ক্রেস্টের স্বর্ণের ১২ আনাই মিছে ও আমাদের জাতিগত লজ্জা

রেজওয়ান মোর্শেদ
Published : 28 March 2015, 08:23 AM
Updated : 28 March 2015, 08:23 AM

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় অবদানের জন্য বিদেশি বন্ধু ও সংগঠনকে দেওয়া সম্মাননা ক্রেস্টের জালিয়াতি নিয়ে ৬ এপ্রিল ২০১৪ প্রথম আলোয় খবর প্রকাশিত হয়-"ক্রেস্টের স্বর্ণের ১২ আনাই মিছে" – তখন এটা নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে ও বিদেশে বসবাসরত বাঙ্গালীদের মধ্যে নিন্দার ঝড় ওঠে, পাশাপাশি বিদেশি মিডিয়াতেও বাংলাদেশ কে নিয়ে বিভিন্ন নেগেটিভ খবর প্রকাশিত হয় এবং সরকারের ভাবমূর্তির উপর লজ্জার ছোট একটি কালিমা লেপন হয়। যদিও তাৎক্ষণিক ভাবে তদন্ত কমিটি গঠন করে পরবর্তীতে অধিকতর তদন্ত কমিটি, সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং এটা নিয়ে থানায় মামলা এবং হাইকোর্টে রিটও হয়।

কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়েছে বলে মনে হয়না, প্রথম তদন্ত কমিটি একটি প্রতিবেদন দিলেও পরে অধিকতর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি এখনো প্রতিবেদন দেয়নি। একই অবস্থা সংসদীয় তদন্ত কমিটিরও। দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তেরও কোনো অগ্রগতি নেই (প্রথম আলোর আজকের প্রতিবেদন অনুযায়ী)।

একটু বিস্তারিত দেখলে – বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় অবদানের জন্য বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিবিদ, দার্শনিক, শিল্পী-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, বিশিষ্ট নাগরিক ও সংগঠনকে সম্মাননার সময় দেওয়া ক্রেস্টে যে পরিমাণ স্বর্ণ থাকার কথা ছিল, তা দেওয়া হয়নি। আর ক্রেস্টে রুপার বদলে দেওয়া হয় পিতল, তামা ও দস্তামিশ্রিত সংকর ধাতু। বিএসটিআই পরীক্ষায় এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

প্রতিটি ক্রেস্টে এক ভরি (১৬ আনা) স্বর্ণ ও ৩০ ভরি রুপা থাকার কথা কিন্তু মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে করা বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় দেখা গেছে, এক ভরির (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) জায়গায় ক্রেস্টে স্বর্ণ পাওয়া গেছে মাত্র ২ দশমিক ৩৬৩ গ্রাম (সোয়া তিন আনা)। এক ভরির মধ্যে প্রায় ১২ আনাই নেই। আর রুপার বদলে ৩০ ভরি বা ৩৫১ গ্রাম পিতল, তামা ও দস্তামিশ্রিত সংকর ধাতু পাওয়া গেছে।

এটা পরিষ্কার ভাবে আমাদের জাতিগত লজ্জা, সরকারের লজ্জা তথা আমাদের (দেশের নাগরিকদের) লজ্জা। তবে এই লজ্জা নিবারণের পথ ছিল ওই সব কালপ্রিটদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখমুখি করার ফলে। এবং এটা সাগর-রুনির কিংবা অভিজিৎদের খুনিদের ধরার মত এত কঠিন কাজ ছিল বলে মনে করাটা সত্যিই কঠিন।

ক্রয় কমিটিতে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) গোলাম মোস্তফা, উপসচিব এনামুল কাদের খান ও জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব বাবুল মিয়া। প্রাথমিকভাবে এই তিনজোনকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সঠিক ত্বথ্য বেরিয়ে আসবে (যদিও কালপ্রিটের সংখ্যা আরও অনেক) এবং  আরও একটু গভীরে যেতে চাইলে যে প্রতিষ্ঠান এই কাজের অর্ডার পেয়েছিল (এমিকন নামক প্রতিষ্ঠান) তাদের ধরে জিজ্ঞাসা করলেই হয়।

সরকারের দায়িত্ব লক্ষকোটি প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত এই জাতির সম্মান নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলেছে তাদের শিকড় সহ খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যাবস্থা করা যাতে করে এটি একটি দৃষ্টান্ত হয় ভবিষ্যতের জন্য। এই সব দুর্নীতিবাজ দেশ কে তাদের মা কে অন্নের কাছে বিক্রি করতেও দিধাবধ করবেনা। জাতিগত উন্নতি ও মর্যাদা বৃদ্ধির অন্তরায় তারাই।

একটার পর একটা তদন্ত কমিটি গঠন করে কালক্ষেপণ করলে শুধু তদন্তজটই বাড়বে। তাই আর সময়ক্ষেপণ না করে অতিদ্রুত এর সাথে জড়িত সব কালপ্রিটদের ধরে বিচারের মুখমুখি করার ব্যাবস্থা করেন। দেশের লজ্জা কিছুটা হলেও নিবারণ হবে।

আরও বিস্তারিত –