বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস, আমাদের করণীয়

রেজওয়ান মোর্শেদ
Published : 2 April 2015, 01:46 PM
Updated : 2 April 2015, 01:46 PM

আজ (২য় এপ্রিল)  বিশ্ব 'অটিজম' সচেতনতা দিবস।

বর্তমানে আমরা অনেকেই 'অটিজম' শব্দের সাথে পরিচিত হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্যই। অটিজম হলো মস্তিস্কের একটি স্নায়ুবিক সমস্যা যা মস্তিস্কের সাধারণ কর্মক্ষমতাকে ব্যাহত করে। একটু বিস্তারিত ভাবে বলা যায় অটিজম হচ্ছে সমষ্টিগত, বিকাশজনিত সমস্যা যাকে অটিজম স্পেকট্রাম সিনড্রোম (ASD) বলা হয়। এটি শিশুকালের শুরুতেই দেখা যায় এবং তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জন্মের ৩ বছরের মধ্যে বিস্তারিত প্রকাশ পায়। আরো সহজভাবে বলা যায় শৈশবের কোন পর্যায়ে বুদ্ধিমত্তার স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় তাকে অটিজম বলে।

অটিজমের কারণঃ এখন পর্যন্ত এর কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায় নাই। তবে-

  •     মস্তিষ্কের কোনরূপ গঠনগত ক্ষতি।
  •     অস্বাভাবিক বৈদুতিক ক্রিয়া।
  •     শরীরে নিউরো কেমিক্যাল ক্রিয়ার অসামঞ্জস্যতা।
  •     শিশুর জন্মপূর্ব বা জন্মের পরবর্তী কালে কোন সংক্রমন, ক্রোমোজোমগত অস্বাভাবিকাত হতে পারে।
  •     শিশু কালীন টিকা বিশেষ করে এম.এম.আর. (গগজ) টীকা।
  •     জন্মের সময় শিশুর অক্সিজেনের অভাব।
  •     শিশুর কোন কারণে খিঁচুনী হলে।
  •     অতিরিক্ত এ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ।
  •     বংশগত কারণ ইত্যাদিকে  অটিজমের কারণ হিসেবে ধরা হয়।

তবে উপরোক্ত নানাবিধ কারণ বলা হলেও এখনও পর্যন্ত অটিজমের কোন নির্দ্দিষ্ট কারণকে চিহ্নিত করা যায়নি। তাই এটা নিয়ে বিস্তর গবেষণা চলতেছে আশা করতে পারি দ্রুতই নির্দিষ্ট কারণ জানা যাবে।

অটিজম নির্ণয় করণঃ কিছু সহজ লক্ষণে অটিজম নিরুপন করা যায় –

  • শিশুটির নাম ধরে ডাকলেও সাড়া না দেয়া
  • চোখে চোখ রাখে না বা রাখতে না পারা
  • সমবয়সিদের সাথে সম্পর্ক গড়ে না তুলা
  • কিছু শিশু সমাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখে এবং অন্যের প্রতি কোন আগ্রহ দেখায় না।
  • দুই বছরেরও পরে কথা বলা শুরু করে
  • অতীতে দেখা শব্দ বা কথা ভুলে যায়
  • অস্বাভাবিক স্বর বা আওয়াজে কথা বলে
  • কখনো দেখা যায় একই শব্দ বারবার করে সে উচ্চারণ করে যাচ্ছে।
  • একই আচরণ বারবার  করতে থাকে যেমন- হাত নাড়ানো, হাত দেখা, একইভাবে ঘোরা বিভিন্ন জিনিষ সারিবদ্ধভাবে সাজানো
  • কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ রেগে যায়, হাসে, কাঁদে বা ভয় পায়।
  • অনেক সময় নিজের শরীরে বা অপরকে কামড় দেয় বা আঘাত করে।

বাংলাদেশের অটিস্টিক পরিস্থিতিঃ  সরকারি হিসাব মতে বাংলাদেশে দেড় লাখের মতো (সঠিক হিসেবে আরও বেশি হবে) অটিজম আক্রান্ত মানুষ রয়েছেন এবং প্রতি বছর আরও প্রায় পনেরো শো শিশু অটিজমে আক্রান্ত হচ্ছে। যা উদ্বেগ জনক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিজম বিশেষজ্ঞ, এবং বিশিষ্ট শিশু মনোবিজ্ঞানী ও গ্লোবাল অটিজম পাবলিক হেলথ ইনিশিয়েটিভ ইন বাংলাদেশের জাতীয় উপদেষ্টা তিনি বাংলাদেশের অটিস্টিক শিশুদের কল্যাণে ব্যাপক উদ্যোগ ও কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। সম্প্রতি জাতিসংঘ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাভূক্ত দেশগুলো অটিস্টিকদের পরিচর্যা নিয়ে বাংলাদেশের একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে যা ইতিবাচক অটিজম নির্মূলে।

আমাদের করনীয়ঃ কোনো শিশুর যদি উপরোক্ত অটিজমের সমস্যাগুলো ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যেই তার বাবা-মা লক্ষ্য করে থাকেন, তাহলে প্রথমে অবশ্যই অতি দ্রুত শিশুকে একজন অটিস্টিক শিশুবিশেষজ্ঞকে দেখানো উচিত। জেনে রাখা ভাল যে- অনেক শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশ একটু ধিরগতির হতে পারে অন্যান্য শিশুদের তুলনায় তাই এটাকে অটিজম হিসাবে ধরে নেয়া অমুলক।

আমাদের সমাজে এখনও অনেকেই অটিস্টিক শিশু দেখলে তাদের কে ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ করে থাকেন, তাদের বাবা-মাকে বিদ্রুপ করে থাকেন। বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলে। যা কোন ভাবেই গ্রহন যোগ্য নয়।

কোন শিশুর অটিজম নির্ণয় হলে অতিদ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। পাশাপাশি পরিবারের সবার সচেতনতাও বৃদ্ধি করতে হবে, শিশুটির সাথে কথা বলার মাঝে, পড়ানোর সময়, সামাজিক বন্ধনে, খেলা-ধুলার মাঝে বিভিন্ন বিষয় শেখাতে হবে। হাশি-খুসি রাখতে হবে।

বেশির ভাগ অটিস্টিক শিশু অত্যন্ত সম্ভাবনাময় হয়। প্রতি ১০ (দশ) জন অটিস্টিক শিশুর মধ্যে একজনের ছবি আঁকায়, গানে, গণিতে বা কম্পিউটারে প্রচন্ড দক্ষতা থাকে। অটিস্টিক শিশুকে ঠিকমত পরিচর্যা করতে পারলে পরবর্তীতে সে অনেক গুণী কেউ একজন হয়ে উঠতে পারে।

তারিখঃ ০২.০৪.২০১৫ সময়ঃ ৬.৩০ p.m ছবিসুত্রঃ Google.com