্রম করে বসে আছে। সাশ্রয়ী অপশনে গিয়ে কয়লা ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ালে জরিমানা হিসেবে তাদের যে অতিরিক্ত খরচ হবে, তাতে ওটা আর সাশ্রয়ী থাকবে না। বরং বেশি খরচে LNG ব্যবহার করে জরিমানা না দেওয়াটাই হবে সার্বিক খরচের (Total Cost) বিচারে অধিক সাশ্রয়ী।

কার্বন নিঃসরণ পয়েন্ট-অব-ভিউতে আমাদের সে সমস্যা না থাকায় অন্যান্য দূষণসমুহের মাত্রা গ্রহণযোগ্য মানে আনতে পারলেই আমরা সাশ্রয়ীভাবে কম অনিশ্চয়তা (আনসার্টেনিটি) মোকাবেলা করে একটা বড় ঘাটতি বিনাবাধায় কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্ট দিয়ে মেটাতে পারি। আমাদের এ সুযোগ হাতছাড়া করার যুক্তিগ্রাহ্য কোনো কারণ দেখি না।

অবশ্য কয়লার পরিবর্তে LNG ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব হবার জন্য কেউ যদি কার্বন ফান্ড থেকে আমাদের টাকা দেওয়ার নিশ্চয়তা দিতে পারেন, সে ক্ষেত্রে কয়লার চেয়ে বেশি খরচ করে LNG ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমরা কোনো আপত্তি দেখি না। কিন্তু সে ক্ষতিপূরণের অর্থপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা না থাকলে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট আমাদের দেশের জন্য ইকনোমিক হবে না।

উপরের আলোচনায় যে বিষয় পরিষ্কার করতে চেয়েছি তা হল যে তিন ধরনের ফসিল ফুয়েলেই আমাদের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম, এদের দ্বারা বৃহদায়তনের পাওয়ার প্ল্যান্ট করা সম্ভব হলেও, সাশ্রয়ী বিকল্প হিসেবে কয়লাই আমাদের জন্য প্রথম বিকল্প।

কয়লা পরিবহণের দিক দিয়ে লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস (LNG) থেকে এবং ক্রয়মূল্যের বিচারে তরল বিকল্প থেকে অনেক সাশ্রয়ী। এটা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যায় বলে, বাজার পরিস্থিতির দিক দিয়েও যথেষ্ট স্ট্যাবল। সরবরাহজনিত অনিশ্চয়তা নূন্যতম। এর পরিবহণে LNG র মতো বিশেষ ব্যবস্থারও দরকার পড়ে না। তাই পরিবহণ ব্যয়ের দিক থেকেও সাশ্রয়ী।

জ্বালানি হিসেবে কয়লা নির্বাচনের সপক্ষের যুক্তি তো শুনলাম, অসুবিধাগুলি দেখা যাক এবার। কয়লা সলিড বলে এর লোডিং-আনলোডিং-পরিচলন তরল ও গ্যাস থেকে শ্রমসাধ্য, সময়ক্ষেপণকারী, ব্যয়বহুল। অন্যখান থেকে আনা কয়লা তাই ম্যারি-গো-রাউন্ড (MGR) ট্রেনে অথবা জাহাজে পরিবহণ করাটা এবং নূন্যতম সংখ্যক বার লোডিং-আনলোডিং প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নেওয়াটা জরুরি।

এর বাইরে দূষণের ব্যাপারে কয়লার পুরনো বদনাম রয়েছে। ওজনের তুলনায় গ্যাসীয় ও তরল জ্বালানি থেকে অধিক কার্বন নিঃসরণের সঙ্গে কয়লার ইমপিওরিটির (impurity) কারণে এ থেকে ভারী ধাতুর পাশাপাশি সালফার-ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রোজেন-অক্সাইড নির্গত হতে পারে।

এছাড়াও উৎপন্ন ফ্লাই-অ্যাশের একটি অংশ উড়ে যাবার আশংকাও থাকে। তবে আমেরিকার চিত্রটি দেখার পর এবং জার্মান, ইউকে, চায়না, ভারত, অস্ট্রেলিয়াসহ বেশিরভাগ কয়লাপ্রধান বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশসমূহের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এটি বোঝা যায় যে এসব দূষণ গ্রহণযোগ্য মাত্রায় রাখা খুবই সম্ভব।

