মানুষ মানুষের জন্য। জীবন জীবনের জন্য। একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না। —- এই গানটা কে লিখেছিলেন মনে করতে পারছিনা (জানতাম কিন্তু ভুলে গেছি), গানটি গেয়েছে উপমহাদেশের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী ভুপেন হাজারিকা এটা মনে আছে। এটি শুধুই একটি গান নয়- এটি একটি আকুতি, একটি অনুযোগ, একটি অনুরোধ সবাইকে সমান ভাবে মূল্যায়ন করার, সবাইকে সমান ভাবে দেখার, ভাবার, যদিও এখন আর কেউ সহানুভূতি চায় না। চায় সমঅধিকার। সমান ভাবে বাঁচার, সমান ভাবে চলার, সমান ভাবে থাকার।
আমার একটি ইটালিয়ান বন্ধু আছে যার সাথে একদিন ছট-খাট তর্কই বেধে গিয়েছিল (বন্ধুত্বে যেরকমটি হয় আর কি)। বিষয়বস্তু যদিও বাংলাদেশ ছিল কিন্তু পরিশেষে পথশিশুতে এসে শেষ হয়েছিল। ওকে একবার রাগ করেই বললাম তুমি তো জন্মসূত্রে ইউরোপিয়ান (ইতালিয়ান) তাই তোমার এত ডিম্যান্ড, তমাকে এত মূল্যায়ন! এটাতে তোমার অহমিকার কিছু নাই কারণ এটা তমার ভাগ্যের রেখা। তামার যা কোয়ালিফিকেশনস তাতে তুমি বাংলাদেশে জন্মগ্রহন করলে সারাজীবন হয়তো বেকার থাকতে হত অথবা কোন নিম্নশ্রেণীর পোস্ট এ (পিওন এর সমমানের কোয়ালিফাইড তাই) চাকুরী করতে হত। কারণ ও আমাদের দেশটাকে নিয়ে কটু কথা বলে যাচ্ছিল।
যাই হক পরে রাস্তার পাশে একটি গাড়ির দিকে ধাবমান ২-৩ টি পথশিশুকে দেখিয়ে আমাকে বলল এদের নিয়ে তোমার কি মত? তুমি কি ভাব এদের নিয়ে? তোমার মতে কি করা উচিত এদের জন্য? তোমার সরকার কি করতেছে এদের জন্য? একটানা প্রশ্ন গুলো করে গেল (মনে হল আমার উপর রাগ করেই এভাবে প্রশ্নগুলো করে গেল)। আমি সেদিন ওকে আমার ভাবনাগুলো বলেছি, অনেকভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেছি, আমাদের অনেক প্রতিবন্ধকতার কোথাও বলেছি। অনেক কোথায় আমাদের সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার চেষ্টা করেছি, কিছু সত্য বলে আবার কিছুটা চাপা (মিথ্যা) দিয়ে (ওর কাছে ছোট হব কেন?)।
আমি ওকে যেভাবে যা বলেছি ওটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। আপনাদেরকে ওই কথাগুলো জানালাম না এবং ওর প্রশ্নগুলোই এবার আমি আপনাদের কে করলাম?
