প্রধানমন্ত্রীর সিঙ্গাপুর সফর এবং প্রবাসীদের প্রত্যাশা

Published : 12 March 2018, 03:20 AM
Updated : 12 March 2018, 03:20 AM

চার দিনের সফরে (১১ মার্চ থেকে) এখন সিঙ্গাপুর সফরে রয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই প্রবাসীদের সুখ-দুঃখ নিয়ে কিছু কথা লিখছি।

প্রবাস জীবন নিয়ে লিখতে গেলেই মনটা কষ্টে জর্জরিত হয়। প্রবাসের এই সুখ-দুঃখের কথা কিভাবে শুরু করবো বুঝে উঠতে পারি না। কলমটা বারবার যেন থমকে দাঁড়ায়। হৃদয় মাঝে অজানা এক শূন্যতা বিরাজ করে। পুরনো স্মৃতিগুলি নতুন করে চোখের সামনে ভেসে উঠে মনের অজান্তে। অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু অশ্রু ঝরে পড়ে গাল বেয়ে। নিজেকে বড্ড একা মনে হয়। পাওয়া না পাওয়ার হিসেব মিলাতে পারিনা। অবহেলা আর অনাদরের এই প্রবাস জীবনের ইতিবৃত্ত। বুঝে উঠতে পারিনা কোথা থেকে শুরু করবো।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রবাসে আসার আগে ও পরে যেসব সমস্যা হয়:

অনেকে দালালের খপ্পরে পড়ে, ফলে টাকা জোগাড়ের জন্য বাড়িঘর বিক্রি করে নিঃস্ব হয় অনেকে। প্রতারকের পাল্লায় পড়ে অর্থ খোয়ানো, এজেন্সিতে বেশি টাকা প্রদানে বাধ্য করা, কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত না হওয়ায় ট্রেনিং বাবদ অতিরিক্ত খরচ, বিমানবন্দরে হয়রানি, মেইন কোম্পানির কথা বলে সাব কোম্পানিতে কাজ দেওয়া ইত্যাদি ঘটে অহরহ।

এছাড়াও প্রবাসে রয়েছে থাকা-খাওয়ার সমস্যা। বেশি বেতনের কথা বলে এখানে এসে কম বেতনে চুক্তি করিয়ে নেওয়া হয়। দিন দিন এখানে বেতন কর্তন বাড়ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি থামছে না, ফলে জীবন নির্বাহের ব্যয় বাড়ছে, অথচ বেতন বাড়ানো হচ্ছে না। কিছু কোম্পানিতে বেতন ঠিকমত প্রদান করা হচ্ছে না। দ্বৈত নাগরিকত্ব পাওয়া বাংলাদেশি-সিঙ্গাপুরি ব্যবসায়ী দ্বারা সাধারণ প্রবাসীরা প্রতারিত হয়ে নিঃস্ব হওয়ার ঘটনা ঘটছে।

কিভাবে এই সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে:

এই সমস্যার সমাধানের জন্য দেশ থেকে যথাযথ কারিগরি যোগ্যতা অর্জন করে তারপর বিদেশের পথে পাড়ি জমাতে হবে। এজন্য  আমাদের দেশে কারিগরি প্রতিষ্ঠান বেশি করে গড়ে তুলতে হবে, আমাদের কে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। দেশের ট্রেনিং সেন্টারগুলিতে কড়া নজরদারি করতে হবে। দেশের এজেন্টদের কড়া মনিটরিং করতে হবে।

সরকারি ভাবে বিদেশ গমনেচ্ছুদের তালিকা করে তারপর তাদেরকে এজেনটদের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। বিদেশ যাবার জন্য সহজ শর্ত এবং ঘুষ ছাড়া ঋণ প্রদান নিশ্চিত করা দরকার।

আরেকটি বিষয়, বিমানবন্দরে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রাবাসীদের সাথে চাকরের মতো আচরণ করে। যাদের টাকায় বিমান বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন হয়, সেই রেমিটেন্স সৈনিকদের চাকর না ভাবা জরুরি।

হাই কমিশন থেকে আমাদের প্রত্যাশা:

হাই কমিশন থেকে প্রত্যাশিত সেবা পাওয়া সবার অধিকার। কিন্তু এই সেবা পাওয়া মানে যেন এক স্বপ্নের জগতে প্রবেশ করা। নায্য সেবা পেতে এখানেও দালাল ছাড়া কাজ হয় না। সিডিউল করে প্রবাসীদের ডরমিটরিতে গিয়ে প্রবাসীদের খোঁজ নিতে পারে হাই কমিশন। দেশের কিছু সুবিধা এখানে চালু করা যেতে পারে। যেমন- জাতীয় আইডি কার্ড তৈরি করে দেয়া, দেশের স্থানীয় এবং জাতীয় নির্বাচনে অনলাইনে ভোট দেয়ার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। আশ্চর্য হলেও সত্য যে, সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ হাই কমইশন অফিসে পাসপোর্ট এবং জন্ম সনদ সহ অন্যান্য কাগজপত্র ঠিক করে বাইরের একটি প্রতিষ্ঠান। তাহলে বুঝাই তো যায় হাই কমিশনের সেবা!

আমি সেম্বকর্প কোম্পানিতে কাজ করি। এই কোম্পানির সুপারিশকে সিঙ্গাপুরের মিনিস্ট্রি অব ম্যান পাওয়ার পর্যন্ত সম্মান দেয়! বাস্তব অভিজ্ঞতা হলো, আমার এই কোম্পানি আমার এক কলিগের জন্য বিশেষভাবে সুপারিশ করেছিল জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট করে দিতে। কিন্তু আমাদের হাইকমিশন কোন ধরনের গুরুত্বই দেয়নি। তাই আমার কোম্পানির মানবসম্পদ কর্মকর্তা দুঃখ করে বলেছিল, তোমাদের দেশের মানুষ সম্মান নিতেও জানেনা, দিতেও জানে না।

প্রধানমন্ত্রীর নিকট আমাদের প্রত্যাশা:

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার দক্ষ হাতের সুনিপুণ ছোঁয়ায় দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আপনার হাতে দেশ থাকলে আমাদের ডিজিটাল সোনার বাংলা এগিয়ে যেতে বাধ্য।

পরম পূজনীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি অবশ্যই জানেন প্রবাসীদের রেমিটেন্সে দেশ উন্নত হচ্ছে। আমাদের ট্যাক্সের টাকায় যে চাকুরেদের বেতন হচ্ছে তাদের কিসের এত বড়াই? কেন উনারা প্রবাসীদের হয়রানি করেন? লাগেজ চোরের তকমা যাদের গায়ে লাগানো তাদের কিসের আবার অহংকার? উনারা প্রবাসীদের কেন মূর্খ ভাবেন? বিমানবন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বোঝা উচিত, প্রবাসী হলেই যে তারা সবাই মূর্খ হবে এটা ভাবার কোন কারণ নেই। আপনাদের মত কর্মকর্তাদের চেয়ে অনেক শিক্ষিত লোকও প্রবাসে চাকুরি করেন।

সুতরাং মহামান্য প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গকন্যার নিকট আমি অনুরোধ করবো, বিমানবন্দরে যেসব বেয়াদব কর্মকর্তা আছে তাদেরকে আদব শিক্ষায় বাধ্য করুন। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশের উন্নয়নের অংশীদার সকল প্রবাসীকে প্রথম শ্রেণির নাগরিকের মর্যাদা দিন।

প্রবাসীদের কল্যাণের জন্য কয়েকটা পয়েন্ট উপস্থাপন করছি:

এক জরিপে দেখা গেছে প্রবাসীরা বেশিরভাগ অর্থই বাড়ি তৈরিতে ব্যয় করে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সরকার প্লট-ফ্ল্যাট বরাদ্দ করে, তাহলে রেমিটেন্স সৈনিক অর্থাৎ প্রবাসীদের প্রতি সরকারের কি কোনো দায়িত্ব নেই? নাকি কয়েকদিন পর পর বক্তব্য দিয়েই শেষ?

প্লিজ সরকারে যারা আছেন, তারা ভেবে দেখুন। আমাদের দাবি-

প্রবাসীদের প্রথম শ্রেণির নাগরিক ঘোষণা করা হোক, প্রবাসীদের জন্য সিপিএফ চালু করা হোক, স্বল্প মূল্যে প্রবাসীদের ফ্ল্যাট এবং প্লট বরাদ্দ দেয়া হোক, হুন্ডি ব্যতীত সাধারণ প্রবাসী যারা বৈধ উপায়ে দেশে টাকা পাঠায় তাদের প্রেরণা দেবার জন্য বিভিন্ন স্কীম চালু করা হোক।

প্রবাসীদের সরকারিভাবে রেমিটেন্স সৈনিক উপাধি দেয়া হোক। প্রবাসীদের বাড়ি তৈরিতে বাস্তবিক ঋণ প্রদানে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হোক। সিনিয়র প্রবাস প্রত্যাবর্তনকারীদের জন্য সংসদে সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা করা হোক। প্রবাসীদের ছেলে-মেয়েদের জন্য শিক্ষা এবং চাকুরি ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি চালু করা হোক।

সবশেষে অগ্নিকন্যা, জননেত্রী শ্রদ্ধাভাজনেষু প্রধানমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘজীবন কামনা করে বিদায় নিচ্ছি।