উপরের আলোচনায় আমরা বুঝতে পারলাম যে কয়লা নিয়ে যে দুটি প্রধান সমস্যার কথা উল্লেখ করা হয় তার একটি (পরিবহণ সমস্যা) সুচিন্তিত স্থান নির্বাচনের মাধ্যমে এবং অন্যটি (দূষণ) প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সহজে সমাধানযোগ্য।

তর্কের খাতিরে এখন কেউ যদি বলতে চান, এটা সমাধানযোগ্য হলে, LNG র সমস্যা সমাধানযোগ্য হবে না কেন– তার উত্তর হল এই যে LNG র পরিবহণ সমস্যা সমাধানের যে হাতিয়ার অর্থাৎ পরিবহণ ব্যবস্থা– সেটা আমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। কিন্তু কয়লার পরিবহণ ও দূষণ সমস্যাবলী সমাধানের একটি হাতিয়ার (স্থান নির্বাচন) শুধু নিয়ন্ত্রানাধীনই নয়, এককালীনও। প্রযুক্তিটিও যেহেতু কিনে আনা হবে তাই লাইফ-সাইকেলে তা নিয়ন্ত্রণাধীন।

সর্বোপরি কয়লা এখন পর্যন্ত ফসিল ফুয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী এবং ইকনোমিক একটি সমাধান। কয়লা-সংশ্লিষ্ট প্রধান সমস্যা দুটিই সমাধানযোগ্য এবং সে সমাধান ব্যবহার করে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো বিপুলভাবে এখনও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল। কয়লা খারাপ এবং জ্বালানি হিসেবে পরিহারযোগ্য– এই ব্লাঙ্কেট স্টেটমেন্ট (blanket statement) বর্তমান বিশ্বের প্রযুক্তিগত অবস্থানের প্রেক্ষিতে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।

কেন রামপাল

এবার সাইট হিসেবে রামপাল নির্বাচনে কয়লার ভূমিকা নিয়ে কিছু কথা বলাটাও যৌক্তিক হবে। যারা কয়লাকে সঠিক জ্বালানি হিসেবে মেনে নিয়েছেন কিন্তু সুন্দরবনের নৈকটের জন্য রামপালকে মানতে পারছেন না, এই অংশটা তাদের জন্য।

রামপাল সম্পর্কে সবচেয়ে বড় অভিযোগই হচ্ছে যে, এত বড় বাংলাদেশে জায়গার কি এতই অভাব যে সুন্দরবনের কাছে প্ল্যান্ট করতে হবে? দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে প্রাসঙ্গিক সব বিষয় আমলে নিয়ে এবং সব দিক বিবেচনা করে গ্রহণযোগ্য প্রয়োজনীয় জায়গার আসলেই অভাব। নিচের মানচিত্রটি দেখুন–

সুন্দরবনকে বাদ দিলে ২০০-৩০০ কিমি-এর যে দুইটা কোস্টাল বেল্ট পাওয়া যায় তা প্রথমত বেশ জনবহুল। এর একটি বৃহদায়তনের জাহাজ ধারণে উপযুক্ত হলেও সেটা ওভারলোডেড। অপরটিকে নতুনভাবে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হলে যে সময়, অর্থ প্রয়োজন তাতে প্রকল্পটি আর সাশ্রয়ী থাকবে কিনা, সেটা একটা প্রশ্ন। তাছাড়া একটি বন্দর নির্মাণ কেবলই বিদ্যুৎ উৎপাদনের কয়লা ওঠা-নামার জন্য, এই ধারণাও খুব সুবিবেচনাপ্রসূত বলে গণ্য করা যায় না।

ওদিকে আমদানিনির্ভর কয়লা যে সাগরের কাছেই আনলোড করার ব্যবস্থা করা জরুরি, তা আগেই বলেছি। আর এ ক্ষেত্রে মূল জাহাজ থেকে বার্জ বা ছোট জাহাজে কয়লা ট্রান্সফার অথবা টারমিনালে অবতরণ দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় অর্জন করা একটা পরীক্ষিত বিদ্যা যাতে পরিকল্পনার বাইরে কিছু ঘটে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। নিচের চিত্র দুটি দেখলেই তা স্পষ্ট হবে–

