নাগরিকের গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন

রাইসুল ইসলাম সৌরভ
Published : 30 Oct 2011, 03:07 PM
Updated : 30 Oct 2011, 03:07 PM

ব্যক্তির গোপনীয়তার অধিকার মানুষের ব্যক্তি মর্যাদার সঙ্গে জড়িত। গোপনীয়তার অধিকার নাগরিকের অন্যতম মৌলিক অধিকার এবং তা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইন কর্তৃক স্বীকৃত। গোপনীয়তার অধিকারের সঙ্গে সংগঠন করার অধিকার, চিন্তা ও বিবেকের অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতার মতো অন্যান্য মৌলিক মানবাধিকারগুলিও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এক কথায় গোপনীয়তার অধিকার হলো অবিচ্ছেদ্য এবং সর্বজনীন একটি মানবাধিকার, যা মানুষ তার জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই সহজাতভাবে অর্জন করে। তাই ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার মানুষের জীবন ধারণের অধিকারের সঙ্গেও সম্পৃক্ত।

বিগত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে রাজধানীর একটি প্রখ্যাত সৌন্দর্য চর্চা (Beauty parlour) প্রতিষ্ঠানের স্পা সেবার পোশাক পরিবর্তন কক্ষে গোপন ক্যামেরার মাধ্যমে ভিডিও চিত্র ধারণের অভিযোগ উঠলে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার যত্রতত্র ব্যবহার নাগরিকের গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন করছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ছাড়াও ইদানিং সময়ে বর্তমান উঠতি প্রজন্মের ভেতর অনুমতির তোয়াক্কা না করেই মুঠোফোনের ক্যামেরা ব্যবহার করে অনাকাঙ্ক্ষিত, স্পর্শকাতর বা বিব্রতকর মুহূর্তের চিত্র ধারণের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে চিত্রগ্রাহকেরা কেবল চিত্রগ্রহন করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না অধিকন্তু কখনো কখনো ধারণকৃত স্থির অথবা চলচ্চিত্র ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিচ্ছে বা ছড়িয়ে দেবার হুমকি দিচ্ছে। কখনো কখনো আবার সরলতার সুযোগ নিয়ে কিংবা প্রতারণা বা জোর করে কারো গোপন মুহূর্ত ধারণ করে অবৈধভাবে বাণিজ্যিক ফায়দা লোটার প্রচেষ্টা করছে। এসবের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়ও নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে অহরহ।

বাংলাদেশে সিসিটিভি'র ব্যবহার বা নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সুরক্ষা প্রদান বিষয়ে আলাদা কোন নীতিমাল বা আইন নেই। তাই এদেশে সিসিটিভি'র ব্যবহারে কোনরূপ নিয়ম নীতি বা ন্যূনতম নৈতিকতার বালাই পরিলক্ষীত হয়না। অথচ বিশ্বের সর্বত্রই সিসিটিভি'র ব্যবহারের কিছু স্বীকৃত নিয়ম-কানুন আছে। তারপরও যে সেসব দেশে সিসিটিভি'র মাধ্যমে মাঝেমধ্যে গোপনীয়তা লঙ্ঘন হয়না তা নয়, কিন্তু কালেভদ্রে সেসব বিষয় জনসম্মুখে প্রকাশ পেলেও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয় এবং ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তির জন্য পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে তবেই রেহাই পাওয়া যায়। অথচ আমাদের দেশে যেখানে আইনই নেই সেখানে আইনি প্রতিকার পাওয়াতো পরাবাস্তব এক স্বপ্নের নাম। যেসব ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট আইনি বিধান আছে সেসব ক্ষেত্রে অধিকার লঙ্ঘিত হলে যেখানে এ দেশে আইনি প্রতিকার পাওয়া যায় না সেখানে নীতিমালার অনুপস্থিতিতেই সুরক্ষা পাওয়াতো অনেক দূরের পথ! তাছাড়া আমাদের দেশে সামাজিক মর্যাদা ও আইনি ঝামেলা থেকে দূরে থাকার মানসিকতার কারণেও ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব ব্যাপারে আইনি সুরক্ষা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়।

