বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে

Published : 13 April 2013, 11:29 AM
Updated : 13 April 2013, 11:29 AM

বাংলাদেশে বিরাজমান রাজনৈতিক অস্থিরতার পেছনে যে কারণগুলো কাজ করছে তার অন্যতম হল আসন্ন নির্বাচনের সময় কী ধরনের সরকার ক্ষমতায় থাকবে সে বিষয়ে সরকার ও প্রধান বিরোধী দলের মধ্যে মতানৈক্য। ক্ষমতাসীন দল পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার অবসান ঘটানোর ফলে অবস্থা এই দাঁড়িয়েছে যে, বর্তমান ক্ষমতাসীনরা যে ধরনের সরকার চাইবেন তার আওতায়ই নির্বাচন করতে হবে।

সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্টত এ ধারণা দেওয়া হয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি 'অন্তর্বর্তী' সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাইরে তাঁরা কিছু বিবেচনা করতে নারাজ। যদিও এমন গুজবও চালু আছে যার সূত্র ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ রকম ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, ক্ষমতাসীন দল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে সামনে রেখে অন্য কিছু বিকল্পও ভাবছে। যার মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রপতির হাতে আরও ক্ষমতা দিয়ে শেখ হাসিনাকে সে পদে নির্বাচিত করা।

বাংলাদেশে গুজব এবং ষড়যন্ত্রতত্ত্ব যে সবসময়ই সম্পূর্ণ ভুল হয় তা নয়। তারপরও এ নিয়ে সরকারি দলের কাছ থেকে সরাসরি কোনো কিছু শোনা যায়নি বলে আমরা ধরে নিতে পারি যে ক্ষমতাসীন দল তা গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে না। এ ধরনের পদক্ষেপের নেতিবাচক ফল যে ইতিবাচক ফলের চেয়ে বেশি হবে তা বোঝা যায়। তাহলে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ভিন্নমুখ দেখা যাবে, কিন্তু বিরোধীদের দাবির সুরাহা হবে না। দেশে যে রাজনৈতিক সংকট আছে তা কয়েক কদম পেছাতে পারে, কিন্ত এগুবে না এক কদমও।

এ রকম প্রেক্ষাপটে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর পক্ষ থেকে দেশের বিরাজমান সংকটমোচনে, বিশেষ করে নির্বাচনকালীন কী ধরনের সরকার কাঠামো করা যেতে পারে তার কিছু প্রস্তাব উপস্থিত করা হয়েছে। এ ধরনের প্রস্তাব যে আগেও কোনো কোনো মহল থেকে করা হয়নি তা নয়, কিন্ত সংগঠন হিসেবে টিআইবির অবস্থানের কারণে বিষয়টি গণমাধ্যম এবং অন্যদের মনোযোগ লাভ করেছে। এ বিষয়ে সরকার ও বিরোধী দল উভয়কেই আশু প্রতিক্রিয়া দেখাতে হয়েছে।

প্রস্তাবটিতে এমন সব বিষয় আছে, যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার অবকাশ রয়েছে। একটি 'অবাধ, নিরপেক্ষ ও সবার অংশগ্রহণমূলক' নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য টিআইবির পক্ষ থেকে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তাতে অন্যান্য বিকল্পের মধ্যে এ বিষয়ে একটা গণভোট অনুষ্ঠানের কথাও রয়েছে। অনেকের হয়তো মনে থাকবে যে গত বছর ডিসেম্বরের শেষ দিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলি খান তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে যে চারটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন তার মধ্যেও গণভোটের কথা ছিল; তিনি প্রস্তাব দিয়েছিলেন – 'আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে বিএনপি একটি পরিকল্পনা দিতে পারে। এরপর বিএনপির ওই প্রস্তাবের ওপর গণভোট হতে পারে।'

২০১২ সালের এপ্রিল মাসে রাজনৈতিক সংকট এতটা ঘনীভূত হওয়ার আগে আমি সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক নিবন্ধে যে প্রস্তাবগুলো রেখেছিলাম- এসবের মধ্যে অন্যতম বিকল্প হিসেবে গণভোটের প্রস্তাবও ছিল (দেখুন, "গণভোট অথবা ভিন্ন ধরনের 'নির্বাচিত' সরকার", প্রথম আলো, ২ এপ্রিল ২০১২)। আমার বক্তব্য ছিল যে, বাংলাদেশের নাগরিকেরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক— এটা চান কি না, তা নিয়ে গণভোটের আয়োজন করা গেলে সরকার ও বিরোধীদের ওপর নৈতিক চাপ সৃষ্টি হবে।

প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ করা দরকার যে, বাংলাদেশের সংবিধানে কোনো বিষয়ে গণভোট অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা নেই। ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমান সংবিধানে ১৪২ (১ক) অনুচ্ছেদ সংযোজন করে সংবিধানের কতিপয় মৌলিক ধারা সংশোধনের জন্য গণভোটের বিধান রেখেছিলেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হয়ে যাওয়ার ফলে বিধানটিও বাতিল হয়ে গেছে।

এ ধারা না থাকার অর্থ এটা নয় যে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনপ্রতিনিধি চাইলে কোনো বিষয়ে গণভোট করতে পারবে না। সরকারপ্রধান যখন অত্যন্ত অবজ্ঞার সঙ্গে আকবর আলি খানের দেওয়া সব প্রস্তাবই পরদিন নাকচ করে দেন তখন অনুমান করতে পারি যে, এ বিষয়ে এখন সরকারি দলের উৎসাহের কারণ নেই।

টিআইবির দেওয়া প্রস্তাবের মূখ্য দিক অবশ্য গণভোট নয়। সংগঠনটির দেওয়া প্রস্তাবে নির্বাচনকালীন সরকারের কয়েকটি বিকল্প কাঠামোর কথা বলা হয়েছে। টিআইবির প্রস্তাবিত সবগুলো কাঠামোর ভিত্তি হচ্ছে, "পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে উভয় জোট থেকে সমান সংখ্যক (৪-৬ বা উভয় জোটের কাছে গ্রহণযোগ্য সংখ্যক) নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে নিয়ে সংসদীয় ঐকমত্য কমিটি," যার সাফল্যের উপর নির্ভর করবে বিকল্প কাঠামো গড়ে তোলা যাবে কি না।

এ ধরনের কমিটি গঠনের জন্য যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি দরকার তা আছে কি না সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ। তারপরও এ কথা অস্বীকারের উপায় নেই যে, সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতা ছাড়া আর কোনো কাঙ্ক্ষিত উপায় নেই। আর সমঝোতার জন্য কোথাও না কোথাও তো শুরু করতে হবে, এটা তার প্রথম ধাপ হতে পারে। তবে মনে রাখা দরকার যে, এ ধরনের কমিটি গঠনের আগে দরকার হবে এ নিশ্চয়তা যে কমিটির যে কোনো প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য সংবিধান সংশোধনের দরকার হলে সরকারি দল তা করতে রাজি আছে এবং আলোচনার অনুকূল পরিবেশের জন্য তারা বিরোধী দলের শীর্ষনেতাদের জামিনে বাধা দেবে না।

পাশাপাশি বিরোধী জোটকে এ বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে বলতে হবে যে তাঁরা তাঁদের অব্যাহত সহিংস কর্মসূচি বন্ধ করবে, এ প্রক্রিয়া চলাকালে তাঁরা হরতালের মতো পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকবে। সর্বোপরি এ ধরনের প্রস্তাব বাস্তবায়নে তাঁরা অঙ্গীকারাবদ্ধ এমন নিশ্চয়তা ছাড়া কমিটি গঠনের বা কমিটির পক্ষ থেকে প্রস্তাবের কোনো মূল্য থাকবে না।

কিন্ত এ কমিটি গঠনের উদযোগ আসবে কোন পক্ষ থেকে? এ জন্য সংসদের স্পিকারের উপর নির্ভর করতে হবে, যেমনটি প্রস্তাবে বলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্পিকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের উদযোগ এলে তা গ্রহণযোগ্য হওয়াই বাঞ্ছনীয়। কিন্ত সেখানে ব্যক্তি হিসেবে বর্তমান স্পিকার আবদুল হামিদ এ উদযোগ নিলে যতটা আশাবাদী হওয়া যেত, অন্য কেউ নিলে ততটা হবে কি না সেটা খুব নিশ্চিত করে বলা মুশকিল।

তার চেয়েও বড় কথা হল, এমন আহ্বান তখনই বাস্তবায়নের সম্ভাবনা আছে যখন সরকার ও বিরোধীরা এ বিষয়ে একমত যে দেশে একটা রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে এবং সে জন্য তাদের একত্রে কাজ করে সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। সম্প্রতি বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রীর কথায় মনে হয়েছে যে দেশে কোনো সংকট আছে, তিনি স্বীকার করতে চান না।

অন্যদিকে প্রধান বিরোধীদল যেভাবে জামায়াতের প্রতি সমর্থনের ব্যাপারে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়ে চলেছে তাতে কখনও কখনও সংকট সমাধানে তাদেরও যে ভূমিকা রয়েছে সে বিষয়ে তাদের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামির প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন থেকেও এ ধারণা করা যায় যে বিএনপির অনেক পদক্ষেপই বিবেচনাপ্রসূত নয়। নির্বাচনের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে এসে সরকার পতনের এক দফা দাবি তোলার মধ্য দিয়েও বিএনপি সংকট সমাধানের পথে নেতিবাচক ভূমিকাই পালন করেছে।

টিআইবির প্রস্তাবে নির্বাচনের সময় সরকারের কয়েক ধরনের কাঠামো বিকল্প হিসেবে বিবেচনার জন্য হাজির করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ঐকমত্য কমিটি নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন সরকারপ্রধান মনোনয়ন দেবে। পরে সরকারপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন সরকারের ১০ সদস্যের তালিকা করা হবে। অথবা, ঐকমত্য কমিটি নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভার ১০ সদস্যের তালিকা করবে। পরে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সরকারপ্রধান মনোনয়ন করা হবে। সরকারপ্রধান মনোনয়নের ক্ষেত্রে কমিটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারলে অনধিক তিন ব্যক্তির একটি তালিকা স্পিকারের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপন করা হবে। ওই তালিকা থেকে রাষ্ট্রপতি একজনকে সরকারপ্রধান হিসেবে মনোনয়ন দেবেন।

মন্ত্রিসভার সম্ভাব্য সদস্যদের ব্যাপারে ডিসেম্বরে দেওয়া আকবর আলি খানের প্রস্তাব ছিল : "আওয়ামী লীগ বিএনপির ৩৬ জন আইনপ্রণেতার মধ্য থেকে পাঁচজনকে বাছাই করতে পারে। আর বিএনপি প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের ২৭৪ জন সাংসদের মধ্য থেকে পাঁচজনকে বাছাই করতে পারে। তাঁদের নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রিসভা গঠিত হতে পারে"।

এখন টিআইবির প্রস্তাবে বলা হচ্ছে : " উভয় জোট থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও অনির্বাচিত/নির্দলীয় ব্যক্তিদের নিয়ে; শুধু অনির্বাচিত/নির্দলীয় ব্যক্তিদের নিয়ে এ মন্ত্রিসভা করা যেতে পারে; কিংবা বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের দলীয় অনুপাতের ভিত্তিতে সদস্য মনোনীত করা যেতে পারে।"

এ ধরনের প্রস্তাব আকবর আলি খানও দিয়েছিলেন; তাঁর তৃতীয় প্রস্তাবটি ছিল, "বিএনপি ও আওয়ামী লীগ ১০ জন নিরপেক্ষ লোকের নাম দিতে পারে। এরপর তাদের দেওয়া নামগুলো থেকে জাতীয় সংসদ পাঁচজনকে নির্বাচন করতে পারে। তাঁরা সবাই মিলে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন করতে পারেন, অথবা লটারির মাধ্যমেও প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচিত হতে পারেন'।

টিআইবির প্রস্তাবে কেবলমাত্র অনির্বাচিত/নির্দলীয় ব্যক্তিদের নিয়ে এ মন্ত্রিসভা গঠনের যে কথা বলা হয়েছে সে অংশটি পঞ্চদশ সংশোধনীর আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামো থেকে মোটেই ভিন্ন নয় বলে এটিতে সরকারি দলের সমর্থন থাকার কোনো কারণ নেই। প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার স্পষ্ট করেই বলেছেন যে, অনির্বাচিত সরকারের দিন শেষ হয়ে গেছে। অন্যদিকে তিনি এটাও বলেছেন যে, নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারে বিএনপির নির্বাচিত সদস্যদের রাখার ব্যাপারে তাঁর আপত্তি নেই।

