সঙ্কট আর বিক্ষোভের শ্রীলঙ্কায় ৪ দিন

আনিসুর রহমান
Published : 21 Feb 2012, 02:32 PM
Updated : 18 April 2022, 01:49 PM

আমাদের দেশের অনেকে শ্রীলঙ্কার সঙ্কটের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করে তৃপ্তি খোঁজার চেষ্টা করেন। তাদের স্বপ্নে ছাই দিয়ে বলে দিতে চাই বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতোন হবার কোনও সুযোগ নেই। আর শ্রীলঙ্কা নিয়ে বাইরের দুনিয়ায় যত হইচই আর হাহাকার ভেতরে তার খুব একটা লেশ নাই। আপনাদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তো? একটু খোলাসা করে বলি।

গত শুক্রবার অর্থাৎ ১৫ এপ্রিল আমি শ্রীলঙ্কা এসেছিলাম ৪ দিনের এক সাহিত্য বিষয়ক সফরে। আমার এ সফরের উদ্দেশ্য ছিল সুইডেন-শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের লেখকদের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপনের জন্য একটি যৌথ প্লাটফর্ম তৈরি করা। এসময় আমার শ্রীলঙ্কার লেখক ও বেশকিছু বুদ্ধিজীবীর সঙ্গে মতবিনিময়ও হয়। এখানে থাকার দিনগুলোতে আমার ইচ্ছা ছিল, কলম্বোর বাইরেও বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া, জাফনায় একটু ঘোরাঘুরি করা এবং অতি অবশ্যই 'আদম পিক' এ যাওয়া। এর কোনওটাই হয়ে ওঠেনি। বরং কলম্বোতেই রয়ে গেছি আন্দোলন দেখতে।  

গণমাধ্যমে সংবাদের ভিত্তিতে আমরা ইতিমধ্যে জেনে গেছি শ্রীলঙ্কার আদতে সঙ্কটটা কী। মোদ্দা কথায় দেশের আবশ্যক আমদানি ব্যয় মেটাবার জন্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বিপদসীমার নিচে নেমে এসেছে। এতে করে আবশ্যকীয় জ্বালানি তেল আমদানিসহ জরুরি পণ্য যেমন ওষুষধসামগ্রী আমদানিতে টান পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জ্বালানি তেলের সরবরাহে  টান পড়ার কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে, টান পড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। যে কারণে দেশে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। যোগ হয়েছে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের মতো উৎকট ঝামেলা। তার মানে এই নয় পুরো দেশ অন্ধকারে ডুবে আছে। 

কিছু জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে কিছু কিছু নিত্যপণ্যে। জ্বালানি সরবরাহ কেন্দ্রে যানবাহনগুলোর দীর্ঘ লাইন চোখে পড়ছে। তার মানে এই নয় দেশের পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। রেলগাড়ি চলছে রেলগাড়ির মতন। গণপরিবহনের বাসগুলো ঠিক ঠিক চলছে। ট্যাক্সি বা ভাড়ায় চালিত স্কুটার, গাড়িসহ সবকিছু চলছে আগের মতই। তবে ব্যক্তিগত গাড়ি চলছে অনেকটা ভাটার টানে। ব্যক্তিগত গাড়ির মালিক বা চালকরা জ্বালানি তেলের জন্য ভিড় না বাড়িয়ে গণপরিবহন বা ট্যাক্সির উপর নির্ভরতা বাড়িয়েছে। বিমান এবং বিমানবন্দরগুলো ঠিক ঠিক চলছে। ঠিক চলছে বাজারঘাট, হাসপাতাল, মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা। পুঁজিবাজার দিন পাঁচেকের জন্যে বন্ধ ঘোষণা করলেও স্কুল-কলেজ-অফিস-আদালত সবকিছু ঠিক চলছে আগের মতোই।

পাশাপাশি আন্দোলন চলছে দেশটির রাষ্ট্রপতি সচিবালয়ের বাইরের সড়কে ও প্রাঙ্গণে, রাষ্ট্রপতি গোটাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের দাবিতে। কে এই গোটাবায়া? এই সঙ্কটের পেছনের কারণগুলোই বা কী?

