মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শুনুন এক ভদ্রলোকের অজানা কাহিনী

পাগল মন
Published : 24 May 2012, 10:49 AM
Updated : 24 May 2012, 10:49 AM

১। মকবুল হোসেন, তাজা প্রান টগবগে তরুণ, চাকরির খোঁজে । একটা স্কুল মাস্টারের চাকরি হলেই যথেষ্ট । কিন্তু কে দেবে তাঁকে চাকরি । তার মন বলছে, একটা সুপারিশ হলে তার আখাংকিত চাকরিটা হয়েই যাবে । কিন্তু কার সুপারিশ নেবে, কে তাঁকে সাহায্য করবে । হটাৎ মনে পরে গেল সেই লোকটার কথা । তাঁকে ভয় পাবার মতো লোক তিনি নন । একটা আবেদন পকেটে পুরে ঠিকানা মতো তাঁর বাড়ির সামনে হাজির, দারোয়ান জিজ্ঞাসা করতে উদ্দেশ্য বলে মকবুল হোসেন সোজা বৈঠক খানায় যেয়ে উপস্থিত । ভদ্রলোককে সেখানেই পাওয়া গেল । প্রথমে মকবুল হোসেনকে তার পরিচয় দিতে হোল, এরপর ভদ্রলোক এমন আন্তরিকতার সাথে আলাপচারিতা শুরু করলেন যে, মকবুল হোসেন ভাবতে লাগলেন, উনি ভুল করে তাকে আত্নীও ভাবছেন নাতো ? আচরণে বিমোহিত হয়ে মকবুল হোসেন তাঁর বাড়ি থেকে বের হয়ে আসলেন, ভুলে গেলেন, পকেটে তার আবেদনখানা পড়েই আছে ।

২। ভদ্রলোক বাড়ি থেকে বের হবেন । বাড়ির সামনে সাহায্যপ্রার্থী আর দর্শনার্থীদের সামান্য জটলা । গাড়ীতে উঠলেন তিনি, গাড়ী চলা শুরু হতেই, গেটের কাছের ভিড়টা একটু পাতলা হোল । গাড়ি গেটের কাছে এসে হটাৎ থেমে গেল, উৎসুক জনতা তাকিয়ে আছে গাড়ির দিকে । ভদ্রলোক দরজা খুলে গাড়ী থেকে নেমেই গেটের কাছে হাতে থালা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা হতদরিদ্র একজন ভিক্ষুকের দিকে তার নাম ধরে চিৎকার করে কাঁদতে-কাঁদতে যেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলেন । একি গ্রামের ছোট বেলার বন্ধু, কেউ কাউকে চিনতে ভুল করেনি । অনেক্ষন ধরে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন । সবাইকে হতবাক আর বিমুঢ় করে দু'বন্ধু বাড়ির ভিতর চলে গেলেন । অহংকারহীন একটি মহান হৃদয়ের কীর্তি, পাশে দাড়িয়ে থাকা মানুষগুলি ভেজা নয়নে তাকিয়ে দেখল

৩। ভদ্রলোকের এক নিকট আত্নীয়কে কিডন্যাপের প্ল্যান করে বিপথগামী কিছু তরুণ সেই আত্নীয়র অফিসের সামনে বসে ছিল । গোয়েন্দারা তা জানতে পেরে আগে-ভাগে যেয়ে তাঁদের সবাইকে ধরে ফেলে । নির্ঘাত চরম শাস্তি নেমে আসবে তাঁদের উপর, বাঁচার কোন উপায় নেই । এই তরুণদের একজনের মামা ছিলেন ওই ভদ্রলোকের খুব কাছের মানুষ । তিনি বুদ্ধি করে সবাইকে হাজির করালেন ভদ্রলোকের বাসায় তাঁর সামনে । ভদ্রলোক তাঁদের দেখে রাগে কাঁপতে লাগলেন । পিনপতন নিরবতা, সবাই তাদের অমোঘ নিয়তির কথা ভেবে ভয়ে অস্থির, মাফ চাওয়ার কথাই ভুলে গিয়েছে তারা । সেই মামা চোখের ইশারা করলেন, তরুণদের চার-পাচ জন হুড়মুড় করে ভদ্রলোককে জড়িয়ে ধরে কেঁদে মাফ চাইতে লাগল । মুহূর্তের মধ্যে গলে গেল ভদ্রলোকের মন, চোখ দিয়ে অঝর ধারায় ঝরতে লাগল পানি । বুকে জড়িয়ে ধরলেন সবাইকে, বললেন, তোরা সবাই আমার ছেলে । অপথে যাসনে তোরা, মনোযোগ দিয়ে লিখাপড়া কর, মানুষের মতো মানুষ হ ।

পাদ টিকা : পিতার মান-সন্মান রক্ষা করা ও পিতার মত হওয়া প্রত্যেক সন্তানের কর্তব্য