গতকাল গুলশান-২ এ আমি ও আমার এক কলিগ রাস্তার পাশে বসে চা পান করতেছিলাম এমন সময় ৩টা ছেলে (পথশিশু) আমার পায়ের নিচে পড়ে থাকা এক টুকরো রুটি কুড়িয়ে নিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করলে আমি বাধা দিয়ে ধমক দিলাম, কিন্তু পরক্ষণে আমার সুমতি হলে ৩ জনকেই বললাম তোমরা কে-কি খেতে চাও নিয়ে নাও (দোকানের ঝুলন্ত অনেক খাবারের দিকে দেখিয়ে দিয়ে বললাম)।
কিন্তু ছোটবেলায় একটা কথা শুনেছিলাম যে অভুক্ত মানুষের সামনে অনেক মজার ও সুস্বাদু খাবারের মধ্যে থেকে যদি কোন কিছু বা একটা বেছে নিতে বলা হয় তাহলে তারা বেশি পরিমানের বা বড় খাবার টিই বেছে নিবে, হোক না সেটা অস্বাদু (তাদের কাছে ওই সময় ক্ষুধা নিবারণটাই মুখ্য হয়ে যায়- স্বাদ নয়)। তাই তারা আবারও ওই কথাটির সত্যতা প্রমান করে বড় বড় রুটিগুলো নিল অথচ পাশেই অনেক মজার কেক ও সুস্বাদু ছোট রুটি ছিল। যদিও তখন ওর থেকে বেশি কিছু করার মত অবস্থা আমার ওই সময় ছিলনা (এক তো অফিস থেকে গেছি তার উপর টাকাও কম ছিল)। কিন্তু কেন জানি মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল এবং আমার কলিগটারও দেখি সম অবস্থা। তখনি আমার সেই বিদেশি বন্ধুটির কথা মনে পড়ল যে আমাকে ওদের বিসয়ে অনেকগুলো প্রশ্ন করেছিল।
এরকম না জানি কত সত-হাজার পথশিশু আমাদের দেশে রয়েছে, কে জানে। কার কাছেই বা এর হিসাব রয়েছে? অনেক সময় তারা খাবারের জন্য কান্নাকাটি করে আবার কখনও টাকার জন্য (যারা টাকা চায় তারা অনেকে আবার পারমানেন্ট ভিখারি, তারা টাকা অনেকসময় চায় নিজেদের জন্য আবার কিছু সময় ওদের বসদের জন্য-এটা আবার আমি পছন্দ কম করি কারণ এতে করে ভিক্ষার অভ্যাস গড়ে ওঠে)। আমরা বেশির ভাগ সময়ই কোন কিছু না দিয়েই তাড়িয়ে দেই।
২-১ টা সংগঠন মনে হয় আছে যারা পথশিশুদের নিয়ে কাজ করে বা করছে কিন্তু কতটুকু করে বা করতেছে জানিনা। আমাদের সরকার ওদের জন্য কি ভাবতেছে বা প্ল্যান করতেছে জানিনা। আমাদের দেশের ধনী মানুষ গুলো কতটুকু চিন্তা করতেছে তাও জানা নাই। আমরা নিজেরা কতটুকু করতেছি বা করতে পারব এটাও বুঝতেছি না। কি করবো, কিভাবে করবো তাও কিছু ঠিক করি নাই। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে ওদের জন্য কিছু একটা করা উচিত।
এতগুলো প্রশ্নের উত্তর কার কাছে আছে এটাই চিন্তা করতেছি। যদি আপনাদের জানা থাকে দয়া করে আমাকে জানাবেন, আপনাদের মতামত দিয়ে। দেখি আমরা সবাই মিলে কিছু করতে পারি কি না?
shahid বলেছেনঃ
তাদের জন্য কিছু করা দরকার
নুরুন্নাহার শিরীন বলেছেনঃ
পথশিশুদের কল্যাণে স্বল্প সংখ্যক এনজিও ও সংগঠন কাজ করছে। যদিও প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্ত কম কাজ-ই বলা যায়। আরও অধিক তরুণ যদি এগিয়ে আসে এবঙ সামাজিক মানুষদের সম্পৃক্ত করে বিভিন্ন এলাকায় সুবিধাবঞ্চিতদের কল্যাণে স্কুল-পাঠাগার-সেবাশ্রম গড়তে পারে তবেই পথশিশুর সংখ্যা কমবে এইদেশে। রেজওয়ানুল আপনার মাধ্যমে এমন কাজটি যদি শুরু হয় আমিও অবশ্যই সম্পৃক্ত হতে চাই ভাই, অনেক শুভাশিষ।
রেজওয়ানুল মোর্শেদ বলেছেনঃ
প্রিয় নুরুন্নাহার আপা – ব্লগ এ অনেকদিন ছিলাম না। বাস্তবতার কঠিন যুদ্ধে নিজেকে ক্ষমতাসীন যোদ্ধা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে দেখলাম অনেকগুলো বছর অতিবাহিত করে ফেলেছি তাই অন্য অনেক ভাবনা বা আশার সাথে পথশিশুদের নিয়ে কিছু করার আশাটিও জলাঞ্জলির দার প্রান্তে ছিল। তাই অনেকদিন পর আবারও ব্লগ এ ফিরে যখন আমারি লেখা গুল বার বার পরতেছি তখন মনের গহিন থেকে এক চিলতে আলর দেখা পেলাম এবং নতুন করে আবারও পণ করলাম নতুন করে শুরু করার। নতুন করে ভাবার। আপনি সাথে থাকবেন জেনে অনুপ্রেরণা পেলাম।