রাস্তাঘাটে-পার্কে বিব্রত হই

হিমালয় হিমু
Published : 30 April 2012, 03:53 AM
Updated : 30 April 2012, 03:53 AM

গুলিস্তান, ঢাকার অত্যন্ত ব্যস্ততম একটি স্থান। এই গুলিস্তানই ছিল একসময় ঢাকা থেকে সারা বাংলাদেশের যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু। সারা বাংলাদেশে বাস চলাচল করতো এই গুলিস্তান থেকেই। এখানে ছিলো সুবিশাল বাসস্ট্যান্ড। এরশাদ সরকার আসার পর এই বাসস্ট্যান্ড ভেংগে মহাখালী, গাবতলী, সায়দাবাদ নিয়ে যায়। আগে এই গুলিস্তানে রেল স্টেশনও ছিলো। স্টেশন কমলাপুরে সরিয়ে নেয়ার পরও গুলিস্তানে রেলের টিকেট পাওয়া যেতো। তারপরও এখানে মানুষের ব্যস্ততা কমেনি। ঢাকা শহরের এমন কোন জায়গা নেই যেখান থেকে গুলিস্তানে বাসে করে আসা যায় না এবং খুব কম লোক আছে যারা জীবনে একবার গুলিস্তানে আসেনি। আমার জীবনের প্রয়োজনে এই গুলিস্তানের ওপর দিয়ে প্রতিদিনই যাওয়া আসা করতে হয়। যাওয়া আসার পথে সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্স, ঢাকা ট্রেড সেন্টার এর সামনের রাস্তাটি পড়ে। এই রাস্তায় অবস্থানরত গাড়ি থেকে উচ্চস্বরে এমন সব কথা শোনা যায় যে মাঝে মাঝে মন মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। এই রাস্তার সামনে ৪-৫ টা গাড়িতে করে যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধির ওষুধ বিক্রি করে। এইসব ওষুধ বিক্রি করার সময় এমন সব কথা বলে যা লেখার যোগ্য নয়। এরা সকালে প্রথমে গানের সাথে সাথে যাদু দেখিয়ে লোক জমা করে। এরপর শুরু করে তাদের ওষুধ বিক্রি। ওষুধ বিক্রির সময় এমন সব কথা বলে মনে হয় এটা যেনো বাংলাদেশের অনেক বড় সামাজিক সমস্যা, তারা এই সমস্যার একমাত্র ত্রাতা আর যেনো কেউ নেই। আর এইসব ওষুধের কার্যকারিতা যে কি তা আমরা সবাই জানি। পুলিশের সামনেই ঘটছেই এই সব কাজ অথচ তারা দেখেও না দেখার ভান করে আছে। এই রাস্তা দিয়ে পরিবার নিয়ে যাওয়ার সময় বধির হওয়ার ভান করতে হয়। এই রকম ওষুধ বিক্রি ঢাকা শহরের অন্যান্য সব জায়গায় হয় কিন্তু এইগুলা দেখার জন্য যেনো কেউ নেই। এদের থেকে মুক্তি পেয়ে বাসে উঠার পরও মুক্তি নেই। বাসের জানালা দিয়ে ছুটে আসে নানা ধরনের অমুক তমুক হারবাল চিকিৎসার চিরকুট। যাবো কোথায়? আমার তো তখন মনে হয় এরা যেনো কোন দিন বাসায় চলে আসে।

