একটি লাশের অপেক্ষায় অতঃপর…

মো.রাজেকুল ইসলাম ( আগ্নেয়গিরি )
Published : 29 June 2012, 04:41 PM
Updated : 29 June 2012, 04:41 PM

অবশেষে মেয়ের লাশটি পেলেন, ষাটোর্ধ্ব আব্দুল জলিল।১৫ বছর বয়সী নাতনি শানু আকতারের লাশটি পেয়েছেন ভোর বেলায় কিন্তু আদরের মেয়ে হাসনা বানুর সন্ধান মিলছিলো না। আর আজগর আলী মুমূর্ষু অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে। সে এখনো জানেন না প্রিয়তমা স্ত্রী ও আদরের মেয়েটি বেঁচে নেই।

পাহাড় ধসে পড়া এলাকা থেকে সেনা ও পুলিশ সদস্যরা বার বার যখন সরে যেতে বললেও বিশ্বাসের অন্তরালে জলিল তখনো ঠাই দাঁড়িয়ে।তার বিশ্বাস মেয়ে হাসান বানুর লাশটি মাটির নিচে থেকেই বের হবে।লাশ না নিয়ে এক কদম সরবেন না।শেষ পর্যন্ত সন্ধ্যা ৬টায় মাটির নিচ থেকে হাসানা বানুর লাশটি টেনে তুলে আনেন উদ্ধারকর্মীরা।

প্রায় ১৫ বছর আগে মেয়ের বিয়ে হয়েছিল। জামাই আজগর আলী ছোট ব্যবসায়ী। সুখেই কাটছিল সংসার। একই কলোনির পূর্ব পাশের একটি বাসায় থাকতেন তিনি। রাতে পাহাড় ধসে মাটি পড়ার পর পরই জলিল ছুটে আসেন। উদ্ধারকর্মীরা ঘরের টিনের চালের মাটি সরিয়ে জামাই আজগর আলীকে মুমূর্ষু অবস্থায় পেলেও মেয়ে এবং ১৫ বছর বয়সী আদরের নাতনি শানুর সন্ধান পায়না।

সকাল ৭টার দিকে চোখের সামনে কাদামাটির নিচ থেকে উদ্ধারকর্মীরা যখন নাতনি শানুকে টেনে তুলছিলেন, তখন যেন জলিলের বুকটা ফাটা আহাজারি। সেই থেকে ধ্বসে পড়া কলোনির পাড়ে ঠাই নেয় জলিল।কখন মেয়ের লাশ বের হবে এ আশায়। শেষপর্যন্ত সন্ধ্যা ৬টায় মেয়ের লাশ যখন মাটির নিচ থেকে টেনে তুলছিলো তখন জলিলের চিৎকারে যেন আকবর শাহ কলোনির আকাশ-বাতাস বেদনা যন্ত্রনায় ভারী হয়ে উঠছিল।

বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর থেকে কলোনিতে থাকা লোকজনকে সরে যাওয়ার জন্য সিটি করপোরেশন একাধিকবার মাইকিং করেছে ঠিকই কিন্তু তারা কোথায় যাবে? কে দিতো তাদের ঠাঁই।প্রশাসন যদি ঠাঁই দেওয়ার মতো ব্যবস্থা করে মাইকিং করতো তাহলে আজ এই লাশের মিছিল দেখতে হতো না।

ধ্বসে পড়া পাহাড়টির পাদদেশ ঘিরে ১২০টি ঘর। প্রতিটি পরিবারে ছয়-সাতজন সদস্য। স্থানীয় ইদ্রিস আলী ও তার ছেলে ইয়াসিন অবৈধভাবে এ ঘরগুলো তৈরি করেছেন। পিতা-পুত্র মিলে প্রতিটি ঘর থেকে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা করে ভাড়া আদায় করেন। প্রতি মাসে তারা এক লাখ ৮০ হাজার টাকা ভাড়া পান। বিশাল এ কলোনিতে অবৈধভাবে দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। ঘর ভাড়া কম তাই স্বল্প আয়ের পোশাক শ্রমিক, দিনমজুর ও রিকশাচালকেরা এসব কলোনিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে বাসবাস করছে।

যে অসহায় মানুষগুলোর সরলতার সুযোগ নিয়ে বহু ইদ্রিস ও ইয়াসিনদের মতো দুর্বৃত্তশালীরা এখনো বহালতবিয়তে পাহাড় ভাড়া দিয়ে হাজার-হাজার টাকা কামাই করছে তাদের খুঁজে বের করে চিহৃত করে আইনের আওতায় আনা হোক।

আমরা চাই, প্রশাসন ইদ্রিস ও ইয়াসিনের বিরুদ্ধে একটা ব্যবস্থা গ্রহন করুক।।