ভূমিকম্প প্রস্তুতি ও আবহাওয়া অধিদপ্তরের অভিব্যক্তি

রেজওয়ান মোর্শেদ
Published : 26 April 2015, 05:35 PM
Updated : 26 April 2015, 05:35 PM

গতকাল দেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয় এটা সবার জানা, নেপালের রাজধানি কাঠমন্ডু এবং এর উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত পোখারা নগরের মাঝামাঝি লামজুং এ ৭.৯ মাত্রার ভয়াবহ এ ভূমিকম্পের উৎসস্থল বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস)। উৎপত্তিস্থল থেকে ৭৪৫ কিলোমিটার দূরত্বে বাংলাদেশ তবুও আমরা দেশের প্রায় অনেক জেলাতেই ভূমিকম্পের জোরালো প্রভাব অনুভূত করি।

নেপালসহ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও তিব্বতেও এই ভূমিকম্পের ফলে প্রাণহানি ঘটেছে যদিও আমাদের দেশে প্রাণহানির সঠিক তথ্য এখনও জানা যায় নাই, কোন টেলিভিশনের খবরে বলেছে ৩ জন কেউ বলেছেন ৫ জন। পাশাপাশি আমাদের আবহাওয়া দপ্তর থেকে আমাদের দেশে ভূমিকম্পের তীব্রতা কত ছিল তা এখনও পরিষ্কার করে বলতে পারে নাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক বিভাগের শিক্ষক ভুমিকম্পের মাত্রা বলেছেন পাশপাশি আরও কয়েকজন গবেষক, সংস্থা ও ব্যাক্তিদের তথ্যমতে আমাদের দেশে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল এলাকা ভেদে ৩ থেকে ৫ মাত্রার। কিন্তু দুর্ভাগ্য আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে পরিস্কারভাবে রিক্টারস্কেলের মাত্রা বলতে পারে নাই। তাহলে এত বড় একটা প্রতিষ্ঠানের কাজ কী? ঘুমানো?

"বিল্ডিং নির্মাণ কোড যদি সঠিক ভাবে মানা হয় তাহলে নাকি ৭ মাত্রার ভূমিকম্পেও আমাদের কোন ক্ষতি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু যেহেতু বিল্ডিং কোড মানার ক্ষেত্রে আমাদের উদাসীনতা প্রচণ্ডভাবে লক্ষ্য করা যায় এবং এটাতে যারা মানাতে বাধ্য করবেন সেই সংস্থাও টাকার কাছে নিজেদের গোলাম করে রেখেছেন তাই শুধু আশাই আমাদের ভরসা!"

এবং আমার থেকে এক- দুইধাপ উপরের উচ্চাকাঙ্ক্ষী হলে হয়তো বলবেন আরে যতই ভুমিকম্প হক আমাদের কিছুই হবে না! কেউ বলবেন আল্লাহ, কেউ বলবেন ভগবান বা কেউ বলবেন ঈশ্বর আমাদের রক্ষা করবেন। তবে আশায় গুঁড়েবালি হলে কী কী করবেন? যদি দেশে ৬.৫ মাত্রার বা তার উপরের কোন সংখ্যা আমাদের গুণী আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেই দেয় তাহলে আমাদের কি হবে? কতটা আমরা কল্পনা করতে পারি? কতটা কল্পনা সরকার বা সংস্থাগুলো করতে পারে?

"আল্লাহ-ভগবান বা ঈশ্বর তো বলেই দিয়েছেন কর্মই আমাদের ফল দিবে। তাহলে এটার পূর্বপ্রস্তুতি স্বরূপ আমাদের কি কর্মপরিকল্পনা বা পূর্বপ্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজন নাই? এ পর্যন্ত ২০১০ সালে যে ভূমিকম্প হয়েছিল তখন সরকারের পক্ষথেকে কিছু সেচ্ছাসেবককে ট্রেনিং দেওয়ার কথা বলা হয়েছিলো! এ পর্যন্তই!  পরে সবাই ভুলে গিয়েছেন।"

আরে ভূমিকম্প হক আগে তারপর দেখা যাবে – এটাই হয়তো আমাদের সংস্থা গুলো বা সরকার ভেবে রেখেছেন! আজ BBC নিউজ এ দেখলাম এবং আমাদের কিছু ভূমিকম্প গবেষক বলেছেন যে ভূমিকম্প হলে বাড়ির বাইরে দ্রুত যাওয়ার প্রবণতা আরও বেশি ক্ষতিকর। কিন্তু সরকারি ভাবে সচেতনতা বাড়ানোর কোন পদক্ষেপ নাই।

আমাদের ফায়ার সার্ভিসের যে অবকাঠামো, তাতে তাঁরা কী এবং কততুকু করতে পারেন বা পারবেন তা আমরা দেখেছি এবং ভবিষ্যতে এর থেকে বেশি কিছু আশা করাটাও সমীচিন হবে বলে মনে হয় না। তাহলে নেপালের মত ৭.৯ মাত্রার ভূমিকম্প আমাদের দেশে হলে আমাদের কি অবস্থা হবে এটা কবে অনুমান করতে পারব আমরা?

নেপালে এ পর্যন্ত প্রাণহানি ঘটেছে প্রায় ৩২০০ জন এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই সবাই বলছে, ওদের জনবসতি  আমাদের থেকে অনেক কম বাড়িগুলোও আমাদের মত এত বড় বড় নয়। তাহলে আমাদের অবস্থা যে তাদের থেকে কয়েকগুণ বেশী খারাপ হবে এটা ভাবার জন্য মনিষী না হলেও চলবে। তাই সরকারের প্রতি অনুরোধ ভূমিকম্প রোধে দ্রুততম সময়ে সুশৃঙ্খল ও বাস্তবধর্মী শ্রেষ্ঠ পদক্ষেপ নিয়ে রাখুন।

আগে যা ভুল হয়েছে তা হয়তো এখন আর সংশোধন করা যাবে না। তাই আজ থেকেই বিল্ডিং যারা নির্মাণ করেন, যারা ভুমি জরিপ করেন, যারা অনুমোদন দেন সবাইকে সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালনে গ্রহণযোগ্য আইনের প্রয়গে বাধ্য করান, বেশি পরিমানে মনিটরিং টিম গঠন করুন, কোনভাবেই যেন কেউ দুর্বল নির্মাণ সামগ্রি ও দুর্বল কাঠামো দিয়ে বিল্ডিং নির্মাণ করতে না পারে এবং ভূমিকম্প রোধক ব্যাবস্থা নিয়েই যেন বিল্ডিং নির্মিত হয়।

তা না করতে পারলে, বিল্ডিং নির্মাণ করবে গুটিকয়েকজন এবং প্রাণ যাবে লক্ষ-কোটি জনের এবং আমাদের হায়-হুতাশ আর কান্নাকাটি শুধু বাতাস ভারি করেই যাবে।

২৬/০৪/২০১৫ বিকালঃ ৪.৫৮ মি।