প্রথমেই সঙ্কটের কারণগুলো মোটাদাগে বলে নিতে চাই। দীর্ঘদিন ধরে প্রায় সব সরকার কম বেশি অনিয়ম দুর্নীতি আর অপরিকল্পিত অদক্ষ হাতে দেশ পরিচালনা করেছে। বিশেষ করে ২০০৯ সালে তামিল টাইগারদের সঙ্গে যুদ্ধ পরিসমাপ্তির পর গত একযুগে দেশ পরিচালনার গলদগুলোর কারণে  সম্ভাব্য পরিণতি যা হবার তা এখন ঘটে চলেছে। দুর্নীতির লাগাম  টানেনি কোনো সরকারই। প্রকারান্তরে শেষোক্ত সরকার রাজস্ব কমিয়েছে, বিদেশি ঋণ নির্ভরতা বাড়িয়ে বড় বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে, কৃষিতে কৃত্রিম সারের ব্যবহারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহারের নীতি গৃহীত হবার ফলে কৃষি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে দেশের তিনভাগের এক ভাগ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী পর্যটন খাত ধাক্কা খেয়েছে। সবশেষ দেশটির বড় রপ্তানির উৎস রাশিয়া যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার কারণে রপ্তানি আয়েও আচমকা টান পড়ে গেছে।

দুর্বল ও আস্থাহীন বুদ্ধধর্মবাদী জাতীয়তাবাদী নেতৃত্বের দুর্বলতা ও কূটনৈতিক অদক্ষতার কারণে আশু সঙ্কট থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে ভাবার অক্ষমতার কারণে দ্রুত আমদানি খরচ মেটাবার জন্য বা ঋণ ও বৈদেশিক সাহায্য পাবার জন্যে দ্রুততম সময়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে ব্যর্থতা সঙ্কটের পেছনের বড় একটি গলদ। এই সঙ্কটের দুইটি বড় দিক হচ্ছে- রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক। তার সঙ্গে রয়েছে সামাজিক বাস্তবতা বা পশ্চাদপদতা বা অগ্রগতি।

এই তিনটি দিকেরই আমি শেষ পর্যন্ত ইতিবাচক অগ্রগতি দেখতে পাই। আদতে এ সঙ্কট দেশটিকে ইতিবাচক পরিণতির দিকেই নিয়ে যাবে। কিন্তু কিভাবে? এই প্রশ্ন বিশদ আলোচনা করার পূর্বে বলে নিতে চাই- কে এই গোটাবায়া রাজাপাকসে।

গোটাবায়া রাজাপাকসে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের ছোট ভাই। ইনি ২০০৯ সালে মাহিন্দা রাষ্ট্রপতি থাকার সময়ে প্রতিরক্ষা সচিব ছিলেন। তার সময়েই এবং তার দেখানো ছকেই তামিল টাইগারদের সঙ্গে যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে।  তিনি একসময় সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ছিলেন। সেনাবাহিনীর চাকরির পরিসমাপ্তির পরে দীর্ঘদিন মার্কিন মুল্লুকে ছিলেন। তার পরিবারের সদস্যদের কেউ কেউ এখনও মার্কিন মুল্লুকে থাকেন। ২০১৯ সালের কলম্বোতে ইস্টার সানডের দিন সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার জেরে পরবর্তী রাষ্ট্রপ্রতি নির্বাচনে বৌদ্ধ-জাতীয়তাবাদী কার্ড ব্যবহার করে গোটাবায়া রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হন সাবেক রাষ্ট্রপতি রানাসিংহে প্রেমাদাসার ছেলে বর্তমান বিরোধীদলীয় নেতা সাজিৎ প্রেমাদাসা।

বর্তমান বা বিদায়ী সরকারের মন্ত্রিসভায় রাজাপাকসে পরিবারের চার সদস্য থাকার পাশাপাশি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাজাপাকসে পরিবারের একচ্ছত্র পদায়ন। ২০০৯ সালে সংঘটিত তামিলদের সঙ্গে যুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগও রয়েছে গোটাবায়ার বিরুদ্ধে ।

বর্তমানের এ সঙ্কট গত একযুগে ধাপ ধাপ দানা বেঁধেছে। যার বেশির ভাগ সময় রাজাপাকসে পরিবার দেশের ক্ষমতার কেন্দ্রে অবস্থান করেছে। যে কারণে সকল অভিযোগ ও সঙ্কটের জন্য দায়টুকু তাদের উপর বর্তেছে। মানুষের ভেতরে পুষে রাখা ক্ষোভ যন্ত্রণার জন্য অবধারিতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন গোটাবায়া রাজাপাকসে। সঙ্গে নতুন যোগ  হয়েছে রাজাপাকসের পরিবারের সকলকে ক্ষমতার যাবতীয় ছোঁয়া থেকে সরে যেতে হবে।

তার মানে এই নয় যে- সরকারের বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করছেন, তারা অন্য দলের নেতাদের ওপর আস্থা  রাখছেন। তাদের কাঠগড়ায় দেশের তাবৎ রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্ব। অভিযোগ একটাই- সবাই দুর্নীতি করেছে, চুরিচামারিকে প্রশ্রয় দিয়েছে।

আন্দোলনের সূত্রপাত কবে থেকে কিভাবে?

