হুমায়ূন আহমেদ কি এতোই খারাপ ছিলেন?

হিমালয় হিমু
Published : 23 July 2012, 02:15 PM
Updated : 23 July 2012, 02:15 PM

না ফেরার দেশে চলে গেলেন হুমায়ুন আহমেদ। অনেকে বলছেন শরৎ এর পরে বাংলা সাহিত্যের প্রাণ ভ্রমরা হয়ে ছিলেন তিনি। অনেকেই আছে একুশে বই মেলায় গিয়ে শুধু তাঁর বই কিনতেন। শুধু তাঁর জন্যই যেতেন বই মেলায়। আমি আনিসুল হক, ইমদাদুল হক অন্যান্য লেখকদের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি আমি সহ অনেকেই হুমায়ুন আহমেদকে তাদের থেকে এগিয়ে রাখে বা আমি রাখি। তাঁর সাহিত্য আমাদের যুব সমাজকে অনেক টেনেছে। তাঁর বই পয়সা দিয়ে আমরা কিনেছি। হিমুর বই পড়ার সময় মাঝে মাঝে হিমু ভাবতাম নিজেকে। তাঁর সৃষ্টি দিয়ে নিয়ে গেছেন আমাদের ১ মজার, সমাজ দরদী চরিত্র হিমু এর মাঝে কিংবা কিঞ্চিত বোকা শুভ্র এর মাঝে।

চলচ্চিত্র, নাটকেও তাঁর সৃষ্টি অনুকরনীয়। তাঁর চলচ্চিত্র বা নাটকও ছিলো বেশ মান সম্পন্ন। তাঁর চলচ্চিত্র বা নাটক নিয়ে আমার বা কারো কোন কথা নেই বা কিছু বলারও দরকার নেই। তাঁর চরিত্রগুলো কতটুকু মর্মস্পর্শী ছিলো তা বোঝা যায় যে ১ নাটকে বাকের ভাই এর ফাঁসি না দেয়ার জন্য মিছিল হয় এবং তাঁর নাটক দেখার জন্য মানুষ সময় বের করে টিভি সেটের সামনে বসে। আজ বাংলাদেশে যেখানে ২০ টার ওপরে টিভি চ্যানেল আছে সেখানে ঈদ এর অনুষ্ঠান দেখতে গেলে নিয়মিত রকমের ছোটখাটো ১টা কোর্স করা লাগে। অমুক চ্যানেলের এইটা আবার অমুক চ্যানেলের এ ঐ অনুষ্ঠান মনে মনে করতে করতে শেষ হয়ে যাই আমরা দর্শকরা। কিন্তু তারপরও আমরা এতসব অনুষ্ঠানের মাঝে খুঁজে বেড়াই হুমায়ুন আহমেদ এর নাটক কিংবা চলচ্চিত্র। তাঁর নাটক বা চলচ্চিত্র আমরা পরিবারের সবার মাঝে বসেই দেখতে পারি কিন্তু বর্তমানে অনেক চলচ্চিত্রকার বা নাট্যকার আছেন যাদের চলচ্চিত্র দেখতে গেলে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে নিতে হয় ছোট বা বড় কেউ আছে কিনা। তাদের নাটক বা চলচ্চিত্র হলিউড, বলিউড, হিন্দি বাংলা চলচ্চিত্রের প্রভাব পড়া বর্তমান সমাজের প্রতিচ্ছবি। কিন্তু হুমায়ুন আহমেদ এর নাটক বা চলচ্চিত্রের মাঝে ফুটে উঠে আবহমান গ্রাম বাংলার ছবি কিংবা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছবি। যা কিনা পরিবারের সবাইকে নিয়ে উপভোগ করা যায় এবং হাসির গড়াগড়ি হয়।

তাঁর গড়া নুহাশ পল্লী দেখে অনেকেই তাঁর মত বাড়ি করার স্বপ্ন দেখে এবং তাঁর সেই বাগান বাড়ি আমাদের স্কুল কলেজের পিকনিক এর অন্যতম চাহিদার স্থানে পরিণত হয়েছে।

আমার মনে হয় মানুষের ব্যক্তিগত জীবন আর কর্মময় জীবন এক করে দেখা ঠিক নয়। হুমায়ুন আহমেদ আজ মারা গেছেন, চলে গেছেন সব কিছু ছেড়ে। কিন্তু আজ আমরা অনেকেই তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অনেক বেশি সমালোচনা করছি। তিনি আমারও ১জন প্রিয় লেখক ছিলেন আমিও তাকে হুমায়ুন ভাই বলে সম্বোধন করতাম। কিন্তু আজ মারা গেছেন এখন তো সব কিছু ছেড়ে চলে গেছেন। এখন আর বলি না।