ছবিতে বার্জ থেকে বড় জাহাজে স্পিল-ফ্রি মেকানিজম ব্যবহার করে কয়লার স্থানান্তর দেখানো হচ্ছে। এর বিপরীত পন্থায় বড় জাহাজ থেকে বার্জ বা ছোট জাহাজে কয়লা ট্রান্সফার করা যাবে। লক্ষ্যণীয় যে, মাদার ভেসেল ও লাইটারেজ কোল ক্যারিয়ার উভয়ই পর্যাপ্ত পরিমাণে ঢাকা যেন কোনো কয়লা ছিটে সাগরে বা নদীতে পড়ে দূষণ সৃষ্টি করতে না পারে।

উপরের ছবিতে সুরক্ষিত ও ঢাকা কয়লাবাহী জাহাজ/বার্জ থেকে কোল-টার্মিনালে (অর্থাৎ সাইটে) কীভাবে কয়লা আনলোড করা হয় তা দেখানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও কয়লা ছিটে নদীদূষণের সম্ভবনা অমূলক।

তাছাড়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখতে হবে। রামপালে যে কয়লা ব্যবহার হবে তা পরিশোধিত কয়লা; তাই ছবিতে যেমন কয়লার স্তূপ লাগোয়া সাদা বরফের উপর কয়লার গুঁড়ার ছিটা দেখা যাচ্ছে না, ঠিক তেমনি রামপালেও কয়লার গুঁড়া উড়ার কোনো কারণ নেই। ১৪ কিলোমিটার দূরে সুন্দরবনে গুঁড়া পৌঁছানোর তো প্রশ্নই আসে না।

আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ স্মার্তব্য বিষয় হল, রামপালই কিন্তু দেশের একমাত্র ও শেষ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নয়। আগামী ২০-৩০ বছরে কমপক্ষে এ রকম দশটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করার প্রয়োজন পড়বে। তার পাঁচটি বা তারও বেশি বরগুনা-সীতাকুণ্ডু বেল্টের কোথাও কোথাও করা হলে একটি মাস্টার প্ল্যানের আওতায় এ এলাকায় শুধু কয়লা ওঠা-নামার জন্য ডেডিকেটেড বন্দর নির্মাণ করা গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতেও পারে।

সে অর্থে, বর্তমান অবকাঠামোগত দিক বিবেচনা করলে বৃহদাকার বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্থান হিসেবে রামপাল জায়গাটি বেশ সুবিবেচনাপ্রসূত। এর সাফল্য-ব্যর্থতার উপর নির্ভর করবে ভবিষ্যৎ কয়লাভিত্তিক উৎপাদন সিদ্ধান্ত এবং সে সম্পর্কিত বন্দর বা অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ।

আবার কেবল সুন্দরবনের নিরাপত্তার জন্য বাগেরহাট ও খুলনা অঞ্চলকে এ বিরাট বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রিক শিল্প-বিনিয়োগভিত্তিক কর্মকাণ্ড থেকে কতকাল নির্বাসিত রাখা যাবে বা রাখাটা যুক্তিসঙ্গত হবে, সে প্রশ্নও এখন যৌক্তিকভাবেই উত্থাপিত।

মানবেতর জীবনযাপন করে সুন্দরবন রক্ষা কি বাগেরহাট-খুলনা-বরগুনা-পিরোজপুর অঞ্চলের মানুষের একক দায়? আর সুন্দরবন সন্নিকটে না থাকায় শিল্প স্থাপনের ও এর মাধ্যমে অর্জিত সব ফসলের দাবিদার অন্যসব উপকূলবাসী?

একটি এস্টাবলিশড বন্দরের সুবিধা, বৃহদাকার জাহাজ হারবারিং-এর সুবিধা, নূন্যতম এফর্টে পর্যাপ্ত জমিপ্রাপ্তির সুবিধা, পরিবেশের নূন্যতম ও নিবারণযোগ্য প্রভাবের মধ্য দিয়ে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রচেষ্টা– তা হেলায় হারিয়ে অন্য স্থান খুঁজতে হবে কোন যুক্তিতে, সেটা বোঝা সত্যিই দুষ্কর।

