আমাদের রাজনীতি ভার্সেস ফুটবল ম্যাচ

রেজওয়ান মোর্শেদ
Published : 10 Feb 2015, 06:32 PM
Updated : 10 Feb 2015, 06:32 PM

আমরা মাঝে মাঝেই শ্লেষপূর্ণ বা বিদ্রুপাত্মক বাক্যবাণের মত উদারতা দেখাই যা অনেকের কাছে কটূক্তি বলেই গণ্য হয়। তবে আমাদের স্বার্থকতার জায়গা সঙ্কীর্ণ হলেও কিছু সুপাঠেও পাঠকের সুচিন্তিত মতের কারনে লেখায় প্রেরণা পাই।

আজ একটা ফুটবল ম্যাচের ধারাভাষ্য দেওয়ার মাধ্যমে নিজেকে ধারাভাষ্যকার হিসেবে জাহির করার দুঃসাহস দেখাচ্ছি যা অনেকের কাছে কদাচিৎ- অশ্রবণযোগ্য অথবা পাঠের অনুপযুক্ত মনে হলেও হতে পারে তবে লেখকের কাজ হল লেখার সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে নতুন ও  সুপাঠেও পাঠকের উপস্থিতি ঘটানো যা পূর্বের ন্যায় নিম্নক্রমে ধাবিত বলেই মনেকরি। প্রগতি ও উন্নয়নের ক্রিয়াশীল সময়ে আমাদের সব বিষয়েই মতামত প্রদানের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকা উচিৎ তবে তা প্রেক্ষাপট অনুযায়ী ব্যাপ্তির সীমাপরিসীমার মানদণ্ডের মধ্যে থাকাই বাঞ্ঝনিয় কিন্তু এই মানদণ্ডের ব্যাপ্তিটা আবার স্বাধীনচেত্তা লেখকদের মনকষ্টের মহাকারনে পরিণত হয় এবং বিষয়টা যদি হয় আবহমান রাজনীতি তাহলে তো পোয়াবারো।

বহুআগে একটা ফুটবল ম্যাচ চলার সময় একজন ধারাভাষ্যকার কথায় কথায় সুন্দর ও চেতনাসুদ্ধ কিছু কথা বলেছিলেন যে – "ফুটবলে শুধু কয়েকজন প্লেয়ারই প্রতিপক্ষে  খেলেন না- খেলে দুইটা দেশ বা দুইটা জাতি"। তাই ফাইনাল ম্যাচ এ যখন একটা দল হেরে দুঃখে নুইয়ে পড়ে তখন ওই দেশের মানুষেরও একই অবস্থা পরিলক্ষিত হয়। তার গন্ধ না শুকান উদাহরণ হল – বাংলাদেশ বনাম মালায়শিয়ার বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপ ফাইনাল ম্যাচ। মামুনুলরা শেষ মিনিটের গলে হেরে গেলে তাদের সাথে আমরা অনেকেই চখের জল বিসর্জন দেই।

খেলাটা – কৌশলের,শক্তির, আবেগের, উন্মাদনার, সম্মানের ও পরিশেষে  হিংস্রতার নিয়ামক।

গত প্রায় এক বছরেরও কিছু বেশি সময় ধরে আমরা তেমনি একটা ফুটবল ম্যাচের নির্বাক দর্শক, উন্মত্তচিত্তে বেদনার পরশ নেওয়া অনুতপ্ত দর্শক, চিৎকার-চেচামেচিতে পুরদেশকে জাগ্রত করা অচ্ছ্রুসিক্ত দর্শক এবং কাজের পরে জীবনের ঝুকি নিয়ে পূর্ণগতিতে ছুটে চলা ভিত-সন্ত্রস্ত দর্শক।

পরিশেষে ম্যাচটা এখন চরম উৎকণ্ঠায় এসে টানটান উত্তেজনায় কালক্ষেপণ করতেছে এবং যা আরও হিংস্র থেকে হিংস্রতর হচ্ছে – ডিফেন্স, মিডফিল্ড, আক্রমণপাল্টা আক্রমণ এবং সবশেষে মাঠের খেলোয়াড় ও দর্শকদের ইনজুরিমেজর ইনজুরিমৃত্যুহায় রে রাজনীতির ফুটবল !!

