“কাংখিত স্বপ্নের পুনঃমিলন যদি অসম্ভব হয়, সেখানে আকুতির শেষ থাকেনা…তেমনি “

মো.রাজেকুল ইসলাম ( আগ্নেয়গিরি )
Published : 4 Sept 2012, 01:20 PM
Updated : 4 Sept 2012, 01:20 PM

রক্ত মাখা,কষ্টার্জিত,লালিত ফিরে পাওয়া গণতন্ত্র যদি দানব নামক জনগনের মুনিব'রা কেড়ে নেয় তখন আমরা কোথায় যাবো ? মুক্ত হাওয়া বেষ্টিত গণতন্ত্রের নির্ভেজাল নিঃশ্বাস নিয়ে আমরা সবাই একটু শান্তিতে বাঁচতে চাই।

কষ্টের আর রক্তমাখা লালিত ফিরে পাওয়া গণতন্ত্রের সঠিক পরিচর্যা ও ব্যবহার করে তা ধরে রাখা অত্যন্ত কঠিন কাজ।ব্যক্তিগত স্বার্থ সীদ্ধির জন্য কেউ-কেউ গণতন্ত্র নিয়ে নিয়ে খেলা খেলছেন তা নিয়ে আজ নিষ্পেশিত জনগন বড়ই শংকিত।

রক্তমাখা ছিনিয়ে আনা গণতন্ত্র যদি আমাদের নিকট থেকে কেড়ে নেওয়া হয় তাহলে আমরা কোথায় যাবো? কে দিবে ঠাঁই? অজানা আতংক সম্বলিত এই প্রশ্নটিকে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে নানা রকমের ভাবনার রাহুগ্রাস আমাদের ঘিরে ধরছে।সত্যিই সত্যিই,গণতন্ত্র যদি না থাকে,তাহলে কী হবে?কোন দেশের যদি গণতন্ত্র না থাকার পরির্বতে যে ধ্বংসাবশেষ থাকে তার মধ্যে নিঃশ্বাস নেওয়া যায় না।

একটি নিঃশ্বাসহীন ব্যবস্থা যেমন মৃত্যুর সমতুল্য, তেমনি একটা নিঃশ্বাসহীন ব্যবস্থার দিকে আমাদের তিলে-তিলে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিনই যেন আমাদের গণতন্ত্র গুলিবিদ্ধ হচ্ছে, ক্ষনে-ক্ষনে আমাদের গণতন্ত্রের গলা টিপে ধরছে গুণ্ডারা,গুণ্ডারা হয়ে উঠছে আমাদের গণতন্ত্রের রক্ষক সমতুল্য 'মুনিব'।আজ আমাদের ঘড়রের সিঁড়িতে গুণ্ডাদের পায়ের আওয়াজ,অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে গুণ্ডারা এসে গেছে আমাদের শেষ সিঁড়িতে।

আমরা কান-মুখে ফিসফিস করে বলেই (কবি মাহমুদ দারবিশ'র ভাষায়)চলেছি :-
শেষ সীমান্তের পর আমরা কোথায় যাব?
পাখিরা শেষ আকাশ পেরিয়ে কোথায় উড়বে?
শেষ নিশ্বাস নেবার পর গাছপালা কোথায় ঘুমুবে?

যেন বেঁচে থাকার মধ্যে কোন বিচার-বিচারতা নেই এবং নেই মানবাধিকার নামক কিছু। আমাদের অন্তরের মধ্য থেকে সেসব শান্ত-অধিকারের ভাষার ওই শব্দগুলো উধাও হয়ে গেছে। গুণ্ডারা যে অর্থে লুণ্ঠন চায়,সেই লুণ্ঠনের দিকে আমরা ক্ষমতাকে তাড়িয়ে ফিরছি। কেউ ক্ষমতায় বসলে কিংবা না বসলে গণতন্ত্রের কি কিছু যায়-আসে !গুণ্ডামিই গণতন্ত্র,এই বোধ রাজনীতিতে এসে যাওয়ার দরুন,চিৎকার এবং চিৎকার, গুলি এবং গুলি,চাপাতি এবং চাপাতি,ছুরি এবং ছুরি হাতে নিয়ে গুণ্ডারা ও বদমায়েসরা গণতন্ত্রের পাহারাদার সেজে দাপিয়ে বেড়েচ্ছে। তাদের নিকট আমরা আজ সাধারণ মানুষরা বড়ই অসহায়।