এ লেখার পরবর্তী অংশে আমরা আলোচনা করব কয়লা ব্যবহারের সময় কোল কম্বাশ্যনের (Coal combustion) ফলে যেসব প্রডাক্ট তৈরি হয় তার ব্যবহার অথবা ক্ষতিকর প্রভাব কতটুকু সেই সম্পর্কে।

Coal Combustion Product (CCP)

কয়লা পোড়ানো নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়ে থাকে। এর মূল কারণ হচ্ছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা পোড়ানোর পর যেসব রেসিডিউলা তৈরি হয় তার পরিবেশবান্ধব ব্যবহার নিয়ে পরিষ্কার ধারণা না থাকা।

প্রথম কথা হল, আমাদের মনে গত দু'এক বছর ধরে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরোধিতার অংশ হিসেবে Coal Combustion Products (CCP) সম্পর্কে যা যা জানানো হয়েছে তার অধিকাংশই গত শতকের শুরুর দিকের জ্ঞানপ্রসূত।

গত একশ বছরে CCP নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হয়েছে এবং ফলাফল হল Coal Combustion এর ফলে যা তৈরি হয় সেগুলোকে এখন আর বাই-প্রডাক্ট বা রেসিডুয়াল বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার কোনো সুযোগ নেই, এখন এগুলোকে 'প্রডাক্ট'-এর মর্যাদাই দেওয়া হয়। অর্থাৎ এদের ব্যবহার এতটাই গ্রহণযোগ্য ও মানসম্মত যে CCP এখন প্রয়োজনীয় নির্মাণসামগ্রীর তালিকাতে যুক্ত।

দেখা যাক রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে CCP হিসেবে কী কী তৈরি হবে:

১. ফ্লাই অ্যাশ; ২. বটম অ্যাশ; ৩. ফ্লু গ্যাস ডি-সালফারাইজেড জিপসাম (FGD জিপসাম)। এখন এদের ব্যবহার ও কার্যকারিতা সম্পর্কে একটু জানি আসুন।

ফ্লাই অ্যাশের কথা

ফ্লাই অ্যাশ হল কয়লা পোড়ানোর ফলে উৎপন্ন ফাইন পার্টিকেল যা পূর্বে ফ্লু গ্যাসের সঙ্গে বেরিয়ে আসত। বর্তমানে কঠোর রেগুলেশনের কারণে ৯৯% বা তারও বেশি ফ্লাই অ্যাশকে ইলেকট্রোস্ট্যাটিক প্রেসিপিটেটর বা ফ্যাব্রিক ফিল্টারের মাধ্যমে ফ্লু গ্যাস থেকে পৃথক করা বাধ্যতামূলক।

ফ্লাই অ্যাশের cementitious এবং pozzolanic প্রোপার্টি এখন কংক্রিট তৈরিতে সাধারণ পোর্টল্যান্ড সিমেন্টের বিকল্প হিসেবে কাজে লাগানো হচ্ছে। সে সঙ্গে ল্যান্ডফিলিং-এ ফ্লাই অ্যাশের ব্যাবহার তো আছেই। cementitious না pozzolanic এ দুই ক্যাটাগরির উপর ভিত্তি করে ফ্লাই অ্যাশকে দুভাগে ভাগ করা যায়: ক্লাস C এবং ক্লাস F; নিচে এই দু ধরনের ফ্লাই অ্যাশের ছবি দেওয়া হল–



ক্লাস সি (class C) ফ্লাই অ্যাশে তুলনামূলক বেশি ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা কিনা লিগনাইট (lignite) বা সাব-বিটুমিনাস (Sub-bituminous) কয়লা থেকে পাওয়া যায়। ক্লাস সি (class C) ফ্লাই অ্যাশে Cementitious ক্যারেকটারিস্টিক বেশি থাকে; পানির সংস্পর্শে এলে এটি সাধারণ পোর্টল্যান্ড সিমেন্টের মতোই মাটিকে স্ট্যাবিলাইজ করতে ও অস্থায়ী (যেন প্রয়োজনে কংক্রিট ভেঙে ফেলা যায়) পেভমেন্ট করতে কাজে লাগে।