নিরাপত্তার ধুয়ো তুলে যেখানে-সেখানে সিসিটিভি লাগালেই স্থাপনকারীর দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। বরং নিয়ম হলো কারো চিত্র ধারণ করার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে যথাযথভাবে অনুমতি নিয়ে নেয়া এবং ছবিটি কী কাজে ব্যবহৃত হবে তা তাকে বুঝিয়ে বলা। তবে প্রতারণার মাধ্যমে বা ভুল বুঝিয়ে কারো সম্মতি নিলেও আইনগতভাবে সে সম্মতির কোন দাম নেই। কোন জায়গায় সিসিটিভি কার্যকর থাকলে সেখানে অবশ্যই দৃশ্যমান স্থানে এবং স্পষ্ট ভাষায় লিখিত নোটিশের মাধ্যমে আগন্তুকদের এ বিষয়ে সতর্ক করে দিতে হবে। অন্যথা স্থাপনকারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যায়। যেখানে স্বাভাবিকভাবেই গোপনীয়তা বজায় রাখার কথা (যেমনঃ টয়লেট, গোসলখানা, পোশাক পরিবর্তনের স্থান, হোটেল/বিশ্রামাগারের শয়নকক্ষ, চিকিৎসা বা অন্য কোন প্রয়োজনে যেখানে গোপনীয়তা বজায় রাখা আবশ্যক ইত্যাদি) সেখানে কোন অবস্থাতেই এ ধরনের কোন গোপন ক্যামেরা চালানো যাবেনা। তাছাড়া ক্যামেরাটি কোথায় লাগানো এবং কত সময়ব্যাপী ভিডিও ধারণ করা হবে সে বিষয়টিও স্পষ্ট করতে হবে। এই নিয়মের ব্যতয় ঘটিয়ে কারও আপত্তিকর কোন চিত্র বা ভিডিও ধারণ করা হলে তার বিরুদ্ধে ২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনানুযায়ী (ধারা ৫৭ ও ৬৭) ব্যবস্থা নেয়া যাবে। এছাড়া ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ২৯৯, ৪০৫ ও ৪০৯ ধারানুযায়ী কারো অজান্তে ভিডিও ফুটেজ ধারণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এসব ক্ষেত্রে কোন কারণে কেউ মামলা না করলেও রাষ্ট্র পক্ষ হয়ে পুলিশের মাধ্যমে উদ্যোগ নিয়ে মামলা করতে পারে। তাই নীতিমালার অনুপস্থিতির দোহাই দিয়ে কোন নাগরিকের আইনি সুরক্ষা পাবার অধিকার থেকে বঞ্চিত করার সুযোগ নেই।

সিসিটিভিতে ধারণ করা কোন ছবি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি দেখতে চাইলে তাকে তৎক্ষণাৎ তা বিনা কর্তনে (censor) দেখার ব্যবস্থা করে দিতে হবে এবং সেই ধারণকৃত চিত্র সম্বন্ধে কোন আপত্তি জানালে তা স্থায়ীরূপে মুছে ফেলার এবং প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ভিডিওর মাস্টারকপি প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। কোনক্রমেই বাণিজ্যিক বা অসৎ উদ্দেশ্যে ওই ভিডিওচিত্র ব্যবহার করা যাবে না। এমনকি জরুরি প্রয়োজনে ওই ভিডিওচিত্র অন্য কোথাও ব্যবহার করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অনুমতি নিতে হবে। যদিও সরকার চাইলে নিরাপত্তা জনিত কারণে কিংবা জনস্বার্থে এ ধরনের ভিডিওচিত্র সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে সংগ্রহ করতে পারে তবে সে ক্ষেত্রেও নাগরিকের গোপনীয়তার অধিকারের বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত এবং যথাযথভাবে কারণ দর্শানো উচিত। এছাড়া সরকারিভাবে কোন স্থানের চিত্র বা ভিডিও ধারণ করার উদ্দেশে কোন ধরণের ক্যামেরা ব্যাবহার করা হলে তা প্রকাশ করা উচিত। এমনকি রাস্তা বা প্রকাশ্য কোন স্থানের ক্ষেত্রে এরকম কিছু করতে চাইলে যথাযথ চিহ্ন/নোটিশের দ্বারা ক্যামেরার উপস্থিতি জানিয়ে দেয়া উচিৎ। কোন নাগরিকের পূর্বানুমতি ব্যতীত রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা/আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক চিত্র ধারণ বা অন্য কোন উপায়ে ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় বিঘ্ন সৃষ্টি করাও আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

এদিকে সৌন্দর্য চর্চা কেন্দ্রগুলোতে নিয়ম-নীতির বালাই না মেনে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় গেল ১০ অক্টোবর ২০১১ তারিখে হাইকোর্ট এক নির্দেশের মাধ্যমে রূপচর্চা কেন্দ্রের সেবাকক্ষ থেকে সিসি ক্যামেরা অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন। আদালত একই সঙ্গে বিভিন্ন সৌন্দর্য চর্চা কেন্দ্রের সেবাকক্ষে সিসি ক্যামেরা ব্যবহারে নীতিমালা কেন প্রণয়ন করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছেন।

মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণার ১২ অনুচ্ছেদ, রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকারের আন্তর্জাতিক সনদের ১৭ অনুচ্ছেদসহ (বাংলাদেশ যাতে স্বাক্ষর করে পক্ষভুক্ত হয়েছে) আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সনদে গোপনীয়তার অধিকার স্বীকৃতি পেয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা না হলেও ১১ অনুচ্ছেদে "ব্যক্তির মর্যাদা" এবং ৪৩ অনুচ্ছেদে "গৃহ ও যোগাযোগের রক্ষণ" নামে বৃহদার্থে বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে। এছাড়া ২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৭৮ এবং ৭৯ নম্বর ধারায় নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার সুরক্ষা সম্বন্ধে বলা হয়েছে।

তবে আইনটি এখনো পর্যন্ত যথাযথভাবে প্রয়োগ হয়নি। কারণ প্রযুক্তি বিষয়ক এই আইনটি অন্য আর আট দশটি আইনের মত সাধারণ কোন আইন নয়। ফলে আমাদের সাধারণ জনগণ, পুলিশ, আইনজীবী এমনকি বিচারকেরাও আইনটির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত প্রযুক্তির অনেক জটিল বিষয়ের সঙ্গেই পরিচিত নন। তাছাড়া আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তির অনেক কিছুই গৎবাধা আইনি কাঠামো দিয়ে বিচার করা সম্ভব নয়। আবার তথ্য প্রযুক্তির বিষয়গুলি যেহেতু কোন দেশের ভৌগলিক সীমারেখা মেনে চলে না তাই এক্ষেত্রে বিচারিক অধিক্ষেত্র নিয়ম নিয়েও জটিলতার শেষ নেই। প্রযুক্তির নিত্য নতুন কলা-কৌশল ও যন্ত্রের সঙ্গে তাই আমাদের আইন পাল্লা দিয়ে পারছে না। ফলস্বরূপ, এ ধরণের অপরাধে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন মাত্রা। সামাজিক ও আইনগত এ সকল জটিলতার কারণে কখনো কখনো সমাজের উচ্চবিত্ত ও প্রভাবশালী তারকারাও এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হয়ে বিচার বঞ্চিত থেকে যান।

এই যোগাযোগ প্রযুক্তির বিষয়গুলো ছাড়াও কিছু বিশ্বাসের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বজায় রাখা আবশ্যক। যেমনঃ ডাক্তার-রোগী, আইনজীবী-মক্কেল, ছাত্র-শিক্ষক, ব্যাংক-গ্রাহক ইত্যাদি আস্থার সম্পর্কের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির গোপন বিষয়াবলী অবশ্যই রক্ষা করতে হবে এবং তা কোনক্রমেই অনুমতি ব্যতীত অন্যের নিকট প্রকাশ করা যাবেনা। এমনকি আদালতে সাক্ষ্য হিসেবেও ব্যবহার কারা যাবেনা।

এবার চোখ ফেরানো যাক রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের দিকে। রাষ্ট্র প্রায়ই নানা ওছিলায় নাগরিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন করে। কখনো আবার সে অবৈধ কাজটিকে বৈধতার আবরণে আচ্ছাদিত করতে আইনসভা থেকে আইন পর্যন্ত পাস করে ফেলে। এমনই একটি আইনের নাম হলো ২০০৬ সালের সংশোধিত বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন। ২০০২ সালের পুরনো আইনের ৯৭ ধারার সঙ্গে নতুন আইনে ৯৭ক ধারা যোগ করা হয়। যার ফলে এখন থেকে সরকার রাষ্ট্রের নিরাপত্তার(?) স্বার্থে যেকোন নাগরিকের টেলিফোন আলাপে আড়ি পাততে পারবে বা কথোপকথনের তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে! অথচ নাগরিকের কণ্ঠ কিভাবে সনাক্ত করা হবে সে ব্যাপারে এই আইন নীরব। আবার ৯৭খ ধারানুযায়ী এ ধরণের তথ্য ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনানুযায়ী সাক্ষ্য হিসেবে গৃহীত হবে কেবলমাত্র নির্বাহী আদেশে, এজন্য কোন বিচারিক আদেশ লাগবেনা। যা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকারের চরম লঙ্ঘন।

আমাদের সংবিধানসহ অন্যান্য আইনে নাগরিক অধিকারগুলি খুব সুন্দর ভাষায় উপস্থাপন করা হলেও অধিকার উপভোগের সীমা বিবিধ অজুহাতে অনেক সংকীর্ণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা তেমনি এক অজুহাতের আইনি নাম। অথচ আইনে উল্লেখ থাকলেও কখনোই ভিন্ন কোন আইন বা প্রজ্জাপনের মাধ্যমে অধিকার সীমাবদ্ধ করার পথ বাতলে দেয়া হয় না বা কোন ব্যাখ্যাও দেয়া হয়না যে, ঠিক কীভাবে ওই নাগরিক রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ালেন?

আর আমাদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোতো কর্তৃক কোন নিয়মের পরোয়া না করেই যখন-তখন (এমনকি গভীর রাত্রেও) যে কারো বাড়ি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিগত নিরাপদ আশ্রয় স্থলে প্রবেশ করাতো নিত্তনৈমিত্তিক ঘটনা। ন্যূনতম অনুমতি অথবা ভদ্রতা দেখানোরও প্রয়োজন অনুভব করেনা। উল্টো কখনো তা ভাংচুর ও সম্পদহানী পর্যন্ত গড়ায়। অথচ এ ধরনের অনধিকারচর্চা সংবিধান এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত।

অন্যদিকে সরকার ইচ্ছানুযায়ী অযাচিতভাবে বিচারিক আদেশ ব্যতীত যেকোন নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যে হানা দিতে পারে। এমনকি ইমেইল, ব্লগ কিংবা ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে কোন নাগরিক কী তথ্য আদান-প্রদান করছে সরকার মাঝেমধ্যেই তা পর্যবেক্ষণ করে এবং শাসক দলের বিরুদ্ধে কোন মন্তব্য করা হলে মন্তব্যকারীর ওপর নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে। তাছাড়া নাগরিকদের কাছ থেকে সংগৃহীত বিভিন্ন তথ্য (যেমনঃ ভোটার তালিকা/আয়কর বিবরণীতে প্রদেয় তথ্য) সরকার প্রায়ই ভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে থাকে। সরকারি নিরাপত্তা সংস্থাগুলো আইনে প্রদত্ত ক্ষমতার বাইরে যেয়ে নাগরিকদের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি করে গোপনীয়তার অধিকার পদদলিত করে চলছে। এসব গুপ্তচরবৃত্তি ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোকে তাই আইন ও জবাবদিহিতার আওতায় আনা দরকার।

নাগরিকের তথ্য সংরক্ষণ ও অপব্যবহার নিরোধে তাই নতুন আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন। অন্যথা রাষ্ট্র নামকাওয়াস্তে কারণ দেখিয়ে একের পর এক প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে জনগণের তথ্য হরণ করে চলবে। কেবল সরকারি সংস্থাগুলোকেই নাগরিক অধিকার হরণ করা থেকে নিবৃত করলে চলবে না। উপরন্তু, আমরা এখন দেখতে পারছি বেসরকারি সংস্থা থেকে ব্যক্তি পর্যায়েও গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘনের মহোৎসব শুরু হয়েছে। তাই নাগরিকের গোপনীয়তার অধিকারসহ সব ধরণের অধিকার সমুন্নত রাখতে আইনের পাশাপাশি সরকারের সদিচ্ছাও প্রয়োজন। সেই সঙ্গে প্রয়োজন নাগরিক সচেতনতা। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সবার আগে দরকার সকলের জন্য সমান অধিকার ও আইনগত সুরক্ষা পাবার সমসুযোগ নিশ্চিতকরণ। তাই কেবল মুখে মুখে কিংবা নির্বাচনী ইশতেহারের মধ্যে নয়, সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমরা আমাদের অধিকারগুলির সার্বিক আইনি ও প্রায়োগিক সুরক্ষা চাই।