শিরে সংক্রান্তি

রকিবুর
Published : 30 Sept 2015, 09:10 PM
Updated : 30 Sept 2015, 09:10 PM

সচরাচর আর এখন ব্লগ লিখিনা, লিখতে খুব মন চাইলেও ভয় লাগে, কে কখন কোপ দিয়ে বসে, আবার কবে না কবে জামিন অযোগ্য মামলা খেয়ে বসি কে জানে। আসল কথায় আসি। গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে গুলশানে গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন হন এক ইতালীয় নাগরিক। তা আবার এমন সময়ে যখন অস্ট্রোলিয়া ক্রিকেট দল আমাদের দেশে আসতে অস্বীকৃতি জানায় সন্ত্রাসী হামলার ভয়ে। আর তাদের নিরাপত্তা প্রতিনিধি দল ঢাকায় সারাদিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধানদের সাথে বৈঠকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার আশ্বাস পায় এবং ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। ঠিক তখনই এমন ঘটনা ঘটল। ঘটনাস্থলে নাকি প্রতিদিন সন্ধার আগে বৈদ্যুতিক খাম্বার বাতি জ্বললেও ওইদিন ঠিক ঘটনার পরে জ্বলেছিল। গুলশানে কূটনীতি পাড়ায় প্রকাশ্যে গুলি করে এমন একটা হত্যাকাণ্ড ঘটানোর সাহস কয়জন খুনির আছে! খুব সাধারণ প্রশ্ন এটি।

আগে জানতাম ঐ এলাকাটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারীর আওতায় থাকে, যদি থেকে থাকে তাহলে কি এমন ঘটনা ঘটল। ওখানে কি কোন ছিঁচকে ছিনতাইকারী বা ডাকাত বা ছোটখাটো মানের পেশাদার খুনিরা এমনটা করার ঔদ্ধত্য দেখাতে পারে? আমার অন্তত তা মনে হয়না। এর আগেও এক সৌদি কূটনৈতিক হত্যা করা হয়েছিল এরকম। পরে কয়জন ছিনতাইকারী দোষী সাব্যস্ত হয়। বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতন অস্ট্রোলিয়ার বেঁকে বসা এবং পরে তাদের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেয়ার আশ্বাসের পর হঠাৎ এমন ঘটনা স্বাভাবিক ভাবেই ঐ অষ্ট্রেলিয় প্রতিনিধিদের ভয়ে ফেলবে এবং নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। এবার তবে প্রশ্ন কারা এমন বিশৃঙ্খলা বা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরী করতে চায় এবং বিদেশিদের কাছে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের প্রমান করতে চায়? ভেবে দেখুন সিরিয়ায় অনেক এলাকা আইএস জঙ্গিদের দখলে যাওয়া এবং গৃহযুদ্ধ বা অরাজকতা তৈরি হওয়াতে কাদের বেশি লাভ হল। আইএসের দখল করা তেল ক্ষেত্রে এখন সব তুর্কি প্রকৌশলীরা কাজ করে, এবং ঐ তেল তুরস্ক আবার কালোবাজারে বিক্রি করে মুনাফা করছে। কালোবাজারে পশ্চিমারা কম দামে তেল কিনে অনেক লাভবান হচ্ছে। রাশিয়া আবার সেনা ঘাটি বসিয়ে কিছু খনি প্রকৌশলী নিয়োগ করল কিছুদিন আগে। এই তেলা-তেলি যুদ্ধে অনেক তরুন আবার জিহাদের গন্ধ পায় আর তুরস্ক বর্ডার হয়ে সিরিয়া গিয়ে তাতে যোগ দেয়। তুরস্ক অঘোষিত ভাবে ঐ আইএসে যোগ দেয়ার রুট হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। সব দিক থেকে চিন্তা করলে সিরিয়ায় অরাজকতার মাধ্যমে সব থেকে বেশি লাভবান তুরস্ক।

ধরুন বাংলাদেশ এমন একটা অরাজক দেশ হল, মানে জঙ্গি রাষ্ট্র, তবে আমাদের গ্যাসক্ষেত্রের প্রকৌশলীরা কোথা থেকে আসবে। অবশ্যই পার্শ্ববর্তী কোনও দেশ থেকে। ১০০০ কি.মি. দূর থেকে কেউ আসবেনা। প্রতিবেশী দেশগুলো তাদের সীমান্ত নিয়ে দুশ্চিন্তায় পরবে। পশ্চিমারা তখন পার্শ্ববর্তী কাউকে আহ্বান জানাবে সৈন্য দিয়ে গৃহ যুদ্ধ থামাতে। তখন আমিরিকান বা চিনাদের এদেশে সেনা ঘাটি বা সাগরে নৌ ঘাটি করাটাও রোখা যাবে। তখন সব থেকে লাভবান কিন্তু তুরস্কের মতনই কেউ। এবার তাহলে ভাবুন সৌদি নাগরিক বা ইতালিয় যেই হোক তাদের মতন নিরীহ বিদেশিদের এভাবে গুলশানের কূটনীতি পাড়ায় হত্যা করে বাংলাদেশের সুনাম নষ্ট করে কারা লাভবান হতে চাচ্ছে? তারা কি চোর-ডাকাত, জঙ্গি, বিএনপি-জামায়াত, বিরোধী দল, সরকারি দল? নাকি অন্য কেউ যারা আমাদের চিন্তার বাইরে আছেন?