অন্যদিকে ক্লাস এফ ফ্লাই অ্যাশ (Class F Fly Ash) পাওয়া যায় বিটুমিনাস কয়লা থেকে। ক্লাস এফ (Class F) ফ্লাই অ্যাশে ক্যালসিয়াম কম থাকে এবং সাধারণত উচ্চতর মাত্রায় সিলিকা ও আয়রন থাকে। ক্লাস এফ (Class F) ফ্লাই অ্যাশ মূলত অ্যালুমিনয় সিলিকেট পার্টিকেল দিয়েই তৈরি, তবে তাতে কিছু ক্রিস্টাল পদার্থও থাকে।

কেন ফ্লাই অ্যাশের এ কেমিক্যাল ও ফিজিক্যাল প্রপার্টিগুলো নিয়ে লিখছি? কারণ এগুলো আপনাকে বুঝতে সাহায্য করবে যে কেন ফ্লাই অ্যাশের ব্যবহারকে কংক্রিটের জন্যে উপকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সাধারণ পোর্টল্যান্ড সিমেন্টে হাইড্রেশনের কারণে ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড তৈরি হয়। ফ্লাই অ্যাশের গ্লাসি পদার্থ (অ্যালুমিনো সিলিকেট) ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইডের সঙ্গে রিঅ্যাকশন করে বাড়তি cementitious পদার্থ উৎপন্ন করে যা কিনা কংক্রিটে বাড়তি স্ট্রেংথ ও স্থায়ীত্ব দান করে।

যদিও অত্যন্ত প্রচলিত একটি ভ্রান্ত ধারণা যে, ফ্লাই অ্যাশের কার্বন বাতাস অ্যাবসর্ব করে একে ফ্রেশ কংক্রিট থেকে আলাদা করে ফেলবে, কিন্তু সঠিকভাবে Coal combustion থেকে উৎপন্ন ফ্লাই অ্যাশে কার্বনের পরিমাণ খুবই কম থাকে।

অন্য যে বিষয় নির্মাণকাজে ফ্ল্যাই অ্যাশ ব্যবহারের ক্ষেত্রে জরুরি তা হল ফ্লাই অ্যাশের পার্টিকেল সাইজ, কারণ ছোট পার্টিকেল বেশি ভালো রিঅ্যাকশন করে। তাই কংক্রিট নির্মাণে সিমেন্ট সাবসটিটিউট হিসেবে ফ্লাই অ্যাশের ব্যবহারে American Society for Testing and Materials (ASTM) যে দুটি মাত্র রেগুলেশন দিয়েছে তা হল–

75% of the ash must have a fineness of 45 micron or less and have a carbon content, measured by the loss of ignition (LOI), of less than 4%– অর্থাৎ ৭৫% ফ্লাই অ্যাশ পার্টিকেল যদি ৪৫ মাইক্রন বা এর চাইতে ছোট হয় এবং এর কার্বন কনটেন্ট যদি ৪% এর কম হয় তাহলে তা কংক্রিট তৈরিতে সিমেন্ট রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে ব্যাবহার করা যাবে।

এর বাইরে আমেরিকাতে অন্য কোনো ধরনের এনভায়রেনমেন্টাল রেগুলেশন নেই ফ্লাই অ্যাশ ব্যবহারের ক্ষেত্রে।

আমেরিকান কোল অ্যাশ সোসাইটি, ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্টেশন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ইলেকট্রিক ইন্ডাস্ট্রিসহ সকল রেগুলেটরি সংস্থা ফ্লাই অ্যাশকে 'নন-হ্যাজারডাস' এবং 'উচ্চমানের নির্মাণসামগ্রী' হিসেবে ডিক্লারেশন দিয়েছে।

US EPA ২০০৫ সাল থেকেই ফ্লাই অ্যাশের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বাড়ানোয় উৎসাহ দিয়ে আসছে এই বলে–

"The U.S. Environmental Protection Agency (EPA) encourages the use of coal combustion products (CCPs) in highway construction projects such as in concrete, road base, embankments, flowable fill, and other beneficial applications. The increased use of these materials, which would otherwise be discarded as waste, can reduce greenhouse gases in the atmosphere, reduce energy consumption, and conserve natural resources".