গণতন্ত্র রক্ষার অজুহাতে মানুষকে রক্তপাতের দিকে ঠেলে দিয়ে কখনোই ফলপ্রসু গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়না। গণতন্ত্র নিয়ে এতসব গুণ্ডামির পরও আমরা আশার কথা বলি নাই। আশা যদি না থাকে আমরা কি নিয়ে বাঁচব। হে রাজনীতিবিদগণ,প্লিজ আমরা আপনার বা আপনাদের কথা বলছি না। আমরা বলছি আমাদের অসহাত্বের কথা :

"কাংখিত স্বপ্ন যদি ছত্রভঙ্গ হয়,আকুতি তো থাকবেই
যদি পুনর্মিলন অসম্ভব হয়,সে স্থানেও আকুতি তো থাকবেই।"

আমরা প্রতিদিন পত্রিকা পড়ি,কলাম পড়ি,রাজনৈতিক বিশ্লেষণ পড়ি,গল্প পড়ি,সরল-গরম পড়ি,গদ্য-কাটুন পড়ি,কবিতা পড়ি,এসব নিয়ে ভাবি আর ভাবনার স্বপ্নের মধ্যে বেঁচে থাকি। এই বেঁচে থাকাই কি হচ্ছে আমাদের গণতন্ত্র,এই আশাই কি হচ্ছে আমাদের গণতন্ত্র,এই রকম জীবনই কি হচ্ছে আমাদের গণতান্ত্রিক জীবন?

প্রতিশোধের রাজনীতি থেকে ফ্যাসিবাদ তৈরি হয়।ফ্যাসিবাদ দিয়ে রাষ্ট্র হয় না,ফ্যাসিবাদ দিয়ে গণতন্ত্র হয়না।প্রতিশোধের রাজনীতি দিয়ে ইতিহাস নির্মাণ করা যায় না। আমরা কেন এসবের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে পারছি না-কেউ তো লাগাম টেনে ধরে আছে?

মনে রাখার দরকার:'সকল দুঃস্বপ্নের' মধ্যে ফয়েজ আহমদ ফয়েজ কবিতার প্রয়োজনের কথা বলে গেছেন। আবিদা পারভিনের গলায় যখন ফয়েজের এই কবিতা শুনি, তখন মনে হয় আশা-প্রত্যাশা করার
চেয়ে আর বড় অস্ত্র-বড় হাতিয়ার বলে কিছু নেই।আমরা আমাদের আসা-প্রত্যাশার লাগাম আজও টেনে ধরে আছি……..যতদিন পর্যন্ত পুরুন না হয়,ততদিনের অপেক্ষায়………………?

রাজনীতিবিদদের এক পক্ষ যখন বলেন, দশ লাখ লোক এনে ঢাকা শহর ঘেরাও করব, দশ লাখ লোক এনে সরকার অচল করে দেব,অন্য পক্ষ তাদের প্রবেশ পথ রোধ করে বলে, ঢাকাই আসার সকল পথ বন্ধ করে।তখন হাসি পায়। দশ লাখ লোক আনার খরচ তাদের খাওয়ানোর খরচ তাদের ফেরৎ পাঠানোর খরচ আবার এসব লোকের আগমন ঠেকানোর কাজে নিয়োজিতদের খরচ কে দেবে? নিশ্চয় রাজনীতিবিদরা! এসব হুমকি শুনলে মনে হয় দেশের রাজনীতিবিদরা অসম্ভব টাকাওয়ালা বড়লোক। তাদের টাকা-কিড়র কোন অভাব নেই। রাজনীতি করে তারাও কাদিকাদি টাকাপয়সা করেছেন। ভবিষ্যতেও করবেন। এ রকম পেশা বিশ্বের আর কোথাও আছে কি না তা আমার অন্ততঃ জানা নেই।

আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা অনেক ঘোষনাই যখন দিতে পারেন তখন বোঝো যায় তাদের টাকার অভাব নেই। কিন্তু এনবিআর'র চোখ কি সেখানে পড়তে পারেনা?