নির্বাচিত সরকার রাখার ব্যাপারে ক্ষমতাসীনদের এ পছন্দকে প্রাধান্য দিয়েও অন্য ধরনের সরকার গঠন করা যায় বলে আমার ধারণা। সে বিষয়ে আমার বক্তব্য ছিল, দুধরনের বিকল্প। প্রথম বিকল্প হল, নির্বাচনের ৯০ দিন অব্যবহিত পূর্বে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রী সংসদ থেকে পদত্যাগ করবেন। তাঁদের আসনে দুজন নির্দলীয় ব্যক্তি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন। ওই দুজনের একজন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন এবং অন্যজন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মন্ত্রণালয় পরিচালনা করবেন।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত দুজনের মধ্যে পদ বণ্টনের দায়িত্ব পালন করবেন। বাকি মন্ত্রিসভা তৈরি হবে প্রধান দুই দলের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে সমসংখ্যক সদস্য নিয়ে। অন্যান্য দল, যারা গত নির্বাচনে মোট ভোটের নির্ধারিত ভাগ (যেমন—৫ শতাংশ) পেয়েছে, তাদের প্রতিনিধিকেও মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। প্রধানমন্ত্রী ও অন্য গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ওই দুই ব্যক্তি পরবর্তী পাঁচ বছর সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য হতে পারবেন না বা সরকারি কোনো লাভজনক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হতে পারবেন না।

দ্বিতীয় বিকল্প হল, সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের অব্যবহিত পূর্বে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীসহ মোট ১০ জন সংসদ সদস্য পদত্যাগ করবেন। ওই আসনগুলোতে উপনির্বাচনের মাধ্যমে ১০ জন সদস্য নির্বাচিত হবেন, যাঁরা অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত এই ১০ জনের মধ্যে একজনকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেবেন।

টিআইবির প্রস্তাবিত বিভিন্ন কাঠামোর সঙ্গে আমার পূর্বের দেওয়া প্রস্তাব বা আকবর আলি খানের দেওয়া প্রস্তাবের তুলনা করার উদ্দেশ্য এ নয় যে, কোনো একটি প্রস্তাবের চেয়ে অন্য কোনো একটি প্রস্তাব বেশি ভালো তা দেখানো; বরং এ বিষয়ের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করা যে রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে এখন বিভিন্ন ধরনের বিকল্প রয়েছে, যা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে তাঁরা একটা সমাধানের পথ বের করতে পারেন।

প্রায়শই সরকার ও সরকারি দলের নেতারা বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনার কথা বলে থাকেন। কিন্তু সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব কখনও দেওয়া হয়েছিল বলে আমাদের জানা নেই। তদুপরি প্রতিপক্ষের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কারাগারে রেখে আলোচনার কথা বলা নিরর্থক, এটা নিশ্চয়ই সরকারি দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর জানা আছে।

সরকার এবং বিরোধীরা এসব বিকল্পের ব্যাপারে কী মনোভাব পোষণ করেন তা থেকে বোঝা যাবে যে তাঁরা আলোচনায় বসলে লাভ হবে কি না। প্রস্তাবিত এ বিকল্পগুলো বিবেচনার জন্য সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। প্রথম পদক্ষেপের ভারটা সরকারেরই। তার কারণ হল এগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে সংবিধানে আসন্ন নির্বাচনের জন্য যে বিধান আছে কোনো না কোনোভাবে তা থেকে বাইরে যেতে হবে। একমাত্র সরকারি দলই সেটা করতে পারে।

সরকার সে রকম ইঙ্গিত না দিলে বর্তমান রাজনৈতিক সংকট থেকে বেরুবার আর কোনো পথ আছে বলে মনে হয় না। টিআইবির পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে যে, প্রস্তাবিত এ নির্বাচনকালীন সরকার কাঠামো ও প্রক্রিয়া গৃহীত হলে দশম সংসদ নির্বাচনসহ পরবর্তী নির্বাচনে তা কার্যকর করার জন্য সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন করার দরকার হবে, যার অর্থ হল এখনকার ব্যবস্থার মধ্যে সমাধানের চেষ্টা করলে ফলোদয়ের সম্ভাবনা নেই। সরকারকে এখন এটা কে বোঝাবে সেটাই প্রশ্ন।

প্রচলিত রূপক ব্যবহার করে প্রশ্ন করা যায়, বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?

আলী রীয়াজ : যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনভার্সিটির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক।