প্রসঙ্গঃ মেডিকেল এবং অন্যান্য ভর্তি পরীক্ষা

রতন রায়
Published : 26 August 2012, 08:44 AM
Updated : 26 August 2012, 08:44 AM

মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার অবশেষে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে তাঁর মতামত জানিয়েছেন। উনার মতামত মাধ্যমে এদেশের সাধারণ ভর্তি প্রত্যাশী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রত্যাশা ফুটে উঠেছে। আমরাও চাই ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই সকল উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করানো হোক। এতে আর্থিক ভাবে অসচ্ছল অভিভাবকেরা অন্ততঃ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ভর্তির বাছাই প্রক্রিয়াটির স্বচ্ছতা নিয়ে। সরকার কোন রকম চিন্তা ভাবনা ছাড়াই ভর্তির পূর্ব মুহূর্তে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। কারন-

(১) সরকার যে যুক্তি দেখাচ্ছে অর্থাৎ কোচিং বানিজ্য বন্ধের কথা বলেছেন। তা একে বারেই গ্রহণ যোগ্য নহে, যেহেতু ইতিমধ্যেই যারা কোচিং করার তারা কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়ে গেছেন এবং কোচিং সেন্টারের পাওনাও পরিশোধ করেছেন। তাহলে অভিভাবকেরা লাভবান হচ্ছেন কিভাবে?

(২) আমাদের দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্ন পদ্ধতি পরিমার্জন করে সৃজনশীল করা হয়েছে, যা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু এর পরও প্রশ্ন থেকে যায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় শিক্ষাথীর মেধা যাচাই প্রক্রিয়া কতটা নির্ভর যোগ্য। আর দেশের বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের প্রশ্ন বিভিন্ন রকম হওয়ায় ফলাফলের মধ্যেও এর প্রভাব পড়তে বাধ্য।

(৩) যেহেতু জিপিএ-এর ভিত্তিতে এখন এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয় এবং পরীক্ষার্থীকে প্রদত্ত একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট-এ প্রাপ্ত নম্বর উল্লেখ খাকে না (যদিও শিক্ষাবোর্ড মার্ক সংরক্ষণ করে কিন্তু শিক্ষার্থীকে তা জানানো হয় না)। তাই কোন বিষয়ে প্রাপ্ত লেটার গ্রেড এর পরিবর্তে প্রাপ্ত মার্ক এর ভিত্তিতে শিক্ষার্থী বাচাই করা হলে তার স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে কীভাবে। যে কোন শিক্ষার্থীর জানার অধিকার রয়েছে সে কেন বাদ পড়েছে বা ভর্তি হতে পারবেনা। তাই পুরো প্রক্রিয়াটি প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য। এখন কোন শিক্ষার্থী যদি আদালতের ধারস্থ হয় তাকে কেন বাদ দেয়া হল, তবে পুরো ভর্তি কার্যক্রমটি বন্ধ হতে বাধ্য।

(৪) যেহেতু কোন বিষয়ে ৮০ বা তার বেশি নম্বর পেলে লেটার গ্রেড এ+ দেওয়া হয় এবং উক্ত বিষয়ে জিপি ৫। তাই সবার লক্ষ্য অন্তত ৮০ পাওয়া। এ ক্ষেত্রে কেউ যদি ৮০ পায় এবং কেউ যদি ১০০ পায় উভয়ের একই জিপি। এ জন্য অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় পরীক্ষার্থী যখন নিশ্চিত হয় যে সে ৮০ এর উপর নম্বর পাবে, তাহলে পরের প্রশ্ন গুলির উত্তর সাদামাটা ভাবেই করে থাকে। তাই অন্তত এক বছর আগে ঘোষনা না দিয়ে হঠাত এমন একটি সিদ্ধান্তে সবাই শংকিত।

(৫) বর্তমান পরীক্ষা পদ্ধতিতে মেধা যাচাই যথেষ্ট ক্রুটিপূর্ণ। কারণ এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েও অনেক শিক্ষার্থী মেডিকেল বা বুয়েটে ভর্তি হতে পারেনা ।পক্ষান্তরে জিপিএ ৫ না পেয়েও অনেকে ভর্তি পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করে এবং ভর্তি হতে পারে। গত কয়েক বছরের ফলাফলই তার প্রমাণ।

এ ক্ষেত্রে আমার মতামত হচ্ছে-

(১) ভর্তি পরীক্ষা না নিয়ে ফলাফলের ভিত্তিতে ভর্তি করানোর পূর্ব প্রস্তুতি স্বরূপ দেশের সরল শিক্ষা বোর্ডকে একই প্রশ্ন ও সিলেবাসের ভিত্তিতে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নিতে হবে।

(২) এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা পদ্ধতি এমন করতে হবে যাতে এ পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সত্যিকারের মেধা যাচাই হয়।

(৩) শুধু মেডিকেল নয় সকল উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভবিষ্যতে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ভর্তি করাতে হবে। তবে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি হবে স্বচ্ছ এবং ক্রুটি বিহীন।

(৪) এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিতিত্তে মেধা যাচাই প্রক্রিয়াটি একটি নির্দিষ্ট মানে পৌছানোর আগ পর্যন্ত বর্তমান নিয়মই বহাল রাখা হোক। এবং মেডিকেল ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার জন্য দেশের সকল জেলায় ভর্তি পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করা হোক। এতে অভিভাবকদের ভর্তি পরীক্ষার জন্য ব্যয় এবং উদ্বেগ অনেকাংশে কমে যাবে।

(৫) ইতি মধ্যে অনেক উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভর্তি কার্যক্রম অনলাইনে সম্পন্ন করছে। তা সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনুসরণ করুক এবং প্রক্রিয়াটি আরো সহজ করা হোক।

(৬) সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা কেন্দ্রীয় ভাবে একযোগে একই প্রশ্ন পত্রে নেয়ার ব্যবস্থা করা হোক যাতে কোন শিক্ষার্থী তার পছন্দমত ও সুবিদা মত যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সুযোগ গ্রহণ করতে পারে।

সর্বোপরি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তির ক্ষেত্রে কোন শিক্ষার্থী যাতে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয় এবং এ ক্ষেত্রে প্রকৃত মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রধান্য সকলের কাম্য।