দশ লাখ লোক পাঠানোর কাজ করেছে এক পক্ষ আর অন্য পক্ষ তাদের আগমন ঠেকানোর জন্য সুক্ষ ভাবে ব্যবস্থা গ্রহন,তাদের থাকা-খাওয়া,পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা,প্রস্তুতি-সভা ইত্যাদি-ইত্যাদি।সরকার আইশৃংখলা রোধ কল্পে সরকারী বাহিনী প্রস্তুত রাখা।এসব সমগ্র বিষয়ের ক্যালকুলেশন করলে একেবারেই কম টাকার বাজেট হওয়ার কথা নয়।এই টাকাগুলো একসংঙ্গে জমা হলে কিছুটা হলেও আমাদের ঢাকা বাসির সমস্যার সমাধান হতে পারতো!কিন্তু কে করবে সেই টাকা তোলার কাজ ?

১.ঢাকা শহরের পানীয় জলের সুপেয় ব্যবস্থা।
২. ঢাকা শহরের যেসব স্কুলের শিক্ষক,ক্লাশরুম,চেয়ার-টেবিল সংকট,নিরাপত্তা দেয়াল,ভাংগাচোরা ছাদ গুলো মেরামত করা।
৩. ঢাকা শহরের যানজট নিরসন করতে পর্যাপ্ত ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্দ্যেগ।
৪. ঢাকা শহরের বস্তিগুলোর ও খোলা আকাশের নিচের মানুষের বেঁচে থাকার সুব্যবস্থা করতে পারতেন।

মানব সেবা সংক্রান্ত এসব কাজ রাজনীতি,সু-রাজনীতির বাইরের নয়।প্রতিটি বড়-বড় রাজনীতিবিদদের যিনারা উপদেষ্টা রয়েছেন তারা এমন কাজের পরামর্শ কি দিতে পারেন না? নিশ্চয় পারেন কিন্তু এই পরামর্শ দেয়ার কাজটি হয়তোবা তারা করেন না।

টেলিভিশনে যাদের দেখা যায় তারা মহান নেতা,সিংহাসনের মতো চেয়ারে বসে থাকেন,অদ্ভুত-অদ্ভুত কথা বলেন মাঠ-ময়দান গরম করে তোলেন ,তখন বুঝি এই রাজনীতির সর্বনাশ। মানুষের কল্যাণের সঙ্গে এসব রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। কল্যাণের সঙ্গে নিঃসম্পর্ক রাজনীতি কখনও, কোনোদিনও মানুষকে আশার পথে পৌঁছায় না।সে জন্য এই রাজনীতি থেকে বন্দুক,পিস্তল,চাপাতি,লগি-বৈঠা,ইটপাটকেল তৈরি হয়,মানুষকে খুন করার নেশাতে চতুর্দিক ভরে যায়,আর রাজনীতিবিদরা মনে মনে হিসাব করেন কয় কদম অগ্রসর হতে পারলেনক্ষমতার দিকে।
রাজনীতিবিদরা নিজেদের তথা পরিবার-পরিজন,আত্মীয়-স্বজন,অনুসারীদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য ক্ষমতা বাস্তব করার কাজে ব্যস্ত। এর নাম গণতন্ত্র ! বলার সময় এসেছে : এভাবে গণতন্ত্র হয় না। গরিব মানুষদের প্রয়োজনীয় কাজ না করে, চাপাতি, বন্দুক ,ছুরি ব্যবহার করে গণতন্ত্রের ভিত্তি তৈরি করা যায় না।

আমরা সত্যিকারের গণতন্ত্র চাই।যে রাজনীতি বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করতে পারে না,বস্তিতে যারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন তাদের জীবনের মান বাড়াতে পারে না,যে রাজনীতি দেশের শিক্ষাঙ্গনকে কলুষিত করে অচল করে দিচ্ছে । সে রাজনীতি আমরা চাই না।তাদের এ ধরনের রাজনীতি সম্পর্কে সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে।তাই বলবো আমরা নিরবিচ্ছন্ন গনতন্ত্রের মুক্ত সবুজ-শ্যামল নিঃশ্বাস নিতে চাই।