পেশায় চিকিৎসক এবং অনলাইনকর্মী অনুরাধা বান্দরন 'গো হোম গোটা' লিখে টুইটার এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাড়া ফেলেন। সরকারের টনক নড়ে। অনুরাধাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয়।  শেষতক তিনি ৩ এপ্রিল জামিনে মুক্তিও লাভ করেন।

এ সঙ্কটের সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিণতি দারুণ ইতিবাচক। ইতিপূর্বে নানাভাবে জাতীয়তাবাদী কার্ড ব্যবহার করে জাতিগত বিভেদের রাজনীত আর ধর্মীয় ধোঁয়া তুলে ধর্মকে ক্ষমতার সিঁড়ি ব্যবহার করার জারিজুরি ফাঁস হয়ে গিয়েছে। একদিকে দেশটির মানুষ জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র দলমত নির্বিশেষে একাট্টা। অন্যদিকে দেশটির বিবদমান রাজনৈতিক দল, নেতৃত্ব আর তাদের পরিবার। দেশটির সামগ্রিক জনগোষ্ঠী যারা দেশ থেকে দুর্নীতি আর চুরির সকল মুখ ও মুখোশ  উপড়ে ফেলতে চান। তারা চান দেশের শাসনব্যবস্থার যুগোপযোগী সংস্কার। এরপরে আলোচনা হবে- কে দিবেন নেতৃত্ব অর্থাৎ নেতা বেছে নেওয়ার বিষয়টি। আন্দোলনকারীদের শ্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ও ব্যানারে শব্দগুচ্ছ তামিল, সিংহলি আর ইংরেজি ভাষায় লেখা- 'গো হোম গোটা', 'অল দ্য টিম মাস্ট গো'. 'রাজাপাকসে পরিবার গো হোম'. 'চুরিদারি বন্ধ করো',  'অল দ্য রাজাপাকসে গো টু জেল'। 

আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন নানা পেশার, বয়স ও ধর্মের মানুষ, যোগ দিয়েছেন গির্জার পাদ্রী ও  ফাদার, শিশু ও মা, বাবা ও ছেলে। আন্দোলন স্থলে চালু করা হয়েছে গ্রন্থাগার, বিনামূল্যে খাবার ও পানির দোকান, প্রস্তুত রয়েছে রেড ক্রিসেন্ট দল, চালু করা হয়েছে সারিবদ্ধ অস্থায়ী শৌচাগার। যোগ দিয়েছেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। তাদের প্রার্থনার সময় চতুর্দিক ঘিরে পাহারা দিচ্ছে অন্যধর্মের মানুষেরা।

এক কথায় এই গণজাগরণ এক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিপ্লব যা দেশটির আপামর মানুষের মাঝে দেশাত্ববোধ আর ভ্রাতৃত্ব ও সহমর্মিতা জাগ্রত করার এক সুবর্ণ সুযোগ সামনে এনে দিয়েছে। তামিল-সিংহলি-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-মুসলমান সকলে এখন এক দেশের বহু-বৈচিত্র্যের ভাই ও বোন হয়ে গেছে। তারা এখন 'আয় তবে সহচরী হাতে হাত ধরি ধরি'।  এই দেশাত্ববোধ আর ঐক্যই তাদের বাঁচিয়ে দিবে, এনে দিবে দেশটির সমৃদ্ধি আর শান্তি।

অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য স্বল্পমেয়াদে একটি অন্যতম দ্রুত সমাধানের রাস্তা হচ্ছে সাহায্য বা ঋণ নিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় স্বাভাবিক স্থিতির পর্যায়ে নিয়ে আসা। সে চেষ্টা চলছে। ভারত, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আইএমএফ, চীনসহ বেশকিছু দেশ এগিয়ে আসছে। দীর্ঘমেয়াদী সমাধান হচ্ছে- আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনা এবং রপ্তানি খাতকে চাঙা করা। শ্রীলঙ্কার যে আধুনিক অবকাঠামো তাতে লক্ষ্য ঠিক রেখে দুর্নীতি বিদায় করা গেলে দেশটি তার শ্রী রক্ষা করতে পারবেই।

দেশের মানুষের মাঝে রয়েছে একধরনের স্থিতিশীলতা, দৃঢ় লক্ষ্য নির্ধারণ আর দারুণ এক আত্মবিশ্বাস। অর্থনৈতিক সঙ্কটথেকে দেশটি যে উৎরে যাবে তারা প্রায় সকলেই মনে মনে ধারণ করেন। তাদের উৎকণ্ঠা আর আশঙ্কার জায়গা রাজনীতি। রাজনীতি ঠিক হয়ে গেলে বাকিগুলো 'কান টানলে মাথা আসা'র মতো অবস্থা হবে ।

সম্ভাব্য রাজনৈতিক সমাধান কী হতে পারে?

সামনে আপাত তিনটি পথ খোলা:

১. রাষ্ট্রপতি আর প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান মতো সর্বদলীয় জাতীয় সরকার গঠন করা। তবে সেটা হবার নয়, কেননা কাঠগড়ায় আসামি পুরো রাজাপাকসে পরিবার।

২. রাষ্ট্রপতি গোটাবায়ার পদত্যাগের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা। তবে এটার জন্যে যে সংলাপ শুরু করা এবং বহুপাক্ষিক প্রতিনিধিত্ব ঠিক করা দরকার, সেরকম আবহ এখনো দৃশ্যমান নয়। শেষ পর্যন্ত বিরোধীপক্ষের দুই নেতা প্রদীপের আলোয় চলে আসতে পারেন। তারা হচ্ছেন- সাজিৎ প্রেমাদাসা এবং পাটালি চাম্পিকা রানাওয়াকা। 

৩. প্রথমোক্ত সমাধান দুইটি ব্যর্থ হয়ে গেলে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে আন্দোলন দমানোর আশঙ্কাকে নাকচ করে দেওয়া যাবে না।  এরকম ইঙ্গিত ক্ষমতাধরদের দুয়েকটি সূত্র থেকে গণমাধ্যমে এসেছে।

সবকিছুর পরে প্রশ্ন থেকে যায়, এই আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিণতি বা রাজনৈতিক অভিভাবকত্ব কোথায় নিহিত আছে?

এ লেখাটি যখন লিখছি তখনই গোটাবায়া রাজাপাকসে তার দুই ভাই ও ভাতিজাকে বাদ দিয়ে মন্ত্রিপরিষদে নতুন ১৭ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন। নতুন এ ‌১৭ জনের বেশিরভাগ সদস্যই তার নিজেরই দলের। আবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি- অভিযোগের নাটের গুরু  গোটাবায়া রাজাপাকসেকেই মনে করেন তারা। কাজেই মনে হয়না, আন্দোলনকারীরা আপাতত এ পরিবর্তন মেনে নিয়ে ঘরে ফিরে যাবেন।

তবে এখন অবস্থা যাই থাকুক, এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীদের দাবির সমর্থনে রাজনৈতিক যোগসূত্র বা সমাধান বেরিয়ে আসবে। ইতোমধ্যে বিরোধীদলীয় নেতা সাবেক রাষ্ট্রপতি রানাসিংহে প্রেমাদাসার ছেলে সাজিৎ প্রেমাদাসার সংসদে প্রদত্ত ভাষণের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের কথামালার প্রতিধ্বনি বা প্রতিফলন খেয়াল করা যায়। সাজিৎ বিগত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বর্তমান রাষ্ট্রপতির বিপরীতে নির্বাচন করে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। এর মধ্যে সংসদে প্রদত্ত বিতর্কে অংশ নিয়ে তিনি রাষ্ট্রপতির নির্বাহী ক্ষমতা কমানোর প্রস্তাব দিয়েছেন সংসদে।

শেষতক শ্রীলঙ্কার সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসবে। যদিও আপাতত কিছুটা ভোগান্তি ও অনিশ্চিত আবহ দৃশ্যমান। তবে এসবের আড়ালে বড় সঙ্কট রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন এবং সামরিকায়ন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি সাবেক সেনাকর্মকর্তা হওয়ার ফলে সামরিকায়ন অনেকটা মিয়ানমারের আদলে বাড়তে শুরু করেছে। দেশের মানুষের উৎকণ্ঠার এটিও একটি বড় কারণ।

চতুর্দশ শতকে তামিল রাজার আমন্ত্রণে মরোক্কোর পর্যটক ইবনে বতুতার মুগ্ধ চোখের শ্রীলঙ্কা, আমাদের কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের মোহময় সিংহল, আর পাবলো নেরুদার কলমে উঠে আসা এই লঙ্কাভূমি তার ইতিবাচক লক্ষ্যে পৌঁছাবেই। ভারত মহাসাগরের জল পেরিয়ে পূর্ব ও পশ্চিমের জীবন ও কারবারের ট্রানজিট দ্বীপটি তার টুকি পাল খুলি হাল নিয়ে ঠিক হাত ও গন্তব্য খুঁজে নিবেই। চলমান আন্দোলন সেই রকম ইঙ্গিত বহন করে।