এটি বর্তমানে নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত যে কংক্রিটে ফ্লাই অ্যাশের ব্যবহার পরিবেশবান্ধব ও ইকোনমিকই শুধু নয়, বরং কংক্রিটে ফ্লাই অ্যাশের ব্যবহার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বাড়তি সুবিধা প্রদান করে। যেমন, কংক্রিটে ফ্লাই অ্যাশের উপস্থিতি কংক্রিটের কার্যকারিতা বাড়ায়; কংক্রিটের সেগ্রেগেশান, ব্লিডিং, হিট ইভলিউশন ও পারমিয়েবিলিটি কমায়; কনক্রিটে অ্যালকালি আগ্রেগেশান বা সিলিকেট-অ্যালকালি রিঅ্যাকশন প্রশমন করে।

সূত্র: U.S. ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্টেশন, U.S. EPA এবং U.K. এনভায়রেনমেনটাল এজেন্সি। ইউএস ফেডারেল হাইওয়ে অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের এই লিঙ্কে ফ্লাই অ্যাশের বিভিন্ন ব্যবহার ও সুবিধা নিয়ে বিস্তারিত পাবেন–

http://www.fhwa.dot.gov/pavement/recycling/fach02.cfm

আর ইউএস গভর্নমেন্টের ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্টেশনের এ লিঙ্কে পাবেন ফ্লাই অ্যাশের নানান টেকনিক্যাল দিক–

http://www.fhwa.dot.gov/infrastructure/materialsgrp/flyash.htm

শুধু কনক্রিটেই নয়, আরও নানাভাবে ফ্লাই অ্যাশ ব্যবহার হচ্ছে সারাবিশ্বে এসব কাজে— ফ্লোয়েবল ও স্ট্রাকচারাল ফিল হিসেবে, স্ট্রাকচারাল কাজের রোড বেইসে, কৃষিকাজে, বন্ধ হয়ে যাওয়া খনি ভরাটে, পেইন্ট-কোটিং-অ্যাডহেসিভে Cenospheres হিসেবে (A cenosphere is a light weight, inert, hollow sphere made largely of silica and alumina and filled with air or inert gas), মাটির স্ট্যাবিলাইজেশনে এবং অবশ্যই ইট ও পোর্টল্যান্ড সিমেন্টে।

আসুন কয়েকটি উদাহরণ দেখি কী কী বৃহৎ ধরনের নির্মাণকাজে ফ্লাই অ্যাশ ব্যবহার হচ্ছে–

১৯৪৮ সালে ফ্লাই অ্যাশের ব্যবহার মেজর ব্রেকথ্রু পায় যখন Hungry Horse Dam নির্মাণের জন্যে ১২০,০০০ মেট্রিক টন ফ্লাই অ্যাশ ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত দেয় U.S. Bureau of Reclamation– ২০১০ সালে শেষ হওয়া Taum Sauk Upper Reservoir (Missouri) এ ১৮০,০০০ টন ফ্লাই অ্যাশ ব্যবহার হয়েছে।

শুধু বড় বড় নির্মাণকাজে নয়, আশি বছরের বেশি সময় ধরে ফ্লাই অ্যাশ ব্যবহার হচ্ছে বিল্ডিং-এর নির্মাণসামগ্রী হিসেবে। বর্তমানে সমুদ্রের ধারে সুউচ্চ বহুতল ভবন নির্মাণে পোর্টল্যান্ড সিমেন্টের রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে ৩৩% থেকে ৪৫% শতাংশ ফ্লাই অ্যাশ ব্যবহার করা হয়েছে ভ্যাঙ্কুভারে–

http://www.cement.org/tech/cct_durability_fly_ash.asp

ফ্লাই অ্যাশ ব্যবহার করে বর্তমানে যে উন্নতমানের ইট (ব্রিক) তৈরি হচ্ছে তা দেখতে যেমন দৃষ্টিনন্দন তেমনি শক্তিশালী–

http://themoderngreen.com/2010/01/calstars-fly-ash-bricks/

http://continuingeducation.construction.com/crs.php?L=219&C=878

পাঠকের সুবিধার্থে নিচে এসব প্রজেক্টের কিছু ছবি দেওয়া হল–

সবাইকে ধন্যবাদ। রামপাল অভিযোগনামার শেষ পর্ব নিয়ে হাজির হব আগামী দু'তিন দিনের মধ্যেই।

ড. আঞ্জুমান ইসলাম: পানি পরিশোধন ও পরিবেশ প্রকৌশলী।


কাজী আহমেদ পারভেজ
: শিক্ষক, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি।