নারী হিসাবে নয়, মানুষ হয়ে বেঁচে থাকার অধিকার চাই

রবীন গুহ
Published : 8 March 2012, 05:17 PM
Updated : 8 March 2012, 05:17 PM

জন্মের পর থেকেই শুরু হয় মেয়েদের বঞ্চনা।আমাদের দেশের বেশীর ভাগ বাবা-মা মেয়ে শিশুর জন্ম দিয়ে খুশী হননা।ব্যতিক্রম কিছু ঘটনা বাদে সাধারনত ছেলে হলে হৈ হৈ রৈ রৈ আর মেয়ে হলে কেন যেন তেমন কিছুই নেই।এমনকি শিশু জন্মের পর সামাজিক বা ধর্মীয় নিয়মকানুন পালনের ক্ষেত্রেও পার্থক্য দেখা দেয়।অনেকে আবার ছেলে শিশুর আশায় একের পর এক মেয়ের জন্ম দিতে থাকেন।তারপর কয়েকজন মেয়ের পিতা মাতা হয়ে নিজেদের সারাটা জীবন আরো বেশী অসুখী,অভাগা ও ক্ষেত্রবিশেষে বিভিন্ন মানসিক জটিলতায় ভোগেন।এরপর স্কুল বা কলেজ জীবন থেকেই বিভিন্ন সহপাঠী,পাড়া-প্রতিবেশী,আত্মীয় স্বজন বা অন্যান্যদের কাছ থেকে বিভিন্ন হয়রানির স্বীকার হতে হয়,অনেককেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে দেখা যায়।এরপর স্বামীর সংসারে এসেই খেতে হয় আরেকটা ধাক্কা।শুরু হয় শ্বশুর বাড়ির লোকদের বউয়ের খুঁত ধরার পালা।যে সব কারনে মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকদের উপর ক্ষোভে দুঃখে ফেটে পড়েন সেই একি অন্যায় কাজগুলি করতে থাকেন নিজের ছেলের বউদের উপর।এরপর কর্মজীবনেও কম বিড়ম্বনা পোহাতে হয়না নারীদের।বেতন, সুযোগ সুবিধা সব ক্ষেত্রেই কেবলই বৈষম্য।সন্তান প্রসবের পরও অনেক নারীদের ক্যারিয়ার হুমকির সম্মুখীন হয়।সন্তান লালন পালন, সাংসারিক অন্যান্য কাজ করতে গিয়ে অনেক যোগ্য নারীরাই নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে না পেরে স্বামীদের উপর নির্ভরশীল হয়।সংসারের অভাব অনটনের সময় স্বামী সন্তানদের পেট ভরে খাইয়ে নিজেরা যে কত বেলা না খেয়ে থাকেন, সেই হিসাব কেউ রাখেনা!এর পর স্বামী বা অন্যান্যদের খোঁটা তো আছেই।দুমুঠো ভাতের খোঁটা।অথচ সারাদিন গৃহ কার্যের যে শ্রম,আত্মত্যাগ তার কোনো মূল্যায়নই নেই!যখন বুড়ো হন তখনও একই হাল।সংসারের যে কোনো ব্যাপারে মুরুব্বী হিসাবে দাদা,নানাদের বেশ দাপট থাকলেও দাদি,নানিদের কি হাল তা সবারই জানা।অধিকাংশ ক্ষেত্রে যেন মৌন সমর্থক বা নাতি নাতনীদের নিয়ে শুধুই বেচে থাকা।আমাদের দেশে রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই নারীরা বেশ এগিয়েই আছেন বলেই মনে হয়।বিশ্বব্যাপী নারীর ক্ষমতায়নের জন্য বাংলাদেশ বেশ প্রশংসিত।প্রধানমন্ত্রী,বিরোধীদলীয় নেত্রী,সংসদীয় উপনেত্রী,স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী,পররাষ্ট্রমন্ত্রী সবাই নারী।কিন্তু আদৌ কি নারীর ক্ষমতায়ন এদেশে হয়েছে?নারীরা আজো জন্ম থেকে মৃত্যু অব্দি সমাজের প্রতিটা ক্ষেত্রেই বঞ্চিত,নিগৃহীত বা বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছে।

নারীরা নারী হিসাবে নয়, মানুষ হয়ে বেঁচে থাকুক।সে নারী কেবল তার স্বামী বা প্রেমিকের জন্য,আর বাকী সবার কাছে একজন সুন্দর ও সংবেদনশীল মানুষ হিসাবেই প্রতিষ্ঠিত হোক।আজকের ৮ই মার্চে নারীদিবসে ফেসবুকে অনেক নারীদের স্ট্যাটাস দেখে খুব ভাল লাগছে,তাদের অনেকেই নারী হিসাবে অধিকার প্রতিষ্ঠার নয়, একজন পরিপূর্ণ মানুষের স্বীকৃতি চায়।সমাজের প্রতি স্তরে এই মানুষদের প্রতি বৈষম্যের অবসান হোক। লিংগ বৈষম্যের স্বীকার এইসব প্রতিবাদী মানুষদের প্রতি অভিনন্দন।