রাজনীতি নামে ফুটবলেরই আরেকটা খেলা আছে এবং দুই খেলায় এত মিল আগে খুব কম মানুষই উপলব্ধি করেছেন

৫ই জানুয়ারী ক্ষমতাসীন দল একটা গোল দিয়েছিল বি ন পি তথা ২০ দলিও জটের জালে – নির্বাচনের গোল, যাতে বি ন পি ও অন্যান্য সরিকদের সব defender দের পাশকাটিয়ে অথবা injured বানিয়ে ক্ষমতাশিন  দল গোল টি করেছিল এবং বিরতির পূর্বমহুরতে "সাংবিধানিক গনতন্ত্র" রক্ষা হয়েছিল বলেই অনেকের অভিমত এবং বিরতির সময়টুকুতে দেশের অবোলা জনগণের উৎকণ্ঠা কিছুটা প্রশমিত হয়েছিল এই ভেবে যে – যাক বাবা এযাত্রায় বেচেগালাম হয়তো!

কিন্তু বিধিবাম খেলার দ্বিতীয় অংশের বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের যে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা এবং অন্ধকারের এতবড় মেঘের আগমন ঘটবে তা বুঝার যোগাড় বুঝি বিদ্দান পন্দিতগু ব্যেক্তিটিরও ঘুনক্ষরেও জনা ছিলনা।

বিরতিশেষে এবার বি ন পি তথা ২০ দলের "Counter Attack"  যাতেকরে ক্ষমতাসীনদের খেলোয়াড়দের পাশাপাশি দেশের দর্শকদেরও রেহাই পাওয়াঠাই – "সংলাপ" নামক গোল তথা মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য। এতে রাজনীতির "রাজ্য" তো আছে শুধু "নীতি" টুকুর স্ব-ঘষিত বিসর্জনের ফলে দর্শকদের চক্ষুপাত – মণ্ডপাত ছাড়াও দেশের উন্নয়নের উপর চপেটাঘাত ও হিংস্রতার লেলিহান শিখায় দেহমন ও মজ্জা পুড়ে ছারখার।

এবার খনক্ষেপণ ও লেখাক্ষেপণ করার মাধ্যমে আমার ধারাভাষ্যক্ষেপণও করার উচিৎ বলে মনে করতেছি তাছাড়া সুপাঠেও পাঠকেরও ধুর্যচ্যুতি ঘটতে পারে যা পরে তূর্ণ বাক্যবাণে আমাকেই বিঁধাতে পারে।

তবে পরিশেষে সজা-সাপটা কিছু অনুনয়-বিনয় আমাদের খেলোয়াড় তথা মহামান্য রাজনীতিবিদগণের প্রতিঃ

মাননীয় রাজনীতিবিদগণ – রাজনীতির ফুটবল খেলা দেখে আমরা আনন্দে চিৎকার-চেঁচামেচি করতে চাই, আপনাদের ছড়া পেট্রোল বমার আগুনে পুড়ে কান্নার চিৎকার নয় !!

আমরা খুশির রঙে রাঙাতে চাই – রক্তের লাল রঙে নয় !!

আমরা যাদের support করি তাদের জয়ে খুশি হতে চাই – কিন্তু অন্যদলের supporter দের জীবনের মিনিময়ে নয় !!

আপনাদের কাছে সুশৃঙ্খল ও গঠনমূলক ভাষা ও কথার ব্যাবহার চাই – পক্ষাঘাতগ্রস্থ/ অসৌজন্যমূলক পাগলের প্রলাপ নয় !!

আপনারা নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ষোলকটি মানুষকে জিম্মি করে রেখেছেন যা থেকে আমরা পরিত্রাণ চাই…। আমরা যেমন আগুনে পুড়ে পঙ্গু অথবা মরতে চাইনা ঠিক একইভাবে পুলিশ/বি জি বি বা রেবের গুলিতেও মরতে চাইনা।

গনতন্ত্রের এ নতুন ধারার হিংস্রতা আপনাদেরই সৃষ্টি, আপনাদেরই তা থেকে বের হওয়ার পথ আমাদের দেখাতে হবে। সংলাপ এ বসবেন না একে অন্যকে দাওয়াত করে খাওয়াবেন সেটাও আপনাদেরই করতে হবে।

আমরা দেশের সাধারন মানুষ রাস্তায় নেমে আপনাদের কোন একজন বা একদল কে রক্ষাকরব বা ক্ষমতায় বসাবো এরকম টা ভেবে অপেক্ষায় বৃথাই সময় নষ্ট করবেন না। আমাদের সঠিক পথের সন্ধান যদি আমাদের নিজেদেরই খুঁজে নিতে হয় তবে মনেরাখবেন সব আবর্জনা পরিষ্কার করেই নতুন পথের নির্মাণ হবে……!