আমি ১টা জিনিস বুঝতে পারছি না কিছু মানুষ কেন তাঁর ওপর এতো ক্ষ্যাপা হবে। তিনি তাঁর কর্মময় জীবন দিয়ে তো কারো ক্ষতি করেন নি। বরং বাংলা সাহিত্যে বা সংস্কৃতিতে অনেক গর্ব করার জিনিস দিয়ে গেছেন। কিছুটা হলেও বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ করেছেন। আমাদের বাংলাদেশে অনেকই আছেন যারা একটু ভালো থাকতে পারেন তারা বিদেশে পাড়ি জমান। এদেশের খেয়ে পড়ে কাজ করেন বিদেশে গিয়ে আর বলেন এই দেশের কখনোই উন্নতি সম্ভব নয় আরো হাবিজাবি কথাবার্তা আবার কিছু বললে বলে এই দেশ আমাকে কি দিয়েছে যে আমি থাকবো বা কিছু করবো!!! আর মরার সময় চায় এদেশে এসে মরতে। আরে ব্যাটা তোরে কি বড় করা হয়েছে বা বাইরে পাঠানো হয়েছে কিছু টাকা পাওয়ার জন্য। তুই থাকলে তো দেশে তোর দ্বারা আর ভাল কিছু সম্ভব এবং তোর দ্বা্রা ভালো পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব। কোন দেশেই সব কিছু দ্বা্রা স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। আমাদের রাজনীতিবিদ যারা আছেন তারাও তাদের পরিবারকে বাইরে রেখে এ দেশকে ভালোবাসার অভিনয় করে যান। নিজের ছেলেমেয়েকে বাইরে রেখে এদেশের ছেলেমেয়েদের জন্য কি স্বপ্ন দেখেন তা নিয়ে আমি বড়ই শংকিত। আজ ব্লগে অনেকই হুমায়ুন আহমেদ এর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অনেকই অনেক সমালোচনা করছেন। আমি তাদের জন্য বলছি ভাই তার ব্যক্তিগত জীবন তো আপনার আমার কোন সমস্যা করে নি বা দেশেরও কোন সমস্যা করে নি। তাহলে কেনো এতো ক্ষ্যাপা হবেন। তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের কুকর্মের সাথে জড়িয়ে আছে তাঁর ১ম স্ত্রী গুলতেকিন মেয়ে শীলা, নোভা, বিপাশা, পুত্র নুহাশ কই তারা তো আপনার কাছে কিংবা দুনিয়ার কোন আদালতের কাছে এসে বিচার দেইনি তাহলে আপনি কেনো হুমায়ুন আহমেদ এর মৃত্যতে এতো খুশি হবেন বা খোঁচামারা বা কুরুচিপূর্ণ (যদিও তিনি কুরুচিপূর্ণ কাজ করেছেন) মন্তব্য করবেন। শাওন হুমায়ুন আহমেদের মেয়ে শীলার বান্ধবী ছিলো। সেই শীলা তো ঠিক এসেছে। নুহাশ তো ঠিকই তাঁর বাবার গড়া চরিত্র হিমুর পাঞ্জাবী পরে এসেছে। তাহলে আপনি কেনো এতো হাবিজাবি কথা বলবেন। হ্যাঁ উনি অনেক শিক্ষিত, সমাজের প্রথম সারির লোক ছিলেন তাঁর কাছ থেকে আমরা কেউই এমন আশা করি না। থাক না তাঁর জীবন নিয়ে এতো বেশি সমালোচনা নাই করি। অনেকেই আছেন যাদের ব্যক্তিগত জীবন ভালো কিন্তু কর্মময় জীবন দিয়ে সমাজকে বিব্রত করেছেন দেশের ক্ষতি করছেন।

আমাদের সবার জীবনেই কিছু অন্ধকার দিক রয়েছে। কারো প্রকাশ পায় আবার কারো পায় না। অনেকই অনেক খারাপ কাজ করে কিন্তু এইগুলো অন্তরালে থেকে যায় আর আমরা দিব্যি ভালো মানুষের মুখোশ পরে ঘুরে বেড়াই।

তাই বলে আমি তাঁর কুকর্ম কে সমর্থন জানাচ্ছি না। উপরে তো একজন আছেন।