যুদ্ধের ময়দানে বাবা দিবস

পাগল মন
Published : 17 June 2012, 09:38 AM
Updated : 17 June 2012, 09:38 AM

মাথা আমার গরম হইয়া আছে। কারণটা ঠিক বুঝিয়া উঠিতে পারিতেছি না। কোন দিকে যাওয়া যাইতেছে না, গুলির পর গুলি চলিতেছে। একদিকে গার্মেন্টস এর সহিংসতা অপরদিকে রোহিঙ্গা ইস্যু। কোন দিকেই প্রবেশ করা যাইতেছে না। যুদ্ধের ময়দানে পক্ষ-বিপক্ষের তালু ভয়ানক গরম হইয়া আছে। এই দুইটি বিষয়ে যাহা বলিয়াছিলাম, কিছু না বলিলেই বোধ হয় ভাল হইত। কোন একপক্ষ পাঁজাকোলা করিয়া কাছে টানিয়া লইতে পারিত না। ব্লগের ময়দানে ভিন্নমত থাকিতেই পারে, কিন্তু বিষয় দুইটি লইয়া যেভাবে ১৬মিমি মেশিনগানের গুলি অনবরত ছুটিতেছে তাহাতে প্রান থাকিতে পলায়ন করাই শ্রেয়। তবুও লোভ সামলাইতে না পারিয়া, মাঝেমাঝে নাক ঢুকাইবার চেষ্টা করি, কিন্তু বারুদের তীব্র গন্ধে দম বন্ধ হইবার উপক্রম হইয়া পড়িয়াছে। কি এক নেশার দামামা বাজিয়া উঠিল, যেখানে ধীরস্থির শ্রদ্ধেয় মোনেম ভাই, হৃদয়ে বাংলাদেশ, জাহেদ, সুলতান মির্জা ভাইয়ের মতো যোদ্ধাদের মাথা ধিরে ধিরে গরম হইয়া উঠিতেছে। অশনিসংকেত তো আমি এই মাঠেই দেখিতেছি। রণসাজে সজ্জিত হইয়া চারিদিকে সাজসাজ রব পড়িয়া গিয়াছে, পালাইবার পথ নাই।

মাথা গরম হইবার কারণে ঘুম আসিতেছে না। রাত ১২টার ঠিক কয়েক মিনিট আগে, বেড রুমের দরজায় টোকা পড়িতেই লাফ দিয়া উঠিয়া পড়িলাম। মনে শঙ্কা, অসুস্থ পিতার কিছু হইল নাতো!! দরজা খুলিতেই দেখিলাম আমার ৭ বৎসরের ছোট মেয়ে নিজের হাতে বানানো বাবা দিবসের কার্ড লইয়া মিটমিট করিয়া হাসিতেছে। জন্মের পূর্ব হইতেই যাহাদের জন্য সেজদায় পড়িয়া আছি, সেই মহান সৃষ্টিকর্তার ঋণ, কনা পরিমান শোধ করিবার ক্ষমতা তো এই অধমের নাই। বুকে জড়াইয়া কোলে তুলিয়া লইলাম তাহাকে। এখন বুঝিতে পারিতেছি, সন্ধ্যা হইতে তাঁহারা মা-মেয়ে কাঁচি-কাগজ লইয়া কিসের জন্যে লুকোচুরি করিতেছিল। কিন্তু গোল বাঁধিল অন্য জায়গায়। আমার কিঞ্চিৎ বোকা, বড় মেয়ে যে সামনে মাধ্যমিক দিবে, কেন তাহাকে জানানো হয় নাই, মা ও ছোট বোন তাহাকে কোন প্রকার ইঙ্গিত না দেওয়ায়, বাবাকে উইশ করা হইতে সে ব্যর্থ হইয়াছে ভাবিয়া চোখের জল ফেলিতে ফেলিতে তাহার রুমের দরজা বন্ধ করিয়া দিলো। সে আবার ক্রন্দন করিতে খুব ভালবাসে। দুষ্টু ছোট মেয়েকে চোখ টিপিয়া বলিলাম, যাও এবার আপুকে সামলাও।

ভোর বেলা ঘুমে থাকিতেই বড় মেয়ে স্কুলে চলিয়া যায়। আজ ঘুম হইতে উঠিয়াই পাশে টেবিলে রাখা তার বাবার জন্য বানানো কার্ডটি পাইলাম। রাত জাগিয়া সে কার্ডটি বানাইয়াছে। কার্ড দুইটি পড়িয়া কতক্ষন ঝিম ধরিয়া বসিয়া থাকিলাম। একজন অক্ষম পিতার আকুতি আর ব্যর্থতা বুঝিয়া উঠিবার চেষ্টা করিলাম। সমাজ এবং দেশের জন্য যাহার কোন অবদান নাই, সে পরিবার এবং সন্তানদের কাছে কি করিয়া যোগ্য বা শ্রেষ্ঠ বাবা হইবে তাহা বুঝিয়া উঠিতে পারিতেছিলাম না। সন্তানদের কাছেও কি হিপক্র্যাট হিসেবে পরিচিতি লাভ করিয়াছি!!

তাহারা লিখিয়াছে, যাহা কিছু হউক না কেন তুমি আমাদের শ্রেষ্ঠ বাবা।