কিছুদিন আগে ঢাকার বাইরে থেকে আমার পিসাতো ভাই আসে আমাদের বাসায়। আমাদের বাসার কাছেই বলধা গার্ডেন। সেখানে যেতে চায় ঘুরতে। আমি প্রথমে তাকে নানা ভাবে ব্যাপারটা এড়িয়ে যেতে থাকি। কারণ বলধা গার্ডেনে আমার প্রথম ঘুরতে যাবার অভিজ্ঞতা খুব একটা ভালো না। না জেনে, না বুঝে বলধা গার্ডেনে ঘুরতে যাই আমার কাকুর সাথে। সেখানে ২ মিনিট ঘোরার পর আমরা বের হয়ে আসি এবং পরে দুইজন এমন আচরণ করতে থাকি যে গত ২ মিনিটে আমরা কিছু দেখিনি এবং এই ২ মিনিটের কোন হিসাব আমাদের কাছে নেই। বলধা গার্ডেন দুই অংশে বিভক্ত। এক অংশে মানুষ প্রবেশ করতে দেয় এবং অন্যটিতে নয়। যে অংশটিতে প্রবেশ করতে দেয় সেই অংশটুকু অনেক ছোট। এতোই ছোট যে মাত্র ৭-৮ মিনিটের মধ্যেই পুরো গার্ডেনটি ঘুরে আসা যায়। এই ছোট জায়গায় নানা প্রজাতির অনেক গাছ আছে, আছে অনেক দুর্লভ গাছও। কিছুদিন আগে চ্যানেল আইয়ে এখানকার এক গাছ সম্পর্কে একটা রিপোর্ট দেখিয়েছিল। সেই গাছটি ছিল খুবই দুর্লভ। গাছটি প্রায় ৭০ বছর পর ফুল ধরেছিলো এবং গাছটির বিশেষত্ব ছিলো গাছটির এই ৭০ বছর হওয়ার পর একবারই ফুল ধরে এবং গাছটি মরে যায়। এখানে ছোট ১টা পুকুর আছে। আছে ১টা সূর্যঘড়ি। এই সব নানা কারণে বলধা গার্ডেনের অনেক নাম। আমার ভাইটির অনেক জোরাজুরিতে আমি শেষ পর্যন্ত যেতে বাধ্য হই। সেখানে কথিত যুগলেরা এমন সব সব কাজকর্ম করে যা শুধু মাথাকে নিচু রাখতেই বাধ্য করে। তাকিয়ে কথা বলার সাহসটুকু দেয় না। আমি বোরখা পরা নারীদের খুব সম্মান করি এবং পছন্দ করি। বোরখা পরা নারীদের প্রতি সম্মানবোধ মন থেকে আপনা আপনি চলে আসে। অথচ সেই বোরখার এই অপব্যবহার দেখে খুব খারাপ লাগে। খুব কষ্ট হয়। গাছের ফাঁকে যেইসব জায়গায় অবোধ প্রাণীকুল ছাড়া আর কোন কিছু কল্পনা করতে পারবেন না সেই সব জায়গায় কথিত সেই যুগলদের অপকর্ম আপনার শুদ্ধ চোখকে নষ্ট করে দিবে। সেই দিন গার্ডেনে এক বাবাকে দেখি তার ছোট বাচ্চাকে নিয়ে আসছে সাইকেল চালানো শেখাতে। একবার ভাবুন তো এই সব দৃশ্য দেখার পর সেই ছোট বাচ্চাটির মানসিক চিন্তা ভাবনায় কি ধরনের প্রভাব পরতে পারে। আমার ভাইটি শেষ পর্যন্ত বিব্রত হয়ে গার্ডেন থেকে বের হয়ে আসে। আজকাল রাস্তাঘাটে রিকশায় এই সব কাজ হরহামেশাই ঘটছে।

সেইদিন পহেলা বৈশাখের বাবু মামনির সাথে বের হতে গিয়ে এমনি একটি লজ্জায় পড়ে ছিলাম। এরা কি বাইরে রাস্তাঘাটে এইসব অসামাজিক কার্যকলাপ করে কি তাদের প্রেমের অসীম সাহসিকতা দেখাতে চায়? আমার মনে হয় এইসব মানুষের মাঝে ন্যূনতম কোন ব্যক্তিত্ব নেই,নেই আত্মসম্মান। থাকলে খোলা ১টি জায়গায় যৌবনের জ্বালা মেটানোর জন্য এই রকম অসামাজিক কার্যকলাপ করতে পারে না। এরা ভালোবাসার পবিত্রতাকে নষ্ট করে এবং বাবা মায়ের বিশ্বাসকে অমর্যাদা করে। পার্কে এইসব অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধ করার জন্য আমাদের অভিভাবকদের আর একটু সচেতন হওয়া উচিত। আর নয়তো এলাকাবাসী পুলিশ দিয়ে দিনে একবার যেকোন সময় এই সব পার্কে টহল দেয়া হোক আর যাদের ঘনিষ্ঠভাবে দেখা যাবে তাদের পশ্চাৎদেশে ছেলে মেয়ে না বিবেচনা করে কমপক্ষে ৩টা বাড়ি দিয়ে বাসায় জানানো অথবা থানায় ১দিন আটক রাখা।